নির্বাচনে পরাজিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
তিনি জয়ী হতে যদি না পারেন তাহলে সেটি ঘটবে ডাকযোগে জাল ভোটের কারণে। এজন্য নয় যে, অধিকাংশ আমেরিকান তার বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।
২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার হোয়াইট হাউজে প্রেস ব্রিফিংকালে এক সংবাদদাতার প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এমন অভিমত পোষণ করেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতির পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ স্টেটেই ডাকযোগে আগাম ভোটের প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে।
এধরনের ব্যবস্থার আপত্তি জানাচ্ছেন ট্রাম্প। তার ধারণা, ডাকযোগে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। ডাকযোগে ভোটের মধ্যে ভোট চুরিসহ নানা দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে বলেও ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করছেন।
বহু পুরনো এই রীতির মধ্যে কখনোই বড় ধরনের কোন জালিয়াতি অথবা কারচুপি অথবা প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি বলে নির্বাচিন পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছেন।
নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, দেখুন-আমরা দেখতে চাই কী ঘটছে।
আপনি জানেন যে, আমি বরাবরই এমন ব্যালটের ব্যাপারে জোরালো অভিযোগ করে আসছি। ডাকযোগের ব্যালট হচ্ছে বিপজ্জনক, বিপর্যয় সৃষ্টিকারি।
জনগণ দাঙ্গায় লিপ্ত হচ্ছে; এমন অবস্থায় কেউ কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার করতে পারেন? যদি শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ ভোট দিতে পারেন, তাহলে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোন প্রয়োজনই হবে না। ধারাবাহিকভাবেই ক্ষমতায় থেকে যাবো।
গত জুলাইতে ফক্স নিউজের সংবাদদাতা ক্রিস ওয়ালেস ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যদি জো বাইডেন জয়ী হন তবে তিনি সে ফলাফল মেনে নেবেন কিনা, জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমাকে সেটি দেখতে হবে। না, আমি এর জবাবে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলতে চাই না। আমি না-ও বলতে চাই না। এবং আমি কখনোই তা বলতে চাই না।
এদিন সকালে অপর এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আগাম সন্দেহ পোষণ করেছেন। আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কে বিজয়ী হবেন সেটি নির্ধারণ করতে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হতে পারে।
এজন্যে বিচারপতি রুথ বাদের গিন্সবার্গের মৃত্যুর ফলে শূন্য পদটি ৩ নভেম্বরের আগেই পূরণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
রিপাবলিকান ট্রাম্পের এমন মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ডেমক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি। এমন ঠাট্টা কী করা উচিত? এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কী বলা উচিত সেটি আমি জানি না।
তবে গত জুলাইতে ডেমোক্রেটরা ভোট কারচুপি করবে বলে ট্রাম্প যে আশঙ্কা করেছিলেন তার জবাব দিয়েছে বাইডেন টিম।
সে সময় তারা বলেছিলেন, আমেরিকার ভোটারেরা এই নির্বাচনে কাকে জয়ী করবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন। এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ভালোভাবেই জানে হোয়াইট হাউজ থেকে জবর দখলকারিকে কীভাবে তাড়াতে হয়।
বছরের শুরুতে ট্রাম্পকে ইমপিচ করার কার্যক্রমে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারি কংগ্রেসম্যান এডাম শিফ ট্রাম্পের দায়িত্ব হস্তান্তরে অনীহা প্রসঙ্গ বলেন, এভাবেই গণতন্ত্র মরে যাচ্ছে।
একজন প্রেসিডেন্ট এতটাই বেপরোয়া যে, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অঙ্গীকার করতে চান না। তিনি ভোটারের রায়কে অবজ্ঞা করতে চান। এবং অবাক করার ঘটনা যে, এমন মতামত/মন্তব্যে রিপাবলিকানরা এতটাই ভীরু যে কোন উচ্চবাচ্য করছেন না।
তবে আমরা বসে থাকবো না। আমেরিকার মালিক হচ্ছেন জনগণ। জনগণের রায় মাথা পেতে নিতেই হবে।
ট্রাম্পকে ইমপিচের পক্ষে ভোট প্রদানকারি রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি (২০১২ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন) ট্রাম্পের এমন মন্তব্যে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করে এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছেন, গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। এর ব্যতয় ঘটছে বেলারুশে।
এমন মন্তব্য বা অনীহা প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে অসম্মান করতে চেয়েছেন, যা অকল্পনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য।
দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে ট্রাম্পের এমন মনোভাবে করোনায় বিপর্যস্ত আমেরিকায় ভোটারের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।