Newly recruited Houthi fighters chant slogans as they ride a military vehicle during a gathering in the capital Sanaa to mobilize more fighters to battlefronts to fight pro-government forces in several Yemeni cities, on January 3, 2017. (Photo by Mohammed HUWAIS / AFP)
সিরাজুর রহমানঃ গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু টার্গেটে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের শিয়াপন্থী হুথী বিদ্রোহী মিলিশিয়া গোষ্ঠী। মুলত হুথী বিদ্রোহীরা ইরানী প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি বা সরাসরি সরবরাহকৃত ‘দুল ফক্কর’ নামক ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং সামাদ-৩ কমব্যাট ড্রোন দিয়ে হামলা রিয়াদে চালায়। তবে সৌদি ডিফেন্স ফোর্সের এডভান্স এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অত্যন্ত সফলতার সাথে সবগুলো ড্রোন এবং ব্যালেস্টিক মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়। যা হোক এই হামলায় আপাতত কোন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয় নি বলে জানিয়েছে রিয়াদ কর্তৃপক্ষ।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং সৌদি সরকার তার অনুগত ইয়েমেনী হাদি সরকারকে সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে সরাসরি এই যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। আর এই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজারের অধিক নিরীহ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যার অধিকাংশ কিনা নারী, শিশু এবং প্রবীন। তবে ২০১৬ সাল থেকে হুথী বিদ্রোহীরা সৌদি জোটের সামরিক আগ্রাসন এবং বিমান হামলার জবাবে এক রকম নিয়মিতভাবেই সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থান এবং স্থাপনায় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। তবে এসব লো একিউরেসির মিসাইল হামলার সার্বিক সফলতার হার ২০% এর নিচে হলেও ২০১৯ সালে সৌদি আরামকোর ওয়েল ফ্যাসালিটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হালমাটি ছিল ইয়েমেনের হুথী বিদ্রোহীদের সবচেয়ে জটিল এবং ধ্বংসাত্বক হামলা।
ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি জোটের বিমান হামলাকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আগ্রাসী এবং মানবতা বিরোধী বলে ব্যাপক প্রচার করা হলেও ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮% শিয়া হুথী বিদ্রোহীরা দেশটির সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠিকে বিতারিত এবং নির্মুল করে হলেও গোটা দেশ দখলের যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠেছে তা আসলে অনেকটাই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। আবার এদের মূল সহায়তাকারী এবং অস্ত্র বা প্রযুক্তি সরবরাহকারী কিন্তু মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ইরান এবং বিশ্ব অন্যতম সুপার পাওয়ার রাশিয়া ছাড়া আর যে কেউ নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইয়েমেন গৃহযুদ্ধের শুরু থেকেই সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ঠতা বা সামরিক আগ্রাসনের বিষয়টি বার বার উঠে আসলেও হুথী বিদ্রোহীদের গণহত্যা এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহকারী বা উস্কানীদাতাদের গোপন অপকর্ম বৈশ্বিক সংবাদে সেভাবে প্রচার করা হচ্ছে না। অথচ ইয়েমেনের বৈধ হাদি সরকারকে যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই বা গুরুতর কোন অভিযোগ না এনেই নিজেদের ইচ্ছেমতো হুথী বিদ্রোহীরা অন্য কোন দেশের উস্কানী ও মদদে উতখাৎ এবং সারা দেশ দখলের ভয়ঙ্কর এক দীর্ঘ মেয়াদী গৃহযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, শিয়াপন্থী হুথী বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠী ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫% থেকে ২৮% হওয়া সত্ত্বেও আগে থেকেই দেশের প্রায় ৩৮% অঞ্চল বা এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বা দখলে ছিল। আর এখন অস্ত্রের বলে যুদ্ধ করে হলেও দেশটির সম্পূর্ণ অংশ নিজেদের দখলে নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আবার এই যুদ্ধে সেনা সদস্যের অভাবে তারা তাদের শিশুদের যুদ্ধে নিয়োগ দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে না।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে সারা বিশ্বে শিশু যোদ্ধা নিয়োগে সবচেয়ে উপরে রয়েছে মিয়ানমারের নাম। আসলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার শিশুকে জোড় করেই সেনা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে এবং ইয়েমেনের হুথী বিদ্রোহীরা প্রায় ৩২ হাজার বা তার বেশি সংখ্যক শিশুকে মগজ ধোলাই করে কিংবা জোড় করে হলেও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং শিশুকে তার প্রাপ্ত শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অল্প কিছু দিনের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিয়ে সরাসরি শিশুসেনা হিসেবে রনাঙ্গণে প্রেরণ করে যাচ্ছে। আর এখন কিনা সম্মুখ রনাঙ্গণে হাজার হাজার হুথী শিশুসেনা যুদ্ধ করছে। যাদের অনেকেরই বয়স ৯ থেকে ১৩ বছরের নিচে এবং তারা আদৌ জানে কিনা সন্দেহ তাদের কেন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে।
অথচ এসব নিয়ে দেখার বা কথা বলার যেন কেউ নেই। যত দোষ সব যেন সৌদি আরব ও তার জোটের শরিকদের একার। মিডিয়া খুললেই দেখবেন যে, সৌদি আরব বিমান হামলা চালিয়ে ইয়েমেন ধ্বংস করে দিল। সৌদি সরকারের অবরোধের জন্য হাজার হাজার মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এসব মিথ্যা অপপ্রচার ও প্রপাগাণ্ডা কার্যত হুথী বিদ্রোহীদের অন্যায় যুদ্ধ ও অপকর্মকে বৈধতা দেয়ার ভয়ঙ্কর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে এটা ঠিক যে, সৌদি জোটের বিমান হামলায় ২০১৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত হাজারো নিরীহ প্রাণ ঝরে গেছে ইয়েমেনে। সৌদি এই যুদ্ধ পরিচালনায় নির্বিচারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে। যা কিনা সরাসরি ব্যাবহার করা হচ্ছে ইয়েমেনের যুদ্ধক্ষেত্রে। এদিকে হুথী বিদ্রোহীরাও দেশের সুন্নি জাতিগোষ্ঠিকে চিরতরে উৎখাত করার জন্য কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম সংগ্রহ করে যাচ্ছে ইরান এবং রাশিয়া থেকে। আর এসবের জন্য কি শুধুই সৌদি আরব একাই দায়ী? হুথি বিদ্রোহীরা দেশের সাধারণ জনগণকে যুদ্ধক্ষেত্রে মানব ঢাল হিসেবে ব্যাবহার যে করছে না সেটাও বা বিশ্ব সমাজ কিভাবে নিশ্চিত করবেন? তার সঠিক কোন উত্তর কারো কাছে পাওয়া সম্ভব নয়।
বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে মার্কিন যুক্তরষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় জোট এবং রাশিয়া। কারণ ইয়েমেনে যুদ্ধ পরিচালনায় সৌদি নির্বিচের সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হয়। বাদশা শাসিত সৌদি সরকার মুলত ২০০৮-১৯ সাল পর্যন্ত একাই দুই শত বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের অস্ত্র আমদানি করেছে এবং ঠিক একই সময়ে আরও নুন্যতম ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে সামরিক সাজ সরঞ্জামের রিপিয়ার, ম্যান্টন্যান্স, সার্ভিসিং এবং অপারেটিং কস্ট হিসেবে। আর মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোকে ৮০% অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ইউরোপীয়ান দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ইত্যাদি। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ এর জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য প্রায় ৬.০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষুদ্র যুদ্ধাস্ত্র এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গোলাবারুদ সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করেছে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, ইয়েমেনের জনসংখ্যার আনুমানিক ৭৫% সুন্নি জনগোষ্ঠিকে রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সৌদি আরব ও তার জোট। বর্তমানে সৌদির দেয়া অর্থ এবং মানবিক সহায়তায় টিকে আছে দেশটির বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ। ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেন মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে সৌদি সালমান সরকার।
অথচ প্রতিনিয়ত হুথী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ এবং মানবিক কার্যক্রমকে চরমভাবে বাধাগ্রস্থ করে যাচ্ছে এরা নিজেরাই। এরাই আবার বলে বেড়াচ্ছে দেশের মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গেল। দেশের মানুষের মুখে দু বেলা আহারের ব্যাবস্থা করে দেবার মুরোদ নেই, অথচ কোটি ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনে এনে যুদ্ধ করতে ব্যস্ত হুথী বিদ্রোহীরা। আবার নাকি নিজস্ব প্রযুক্তির ড্রোন ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে এরা।
জাতিসংঘ ইয়েমেনের সব পক্ষকে একত্র করে দেশে গণভোটের মাধ্যমে সমস্যার মিমাংসা করা এবং অংশীদ্বারিত্বের ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠন করার বিষয়ে বার বার তাগিদ দিয়ে গেলেও তাতে মোটেও আগ্রহী নয় হুথী বিদ্রোহী মিলিশিয়া গ্রুপগুলো। কারণ ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮% শিয়াপন্থী হুথী জাতিগোষ্ঠি। তাই এ মুহুর্তে সারা দেশে গণভোট দিলে ৭২% থেকে ৭৫% পর্যন্ত সিংহভাগ সুন্নি জনগোষ্ঠির ভোটের কাছে তাদের পরাজয় একেবারে সুনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
তাই তারা আজ কিন্তু নানান টালবাহানা এবং অপকৌশলে জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে সারা দেশ ব্যাপী একযোগে গণভোটের বিষয়ে মোটেও রাজি নয়। আবার আগে থেকে দখলে থাকা দেশের প্রায় ৪০% এলাকা নিয়ে নতুন কোন দেশ গঠন করার পথেও তারা কিন্তু হাঁটছে না। এখানে তাদের মূল টার্গেট যুদ্ধ করে হোক কিংবা অন্য যে কোন উপায়ে দেশে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করে সারা দেশ দখলে নিয়ে অন্য কোন সম্রাজ্যবাদী শক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারে সুযোগ করে দেয়া।
অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ আর মুসলিম বিশ্বের এই ভয়ঙ্কর বিভেদ এবং মতনৈক্য বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে এক লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়েছে এবং নিজেদের ধ্বংসের মুখে এনে হাজির করেছে।
আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
Leave a Comment