দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো এবারের নির্বাচনে তাদের ভোট চুরি করেছেন। তাই তার অপসারণের দাবিতে লক্ষাধিক মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো তার পক্ষের লোকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন।যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশের এই বারের নির্বাচন অবাধ ও স্বাধীন হয়নি বলে এর নিন্দা জানিয়েছে। রোববার প্রাগ এবং ওয়ারশ’তে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন স্লোভাকিয়ায় নিযুক্ত বেলারুশের রাষ্ট্রদূত ইগোর লেশচেনিয়া। ইউরোপিয়ান দেশগুলো থেকেও প্রেসিডেন্টের ওপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে।
শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াইরত হাজার হাজার বেলারুশিয়ানের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন।
জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ একজন বাজে স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন লুকাশেঙ্কোকে। তিনি সব বৈধতা হারিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন।
পুতিন বেলারুশের বর্তমান প্রেসিডেন্টকে সমর্থন দিয়েছেন। প্রয়োজনে বেলারুশকে সামরিক সহায়তাও দেওয়া হবে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ প্রেসিডেন্ট ভোট চুরি করে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।
৯ আগস্ট দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট শতকরা ৮০.১ ভাগ এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান বিরোধী দলীয় প্রার্থী সভেতলানা তিকানোভস্কায়া (৩৭) শতকরা মাত্র ১০.১২ ভাগ ভোট পেয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেয়। এতে প্রেসিডেন্ট নিজেকে ভূমিধস বিজয়ী বলে দাবি করছেন।
বিক্ষোভকে স্বাধীন বেলারুশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বলে আখ্যায়িত করেছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ মানুষকে। তাদের অনেকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। তবে বার্তা সংস্থা এএফপির এক রিপোর্টারের দাবি এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কাছাকাছি।
তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, আপনারা এখানে এসেছেন ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার। আপনারা এসেছেন দেশকে, দেশের স্বাধীনতা, আপনার স্ত্রী, বোন ও সন্তানদের পক্ষে থাকার জন্য। কিন্তু বিরোধীরা গর্তের ইঁদুরের মতো হামাগুঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসবে, যদি তাদেরকে এখন দামিয়ে রাখা না যায়।
বিরোধী দলীয় প্রার্থী সভেতলানা তিকানোভস্কায়া বলছেন, ভোট যথাযথভাবে গণনা করা হয় নি। তিনি শতকরা ৬০ ভাগ থেকে ৭০ ভাগ সমর্থন পেয়েছেন বলে তার দাবি। প্রকাশ্যে তিনি এই ফলের নিন্দা জানিয়ে দেশ ছেড়েছেন। চলে গেছেন লিথুয়ানিয়ায়।
সেখানে রয়েছে তার সন্তানরা। তিনি তাদের কাছে ফিরে গেছেন। ওদিকে রোববার পরস্পরবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীতে।
প্রেসিডেন্টপন্থি এই বিক্ষোভে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাতের কর্মীদের যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে, যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। কয়েকদিন ধরেই রাষ্ট্র পরিচালিত কারখানাগুলোর কর্মীরা ওয়াকআউট করছিলেন। তাদের অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলের বিক্ষোভে।