বড় বিচিত্র এই দেশের কিছু মানুষ! বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ এখন একুশ শতকের ভয়াবহ মহামারী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের দেশর নানা জায়গায় জনজীবন প্রায় থমকে যাওয়ার উপক্রম। সরকার থেকে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন সতর্কতা। এমন সময়ে কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে, কুসংস্কারে ইন্ধন দিয়ে চলেছে সমানে। করোনা নিয়ে অপপ্রচার অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। আতঙ্ক নয়, বরং বাস্তব সত্যটিকে সামনে রেখে তার মোকাবিলায় সতর্ক থাকাটাই বেশি জরুরি। অথচ দেখা যাচ্ছে অনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক এমন কিছু প্রচার হচ্ছে যা মানুষকে বিভ্রান্ত করার পক্ষে যথেষ্ট। দুঃখজনক যে, এমন বিপর্যয়ের সময়েও ওই অপপ্রচারে মদত দিচ্ছেন কিছু শিক্ষিত রাজনীতি সচেতন মানুষ। এই দেশে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা যুক্তিবোধ থেকে ভাবাবেগকে প্রশ্রয় দেন বেশি। অনেকেই কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আছে প্রকৃত শিক্ষার অভাবও। তাই মাটির গণেশকে দুধ খাওয়ানোর ঘটনাও এদেশে ঘটে। এমন আরও দৃষ্টান্ত আছে। তাদের এই অন্ধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা কখনও হয়ে ওঠেন অতি সক্রিয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম। বিশ্বব্যাপী মহামারীর রূপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস। বিশ্বের প্রায় ১৬০ টি দেশে তা ছড়িয়েছে। মৃত্যু মিছিল চলছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, আইইডিসিআর করোনা প্রতিরোধে নিরলস কাজ করে চলছেন। এই পরিস্থিতিতে একশ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই। কালোবাজারির মাধ্যমে ফুলে-ফেঁপে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি চেষ্টা চলছে মানুষকে বিভ্রান্ত করার। এমনই একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে হরহামেশাই। করোনা প্রতিরোধের জন্য মানুষকে সচেতন করতে সরকারি তৎপরতা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই করোনা প্রতিরোধের “দাওয়াই” হিসেবে “তুলশী পাতা” আবার “থানকুনি পাতা” মাইকিং করে করোনা রোগের ঔষধ বিক্রীর ঘটনা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মতো ঘটনা। উদ্বেগজনকও। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণার এমন চেষ্টা আটকাতে পুলিশ প্রশাসন যথাসময়ে তৎপর না হলে এবং ঐ দুই যুবকের জেল না হলে বিপদ বাড়ত। তবে ঘটনাটিকে একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। একবিংশ শতকের আধুনিক বাংলাদেশে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা এখনও অযৌক্তিক অবৈজ্ঞানিক কাজকর্মে বিশ্বাস করেন। তাই ঘটনাটি নিঃসন্দেহে প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ। এখন যা পরিস্থিতি তাতে বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু, তর্কে বহু দূর… কথাটির প্রয়োগ এভাবে ঘটতে থাকলে ফল হতে পারে মারাত্মক। করোনা প্রতিরোধের এমন “দাওয়াই”য়ে যে হিতে বিপরীত হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? তাই প্রতিটি মানুষকে এ ধরনের অপপ্রচার বা গুজব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রশাসন সজাগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অসৎ সুযোগ সন্ধানীরা সরকারকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলার যে চেষ্টা করবেনা তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ তাদের নৈতিকতার বালাই নেই। এসব গুজব বা অপপ্রচারের পেছনে আদৌ কোনও রাজনীতি বা কোনও ষড়যন্ত্র কাজ করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তারজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়াতে হবে কড়া নজরদারি।
বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিদ্যায় অনেক এগিয়ে। দুর্ভাগ্যজনক যে এই দেশেই কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা অপপ্রচার অপব্যাখা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় অবিচল। তবে বিপদের দিনে পরিস্থিতি যাতে জটিল না হয় সেদিকে প্রশাসনকে নজর রাখতেই হবে। অতীতে প্লেগ, কলেরা, স্প্যানিশ ফ্লু’র কারণে মহামারীতে বহু মানুষের মৃত্যুর কথা আমাদের জানা, কিন্তু জানা ছিল না করোনা ভাইরাসের বিষয় যা এখন মহামারী রূপে। আতঙ্কে গোটা দুনিয়া। বিশ্বের প্রেক্ষিতে টানা ৪৬ দিন আমাদের বাংলাদেশ করোনা মুক্ত ছিল। কিন্তু আত্মতুষ্টির কোনও অবকাশ নেই। তবে করোনা মোকাবিলায় অত্যন্ত সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মগুলি মেনে চলছে। গুজব রটিয়ে সরকারের এই সদর্থক উদ্যোগে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে তা হতে দেওয়া যায় না। সচেতন থাকতে হবে প্রতিটি দেশবাসীকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা , মা-মাটি-মানুষের সরকার এই বিপর্যয়ের সময়ে মানুষের পাশে আছে। তাই আতঙ্ক নয়, করোনা প্রতিরোধই হোক লক্ষ্য।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।