শমিত জামান: একাত্তরে যুদ্ধকালীন সময়ে সেক্টর ২ এর ফিল্ড হসপিটালের অন্যতম উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, (২৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ – ১১ এপ্রিল ২০২৩) গতকাল রাত ১০:৪০ মিনিটে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।(ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন……)
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী গতকাল রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। মামুন মোস্তাফী বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’
দীর্ঘদিন কিডনিরোগসহ বিবিধ স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইড পার্কে যে কয়েকজন বাঙালি পাসপোর্ট ছিঁড়ে আগুন ধরে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন তাদের একজন ডা. চৌধুরী। তারপর বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি ‘একাত্তরের দিনগুলিতে লিখেছেন, – ‘চেনা হয়ে উঠেছে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. এমএ মোবিন। এরা দুজনে ইংল্যান্ডে এফআরসিএস পড়ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বিলেতে চার বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন এফআরসিএস পরীক্ষা মাত্র এক সপ্তাহ পরে, তখনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ছেলে দুটি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিলো, পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করলো, ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট যোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলো।
উদ্দেশ্য ওখান থেকে কলকাতা হয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া। প্লেনটা ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইন্স-এর। দামাস্কাসে পাঁচ ঘণ্টা প্লেন লেট, সবযাত্রী নেমেছে। ওরা দুইজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। এয়ারপোর্টে এক পাকিস্তানি কর্নেল উপস্থিত ছিল ওই দুইজন ‘পলাতক পাকিস্তানি নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য। প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না, কারণ প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন। দামাস্কাসে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তা ওদের দুইজনকে জানিয়েছিল- ওদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। এমনিভাবে ওরা বিপদের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষাশেষি সেক্টর টু রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হয়েছে।’
(একাত্তরের দিনগুলি পৃষ্ঠা ১৬১-১৬২)
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং একইসাথে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ১৯৮২ সালে ওষুধ নীতি প্রণয়নের পেছনে তাঁর অবদান আমরা স্মরণ রাখবো। জাতীয় দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সংকটে তিনি সর্বদাই নির্ভীক থেকে সত্য বলে গেছেন, প্রতিবাদী হয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য যে গণরাজনীতির কেন্দ্রে থাকা উচিত– সেই প্রশ্নটা তিনি শেখালেন।জীবনের সায়াহ্নকালে এসে, বাংলাদেশসহ বিশ্বই যখন কভিড-১৯ অতিমারির ভয়াল থাবার নিচে, সে সময় তিনি আবার দাঁড়ালেন করোনাভাইরাস পরীক্ষা, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের গবেষণা কাজে। তাঁর এই দায়িত্বশীল উত্থান বহু মানুষকে আশা দিয়েছে, অভয় দিয়েছে। যেমন দেশের কিডনি রোগীদের এক বড় ভরসাস্থল হয়ে আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ডায়ালাইসিস সেন্টার। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণবিশ্ববিদ্যালয় অনেক নিপীড়িত, অভাবী ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার ভরসা হয়ে আছে। ডা. জাফরুল্লাহ বৈশ্বিক স্তরে স্বাস্থ্যসেবার ধারণায় পরিবর্তন এনেছেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা তিনিই প্রথম সামনে আনেন। ডাক্তারিশাস্ত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও সাধারণের পক্ষে প্যারামেডিক হওয়ার পথ দেখিয়ে তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন।
তাঁর এই দুটি ধারণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘসহ অনেক উন্নত ও উন্নতশীল দেশ নিয়েছে। এই দিক থেকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান শুধু সর্বজনীনই নয়, বিশ্বজনীনও বটে। গ্রামীণ ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মা ও শিশু মৃত্যু ঠেকানো, দেশজ চিকিৎসাপদ্ধতিকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মধ্যে ধারণ করা সামান্য কোনো কাজ নয়।কী সততায়, কী নির্লোভ জীবনযাপনে, কী চরিত্রের সাহসিকতায় এবং কী দুস্থদের প্রতি পিতাসুলভ ভালোবাসায়; জাফরুল্লাহ চৌধুরী এমন এক মনুষ্যপ্রতিমা, যা আজকের যুগে বিরল। এই অর্থেই তিনি ক্ষণজন্মা, এই অর্থেই তাঁর উদ্দেশে বলা যায়, ‘এই পৃথিবী একবার পায় তারে, পায়নাকো আর’। গত ১৭ মার্চ সমকাল ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর দেশের এই কীর্তিমান সন্তানকে ‘দেশের যোদ্ধা, বন্ধু সবার’ বলে অভিহিত করে সম্মাননা জানায়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। তাঁর বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন। পিতামাতার ১০ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান: বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস পড়াকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এর পরে ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা: জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। পরম করুনাময়ের কাছে তাঁর চিরশান্তি প্রার্থনা করছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment