পিপিই সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ, ডাক্তারের পাঠানো হলো মানসিক হাসপাতালে

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা ভারতীয় এক চিকিৎসকের ঠাঁই হয়েছে মানসিক হাসপাতালে। এমন অপরাধে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি ডা. সুধাকর রাও। ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন এনেস্থেটিস্ট। তাকে নিয়ে দু’মাসের মধ্যে গত সপ্তাহান্তে দ্বিতীয়বার জাতীয় পর্যায়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। ডা. সুধাকর রাও-এর বসবাস বিশাখাপত্তমে। সেখানকার মহাসড়কে তার মুখোমুখি হয় পুলিশ। এ সময়ের ধারাবাহিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

তাতে দেখা যায়, তাকে আটক করছে পুলিশ। শুধু হাসপাতালে সুরক্ষা সামগ্রির সংকট নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি বিরোধপূর্ণ আচরণের শিকার হন। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাকে পরে মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

কি হয়েছিল ডা. রাও-এর
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয় কিছু ভিডিও। শনিবার তাতে বেশ কিছু দ্বিধায় ভরা ইভেন্ট প্রদর্শন করা হয়। এতে দেখা যায়, রাস্তার পাশে নিজের গাড়িতে শার্টহীন বসে আছেন ডা. সুধাকর রাও। তিনি পুলিশের প্রতি চিৎকার করছেন। আরেকটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, তার দু’হাত পিছনে নিয়ে বাঁধা। তিনি রাস্তার ওপর পড়ে আছেন। একজন কনস্টেবল রাইফেলের বাঁট দিয়ে তাকে আঘাত করছে। এ ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর ওই কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তদন্ত মুলতবি রয়েছে।

সর্বশেষ ভিডিওতে দেখা যায়, কর্মকর্তারা ওই ডাক্তারকে দলামোচড়া করে একটি অটোরিক্সায় তুলছে অনেক মানুষের সামনে। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়ার আগে ডা. সুধাকর রাও স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব সাংবাদিক তার পর থেকেই ঘটনার ফলোআপ করতে থাকেন। তাদের কাছে ডা. সুধাকর রাও বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা তার গাড়ি জোর করে থামায় এবং তাকে জোর করে বের করে নেয়। তার ভাষায়, পুলিশ সদস্যরা আমার ফোন ও ওয়ালেট কেড়ে নেয়। আমাকে আঘাত করে।

তাকে আটকের এই ঘটনায় বিস্তর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী ও অন্যরা। তারা বলছেন, ডা. সুধাকর রাও-এর ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে পুলিশ। এই বিষয়টি অনেক বিতর্কিত। কারণ ওই ডা. আগে থেকেই সাময়িক বরখাস্তের অধীনে ছিলেন।

কেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে
ডা. সুধাকর রাও কাজ করেন একটি সরকারি হাসপাতালে। গত ৩রা এপ্রিল তিনি মিডিয়ার কাছে বলেন যে, চিকিৎসকদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুরক্ষা গাউন ও মাস্ক দেয়া হয় নি। তিনি জানিয়েছেন, একটি মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এ বিষয়টি উত্থাপনের পর পরই তাকে মিটিং থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। একটি ভিডিও ক্লিপে স্থানীয় টেলিভিশনের সাংবাদিকদের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন-নতুন একটি মাস্ক চাওয়ার আগে আমাদেরকে ১৫ দিন একই মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আমাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে কিভাবে আমরা অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেবো? তার এ ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।

সঙ্গে সঙ্গে সরকার তদন্তের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ ফাইল করার আগেই কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলতে থাকেন, তিনি অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নৈতিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এর কয়েকদিন পরে ডা. সুধাকর রাও একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তাতে তাকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায় এবং তিনি সাময়িক বরখাস্ত আদেশ বাতিল করার আহ্বান জানান। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয় নি।

কি বলেছেন তিনি
কোভিড-১৯ এর সুরক্ষা সরঞ্জামের সঙ্কট নিয়ে কথা বলার পর থেকেই তিনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ডা. সুধাকর রাও ও তার পরিবার। শনিবার ডা. রাও বলেছেন, কয়েকদিন ধরে লোকজন আমাকে টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে। তার মা কাবেরি রাও বিবিসিকে বলেছেন, তার ছেলের কোন মানসিক সমস্যা নেই। সে স্বনামধন্য একজন চিকিৎসক। কিন্তু ওই উদ্বেগ প্রকাশ করার দিন থেকেই সে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যখন মানুষ আমাকে ফোন করে এবং তার বিষয়ে জানতে চায়, তখন আমার খুব খারাপ লাগে। কয়েক সপ্তাহ ধরে সে খুব হতাশার মধ্যে আছে।

সরকারি ভাষ্য কি
পুলিশ বলেছে, তাদের কাছে একটি রিপোর্ট যায় যে, মহাসড়কে মদ্যপ আচরণ করছে একজন ব্যক্তি। বিশাখাপত্তম পুলিশ কমিশনার আরকে মিনা বলেছেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগে পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জানতেন না যে, ওই ব্যক্তি ছিলেন ডা. সুধাকর রাও। পুলিশের অভিযোগ, তিনি রাস্তায় দেয়া একটি ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন এবং রাস্তার ওপর মদের বোতল ফেলে রেখেছিলেন। তাদের আরো অভিযোগ, পুলিশ সেখানে যাওয়ার আগেই পথচারীরা তাকে ধরে বেঁধে ফেলে। পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং ক্ষয়ক্ষতি করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। তবে কে এই মামলা করেছে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয় নি। সরকারি এই ভাষ্যকে সমর্থনকারী কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায় নি।

একটি ভিডিও শুধু পাওয়া গেছে, যেখানে সাধারণ মানুষের সহায়তায় ডা. সুধাকর রাও-এর হাত বাঁধতে দেখা যায় পুলিশকে। আর কে মিনা বলেছেন, এ সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে রুক্ষ্ম ব্যবহার করেন। একজন কনস্টেবলের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তা দূরে ছুড়ে ফেলেন তিনি। দৃশ্যত তাকে মনে হয়েছে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তাই তাকে প্রথমে একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে একটি হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষা করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মানসিক কোনো হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। তবে বর্তমানে যে হাসপাতালে রাখা হয়েছে ডা. সুধাকর রাওকে, তার তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাধা রানী বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে ডা. রাও স্থিতিশীল আছেন। তবু দু’সপ্তাহ তাকে পর্যবেক্ষণের অধীনে রাখা হবে। এরপরই তার পুরোপুরি অবস্থা সম্পর্কে তারা বলতে পারবেন।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored