ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে বলা বা তার ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া দুনিয়ায় নূতন কিছু নয়, নানা দেশে মূলতঃ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যেই ইতিহাস বিকৃতির আশ্রয় নেওয়া হয় আর এটা শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হয় যখন আসল ঘটনাটা মানুষের বিস্মৃতির অতলে চলে যায় বা চর্চায় থাকেনা। আমাদের ইতিহাসই বলে দ্যায় যে আমরা কারা, এজন্য ইতিহাস জানা এবং তার সঠিক তথ্যপ্রমাণগুলো তুলে ধরা সবসময়ই জরুরী।
বাঙলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘোঁলাটে অধ্যায় হয়ে আছে সম্ভবত বাকশাল (বাঙলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ)। শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা আর ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করা জরুরী ছিলো, তা না হলে বাঙলায় মুজিববিরোধী কারো পক্ষেই ভোটের রাজনীতিতে টেকা সম্ভব ছিলো না। সেই লক্ষ্যে তাঁর সাথে সম্পর্কিত সবকিছুকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে, তাঁর পরিবার, ৭৪এর দুর্ভিক্ষ, স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা… অবিশ্বাস্য! তবে সবচেয়ে সফল ভাবে আর সবচেয়ে বেশী প্রচারণার শিকার হয়েছে “বাকশাল।”
বর্তমান বাঙলাদেশে সবাই এক কথায় জানে যে বাকশাল খারাপ কিন্তু ক্যানো? ব্যাখ্যা করতে বললে চরম বাকশাল বিরোধীটিও থতমত খেয়ে যাবে, কারণ হয় সে কিছুই জানে না অথবা উড়ো উড়ো ভাবে শুধু সেটুকুই জানে যেটাকে ১ ছটাক সত্যের সাথে ৩ ছটাক গুজব মিশিয়ে তাকে শেখানো হয়েছে এবং পোয়াখানেকের বেশী ইতিহাস জ্ঞান এঁদের কারোরই নাই।
সত্য না জানাটা সবসময় দূষণীয় নয় কিন্তু এটা আমাদের জাতির দূর্ভাগ্য যে মানুষ ঘটনার পেছনের সত্যগুলো জানার এমনকি কোন চেষ্টা পর্যন্ত করেনা। আর যে জানে না সে সহজেই বিভ্রান্ত হয়।
যাহোক এই প্রবন্ধে খুবই সংক্ষেপে বাকশাল সম্পর্কিত কয়েকটা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো যা যেকোন বিদেশী, নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাইযোগ্য-
১৯৭৩এ স্বাধীনতার পরের প্রথম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩০০’র মধ্যে ২৯৩টি আসন পেয়ে জিতেছিলো, অর্থাৎ পূর্ণ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গঠিত সরকার। গণতান্ত্রিক ভাবেই আওয়ামীলীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে পারতো কিন্তু বদলে বাকশাল গঠন করা হলো।
বাকশাল কোন একক দলের শাসন ছিলোনা, ন্যাপ-মোজাফফর, বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় লীগ এবং বাঙলাদেশ আওয়ামীলীগ এই ৪টি দল একীভূত হয়ে সৃষ্টি করেছিলো বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক আওয়ামিলীগ বা বাকশাল।
বাকশাল তৈরীর উদ্যেশ্য ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা অবশ্যই ছিলো না, য্যামনটা আগেই বলেছি, সংসদে আওয়ামীলীগের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিলো, সবগুলো বিরোধী দল মিলেও ১০% আসন জিততে পারেনি এবং ভুললে চলবে না যে শেখ মুজিবের অধীনে ১৯৭৩এর নির্বাচনের সচ্ছতা নিয়ে আজঅবধি এমন কি তার চরম বিরোধীরাও কোনদিন কোন প্রশ্ন উঠায়নি। সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রক্ষমতা আওয়ামীলীগের হাত থেকে সরিয়ে বাকশালের মাধ্যমে বাকি ৩টি দলের অংশীদারত্বের মাধ্যমে ক্ষমতাবন্টনের আপাতদৃষ্টিতে কোন প্রয়োজন ছিলোনা। তাহলে ক্যানো গড়া হয়েছিলো বাকশাল, কি কারণ ছিলো যে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব নিজ দলের একক শাসনের বদলে, সমমনা বাকি দলগুলোর সাথে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে একটা জাতীয় সরকার গোছের ক্ষমতা বন্টনের উপায় করে দিয়েছিলেন?
উত্তরটা পাওয়া যাবে ৭৪এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে। বিভিন্ন সময়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়াটিক সোসাইটি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার করা পৃথক ও নিরপেক্ষ গবেষণায় দ্যাখা গ্যাছে যে সেযুগের আঞ্চলিক হিসাবে ১৯৭৪এ বাঙলাদেশ ফসল উৎপাদনের প্রচলিত মাত্রা পার করেছিলো। অর্থাৎ খাদ্যের অভাবে ৭৪এর দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো, এমন ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তাহলে কিসের কারণে ৯ মাসব্যাপী ভূখমারীতে লক্ষ লোকের জীবন চলে গিয়েছিলো?
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ৭৪এর এপ্রিল/জুলাই মাসের প্রবল বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র নদীতে সৃষ্ট পরপর কয়েকটি বন্যাই এই দুর্ভিক্ষের মূল কারণ, কিন্তু গবেষণায় দ্যাখা যায় আদতে ৭৪এর মার্চ থেকেই দুর্ভিক্ষের আলামত শুরু হয়ে গিয়েছিলো, অর্থাৎ বর্ষার প্রথম ধারাটি বইবার বেশ আগে থেকেই!
রহস্যময়, নয় কি? কারণ আগেই বলেছি, শস্যের উৎপাদন ও মওজুদতো পর্যাপ্তই ছিলো! তাহলে খাদ্যাভাব কিসের? নেপথ্য কারণ ছিলো বহুবিধ, বন্যা অবশ্যই ব্যপকহারে ফসল নষ্ট করে দুর্ভিক্ষের মাত্রাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিলো, আর তাকে তীব্রতর করেছিলো হঠাৎ করে আম্রিকী সরকারের ২২লক্ষ টন খাদ্যবরাদ্ধ বাতিল করে জাহাজ ভরা ত্রাণ ফেরত নিয়ে যাওয়া এবং ঠিক একই মহেন্দ্রক্ষণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেরও সহায়তা করতে অপারগতা প্রকাশ করা। অবশ্যই ৭৪এ দুর্ভিক্ষের পেছনে আন্তর্জাতিক মহলের একটা প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিলো। ঠান্ডাযুদ্ধের সেই ঘোটপাকানো বিশ্বরাজনীতির যুগে শেখ মুজিব পক্ষপাতহীন পন্থা অবলম্বন করে আম্রিকা/রুশ দুই মোড়লেরই বিরাগভাজনের শিকার হয়েছিলেন।
যাহোক বন্যা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির সবটুকু আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলোনা কিন্তু য্যামনটা আগেই বলেছি আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত ফসল সে বছর যথেষ্ট ছিলো, তথাপি মার্চের শুরুতেই দেশের আনাচেকানাচে বিশেষত উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষের মেঘাড়ম্বর শোনা যাচ্ছিলো। যার পিছনে কারণ ছিলো মাত্র দুইটি, প্রথমত কালোবাজারির মাধ্যমে খাদ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করা এবং দ্বিতীয়ত আমাদের শস্য চোরাকারবারির মাধ্যমে ভারত ও মায়ান্মারে পাঠিয়ে বাঙলাদেশকে নিজস্ব শস্যমওজুদ থেকে বঞ্চিত করা।
কালোবাজারি আর চোরাকারবারিদের জন্য সে ছিলো এক বিরল সময়, সদ্যস্বাধীন দেশে চোখের পলকে কোটিপতি হয়ে উঠবার সুবর্ণ সুযোগ। সরকারের ব্যপক প্রচেষ্টা, এমনকি ধড়পাকড়ের মাধ্যমেও তা থামানো যায়নি।
যাহোক ডিসেম্বর নাগাদ নূতন শস্য বাজারে আসতেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়, মুজিব সরকার অভাবনীয় দক্ষতার সাথে অতিদ্রুত সেই শস্য সারাদেশে সঠিকভাবে বন্টনের ব্যবস্থা করে ও বহু টানাপোড়েনের পর বিদেশী সহায়তা পেতে সক্ষম হয় ফলে দুর্ভিক্ষের অন্ত হয়।
কিন্তু নব্যস্বাধীন দেশের পক্ষে এ ছিলো এক কঠোর শিক্ষা, যার ফলে শেখ মুজিবের বহু দশকব্যাপী আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও ভীষমভাবে হোচট খেয়েছিলো। একটা আপাত স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ ক্ষণিকের মাঝে কতোটা সহজে প্রবল বিপর্যয়ে পরিনত করতে পারে তা য্যানো হাতে কলমে অনুশীলন হয়ে গ্যালো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যেকোন পন্থায়েই হোক এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে চেয়েছিলেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে কার্যকর ছিলোনা তা দুর্ভিক্ষের ৯ মাসেই পরিষ্কার বোঝা গিয়েছিল। আরক্ষা বাহিনীর (Police) পাশাপাশি দরকার ছিলো সামাজিক প্রতিরোধের, জনতার সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষমতা জনতার হাতেই তুলে দেওয়ার।
সেজন্যই ১৯৭৫ সালের ২৪এ ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিলো বাকশাল। আজও দেশের রাজনৈতিক আবহ সংগীন হয়ে উঠলে বোদ্ধামহল বারবার জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, অথচ ৪ দশক পূর্বে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলায় বাকশালের গঠনকে নিন্দনীয় এবং বিতর্কিত দৃষ্টিতে দ্যাখা হয়, সেলুকাস!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment