১৯৩৯ সাল, মানব সভ্যতাকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে আরো একবার শুরু হল যু’দ্ধ, ২য় বিশ্বযু’দ্ধ। ১৯৪১ সালে ততকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আ’ক্রমণ করে শক্তিশালি জার্মানি। রাশিয়ানদের সমস্ত প্রতিরো’ধ ছি’ন্ন ভিন্ন করে জার্মানরা এগিয়ে আসে স্টালিনগ্রাদ পর্যন্ত, রাজধানী মস্কো আর মাত্র দশ মাইল দূরে।
দিশেহারা হয়ে পরে সোভিয়েতরা। ঠিক এ সময় রাশিয়ান এয়ার ফো’র্সে যোগদান করেন ২১ বছর বয়সের এক সুন্দরি তরুণী। যোগদানের তৃতীয় দিন তাঁর উপর দায়িত্ব বর্তায় স্টালিনগ্রাদের আকাশসীমা” রক্ষা করার। আর সেই দিনই তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখান প্রথম নারী পাইলট হিসেবে, যিনি এক ফ্লাইটে তিনটি শ’ত্রু বিমান ধ্বং’স করেন, পরের ফ্লাইটে তিনি আরো ৪ টি শ’ত্রু বিমান ভু’পতিত করেন।
আর বিশেষ কারনে তাঁর প্লেনের ফিউসিলাজের উপর আঁকা থাকত সাদা গোলাপ। আমি Lydia Litvyak নামের অসম্ভব রূপবতী, সাহসী রাশিয়ান মেয়েটির কথা বলছি। যে সোভিয়েত বিমান বাহিনীতে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় তার Yak-1 বিমান নিয়ে প্রতিপ’ক্ষ শিবিরে এক মূর্তিমান আ’তংক হয়ে দাঁড়ান। সে সময় সোভিয়েত বিমান বাহিনীতে নারী এবং পুরুষদের জন্য পৃথক পৃথক স্কোয়াড্রনের নিয়ম ছিল, কিন্তু লিডিয়া নামের মেয়েটিকে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ একমাত্র নারী হিসেবে পুরুষদের স্কোয়াড্রনে পাইলট অফিসার হিসেবে যোগদানের অনুমতি দেয়।
স্টালিনগ্রাদের আকাশ যখন জার্মান জ’ঙ্গী বিমানে ছেয়ে যেত তখন লিডিয়া নামের স্বর্ণকেশী মেয়েটি Alexei Frolovich Solomatin নামের এক পাইলটের নেতৃত্বে (তার উইংম্যান হিসেবে) ঝাঁ’পিয়ে পড়ত শ’ত্রু বিমান বহরের উপর, শ’ত্রুর পালটা আ’ক্রমণে ক্ষ’তবি’ক্ষত, আগুনে ঝ’লসে যাওয়া বিমানে বসেও একের পর এক শ’ত্রু বিমান ধ্বং’স করতে থাকত মেয়েটি।
যতক্ষণ তার বিমানে নুন্যতম গো’লাবা’রূদ টুকুও অবশিষ্ট থাকত, তারপর ক্ষ’তবি’ক্ষত র’ক্তাত্ব শরীর আর ধ্বং’সপ্রায় বিমান নিয়ে মেয়েটি হাসি মুখে মাটিতে নেমে এসে বলত আজ আরো কিছু রাশিয়ানের জীবন রক্ষা করলা তার কমান্ডিং অফিসার সলোমাটিন প্রায়ই লিডিয়াকে বকাবকি করতেন, এভাবে জার্মানদের সাথে দস্যিপনা করতে থাকলে, মা হওয়া দূরে থাক, বিয়েশাদী করার আগেই প্রাণটা অ’কালে হারাবে।
লিডিয়া হেসে জাবাব দিত “ক্যাপ্টেন সলোমাটিন আপনার ৩৯ টা বিমান ধ্বং’সের রেকর্ড না ভাঙ্গা পর্যন্ত আমি মর’ছি না, আর আপনার মত আকাশ বীর থাকতে আমায় কেউ মা’রতেও পারবে না।
২১শে মে, ১৯৪৩ সালে এক মিশনে লিডিয়াদের স্কোয়াড্রনের উপর অ’তর্কিত হা’মলা চালায় এক বিশাল জার্মান বিমান বহর। সহযো’দ্ধাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান ক্যাপ্টেন Alexei Frolovich Solomatin, সেদিন মিশন থেকে ফেরার পর লিডিয়া কারো সাথে কথা বলেনি।
নিজের কামরায় নিঃশ্বব্দে বসে থেকে চিঠি লিখেছিল তার মাকে, মা, কেন আমি আগে বুঝতে পারিনি সলোমাটিন নামের এই মানুষটাকে আমি এতটা ভালবাসি। স্বর্ণকেশী লিডিয়ার নীল চোখ বেয়ে সেদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমেছিল কিনা তার খোঁজ কেউ রাখেনি। ২১ শে মে পর্যন্ত লিডিয়ার হাতে ধ্বং’স হওয়া বিমানের সংখ্যা ছিল ৩০ টি, যার রেকর্ড এখনো অক্ষুন্য।