কোন পথে ইরানের অর্থনীতি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা?

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

সিরাজুর রহমানঃ বিগত দুই দশক থেকে ইরানের সমষ্টিক অর্থনীতি মার্কিন প্রশাসনের শতাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধের সম্মুখীন হয়ে বর্তমানে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সরাসরি বিরুপ প্রভাব পড়েছে ইরানের প্রধান আয়ের উৎস তেল রপ্তানি খাতে। দেশটির মোট রপ্তানির ৫৬% পর্যন্ত তেল থেকে আসলেও ২০২০ এসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের রপ্তানি ৪০-৫০% এর নিচে এসে ঠেকেছে। আর তারই ধারবাহিকতায় এক বছরে ইরানের তেল রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরে ইরানের মোট জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২০ হাজার মার্কিন ডলার দেখানো হলেও বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার (মাইনাস) -৬.০০% এবং দেশটির মূল্যস্ম্ফীতির হার প্রায় ৩৫% এসে ঠেকে। এদিকে দেশটির গড় বেকারত্বের হার প্রায় ১২% (২০১৯)। তাছাড়া ২০২০ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী এক ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪২,১০৬ ইরানী রিয়াল গুনতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ জনগণকে। যা কিনা আমাদের দেশের টাকার হিসেবে ১.০০ টাকার বিপরীতে ৪৯৭.০৩ ইরানি রিয়াল হতে। অর্থ্যাৎ এ মুহুর্তে ইরানে মাত্র ১০০ ডলার নিয়ে কেউ ভ্রমনে গেলে তিনি ৪২ লক্ষ ১০ হাজার ৬০০ ইরানী রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। তাই বর্তমানে ইরানের বিপ্লবী সরকার দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে অর্থ প্রবাহ ঠিক রাখতে ৫ হাজার রিয়াল থেকে ৫ লক্ষ রিয়াল পর্যন্ত ইরানী মুদ্রানোট বাজারে ছেড়েছে। আর এখন দেশটিতে ৫, ১০, ২০, ৫০ কিংবা ১০০ ও ৫০০ রিয়াল মানের মুদ্রানোট ব্যবহার হয় কিনা সন্দেহ।

তাছাড়া দেশটির সারধারণ জনগণ সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাকুরি কিংবা ব্যবসা করে লক্ষ বা কোটি রিয়াল উপার্জন করলেও দেশটির চরম মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি বিদ্যামান থাকায় তাদের আয়ের একটি বড় অংশই ব্যয় করতে হচ্ছে উচ্চমূল্যের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে। যেখানে কিনা ইরানে এক কেজি চাল অথবা আটার দাম ২,৪৭,০১৫ ইরানী রিয়াল। আবার এক কেজি আলুর দাম ১,৩২,০৯১ ইরানী রিয়াল। অন্যদিকে ৩০০ (এমবিপিএস) গতির এক জিবি ইন্টারেট ডাটা কিনতে খরচ করতে হয় ৪৩ লক্ষ ইরানী রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ। তার মানে বাংলাদেশের বাজারে ১০০০ টাকার বাজার করলে ইরানে ঠিক একই পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করতে ভোক্তাকে আনুমানিক ৫.০০ লক্ষ ইরানী রিয়াল পর্যন্ত ব্যয় করতে হবে।

বিশ্বের আরেক মহান নেতা হ্যুগো শ্যাভেজের দেশ ভেনিজুয়েলাও কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে এবং পাশাপাশি চরম মাত্রায় দূর্নীতি ও আর্থিক অব্যবস্থাপনায় তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক অবস্থা আরো ভয়াবহ পর্যায়ে টেনে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ভেনিজুয়েলার কাগুজে মুদ্রানোটের মান বিশ্বের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। দেশটিতে ১.০০ ডলারের বিপরীতে ২,০১,৭২০ ভেনিজুয়েলীয়ান বলিভার মুদ্রামান ধার্য্য করা হয়েছে। তাছাড়া দেশটির মুদ্রাস্ফীতি হার নজিরবিহীনভাবে ২,৩০০% এ পৌছে গেছে। আর ভেনিজুয়েলার দীর্ঘ সময়ের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও চরম অভাবের মুখে দেশটি থেকে বিপুল সংখ্যক লোক পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বা পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বর্তমানে ভেনিজুয়েলার বাজারে এক হালি ডিমের দাম মাত্র ১,১০,০০০ ভেনিজুয়েলিয়ান বলিভারের সমপরিমাণ এবং এক কেজি মুরগির মাংসের দাম প্রায় ১২ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ ভেনিজুয়েলিয়ান বলিভারের সমপরিমাণ। ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ হলেও দূর্নীতির কবলে আবদ্ধ দেশটি আজ কিন্তু খনিজ তেল বা ক্রুড ওয়েলকে রিফাইনিং করে এক লিটার ডিজেল কিংবা পেট্রোলে পরিণত করার কোন ক্ষমতা রাখে না। সেই আবার ইরান থেকে লক্ষ লক্ষ ব্যারেল পরিশোধিত তেল (পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন) এনে কোন রকমে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে।

২০ শে জুন, ২০২০ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচআরসিআর) তাদের ‘গ্লোবাল ট্রেনড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ২০২০ সালে বিশ্বের মোট শরণার্থী (বাস্তুচ্যুত) মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ৯৫ লক্ষ প্রায়। আর বিশ্বের প্রথম স্থানীয় বাস্তুচ্যুত দেশ হিসেবে যুদ্ধ কবলিত সিরিয়ায় মোট শরণার্থী (বাস্তুচ্যুত) মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬৬ লক্ষ এবং ভেনিজুয়েলায় কোন গৃগযুদ্ধ না চলা সত্ত্বেও দেশটির প্রায় ৩৭ লক্ষ সাধারণ মানুষ খ্যাদাভাব এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখে তাদের পার্শ্ববর্তী অন্য কোন দেশে শরণার্থী হিসেবে চলে গেছে। এখন বর্তমানে বিশ্বের বুকে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় শরণার্থী (বাস্তুচ্যুত) দেশের তালিকায় নাম লিখেয়েছে কথিত এসব মহান নেতার দেশ ভেনিজুয়েলা।

এসব বিপ্লবী ও মহান নেতা শাসিত সরকার তাদের নিজ দেশের জনগণের কল্যানে কিছু করতে পারুক বা না পারুক, তারা কিন্তু নিশ্চিন্ত মনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং পশ্চিমা দেশের বিরোধিতা এবং আগ বাড়িয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করতে ওস্তাদ। তাছাড়া নিজ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ও সাধারণ জনগণকে বঞ্চিত করে হলেও অন্য দেশে অশুভ প্রভাব বিস্তার এবং গৃহযুদ্ধকে দীর্ঘয়িত করার মতো উস্কানি, গোপনে সেনা মোতায়েন ও অস্ত্র সরবরাহ কিংবা বিলিয়ন ডলারের অর্থ সহযোগিতায় কোন রকম ত্রুটি রাখছে বলে মনে হয় না।

তবে যাই হোক না কেন, এসব অস্থিতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতির আড়ালে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের কিছু অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলো। আজ সারা বিশ্বের মোট প্রাণঘাতী অস্ত্র বানিজ্যের ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত চলে যাচ্ছে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের আমীর বাদশা শাসিত ধনী দেশগুলোতে এবং এই সুযোগেই দীর্ঘ মেয়াদে শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যাবসা চালিয়ে মুনাফা লুটে নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া কিংবা তাদের জোটভুক্ত দেশগুলো।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored