চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত করা হয় প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। বিশ্ববাসী এই ভাইরাসের নাম কয়েক মাস আগে শুনলেও ৫৬ বছর আগে মানব শরীরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত করেছিলেন স্কটল্যান্ডের এক নারী।
১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে প্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত করেন জুন আলমেইডা।
১৯৩০ সালে হার্টে জন্মগ্রহণ করেন জুন আলমেইডা। তিনি সামান্য পড়াশোনা করেই স্কুল ছাড়েন। পরে গ্লাসগো রয়্যাল ইনফার্মারিতে হিস্টো-প্যাথলজিতে গবেষণাগার কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
চিকিৎসাবিষয়ক লেখক জর্জ উইন্টারের তথ্যানুযায়ী, আলমেইডা কানাডার টরন্টোতে অন্টারিও ক্যানসার ইনস্টিটিউটে কাজ করার সময় বিশেষ দক্ষতা দেখান। একটি ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপে তিনি এমন পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন, যা অ্যান্টিবডি সংহত করার মাধ্যমে ভাইরাসগুলো আরও পরিষ্কারভাবে দেখা সম্ভব করেছিল।
১৯৬৪ সালে তাকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়। সেখানে তিনি ডেভিড টাইরেলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন, যিনি উল্টশ্যায়ারের সালসবিউরিতে সাধারণ ঠা-া নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
উইন্টার বলেন, টাইরেল স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে অনুনাসিক ধোয়ার ওপর গবেষণা করছিলেন। তারা বেশ কয়েকটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস বৃদ্ধি করতে পারছিলেন, কিন্তু সব নয়। তার মধ্যে একটি বিশেষভাবে নজরে আসে। সেটির নাম দেওয়া হয়েছিল বি-৮১৪। জুন আলমেইডাকে সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে তিনি বলেছিলেন, এগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো দেখতে হলেও পুরোপুরি তা নয়। জুন আলমেইডার শনাক্ত করা সেই ভাইরাসটি পরে বিশ্বে করোনা ভাইরাস হিসেবে পরিচিত লাভ করে। বি-৮১৪ আবিষ্কারের বিষয়টি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। টাইরেল ও আলমেইডার পাশাপাশি
সেন্ট থমাসের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক টনি ওয়াটারসন ওই ভাইরাসের নাম দেন ‘করোনা ভাইরাস’। কারণ এর চারপাশ অনেকটা মুকুটের মতো ছিল। ২০০৭ সালে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জুন আলমেইডা।