রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) অসীম ক্ষমতাধর হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে চীন।
প্রতিবেশী দেশগুলোকে চাপে রাখা এবং আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসাবে এ ধরনের প্রপাগান্ডা চালিয়ে থাকে দেশটি। তবে চীন পিএলএ-কে যতটা ক্ষমতাধর এবং দুর্দান্ত বাহিনী হিসেবে উপস্থাপন করে বাস্তবে সেটা নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন চীনা বাহিনী কাজের চেয়ে আওয়াজ বেশি দেয়।
বাহিনীর সক্ষমতার প্রমাণ মেলে যুদ্ধক্ষেত্রে, রাজধানীর বিস্তীর্ণ পথে প্যারেড-কুচকাওয়াজের মাধ্যমে এটা নির্ধারণ করা যায় না।
দর্শনীয় প্যারেড এবং অগণিত সংবাদ নিবন্ধগুলোর মাধ্যমে কেবল সামরিক শক্তি নিয়ে গর্বিত হওয়া যায়। পূর্বোক্ত এই দুটি পদ্ধতিতে চীন ভালো, তবে যুদ্ধে এটি কি কোনো উপকারে আসবে?
চীন সর্বশেষ যে যুদ্ধটি করেছিল তা ছিল ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামে এবং সেটা ছিল নিষ্ফলা আগ্রাসন। এই যুদ্ধের পরে চীন প্রচার করতে শুরু করে যে তারা কখনো বিদেশের এক ইঞ্চি মাটিও দখল করতে পছন্দ করে না।
ভিয়েতনামকে শিক্ষা দিতে গিয়ে সেই যুদ্ধে চীনা বাহিনী উল্টো বিপাকে পড়ে দ্রুত সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।
অবশ্যই ১৯৭৯ সালের তুলনায় বর্তামানে পিএলএ একেবারেই আলাদা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেট এখন চীনা সেনাবাহিনীর।
এছাড়া কন্টিনে্টাল মিলিটারি থেকে পিএলএ এখন মেরিটাইম মিলিটারিতে পরিণত হওয়ায় শক্তি-সামর্থ এবং সামরিক সরঞ্জামে এটা এখন অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে।
পিএলএ-এর যুদ্ধক্ষেত্রের কার্যকারিতা নিয়ে এশিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্যদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশেষত বেইজিং যেভাবে পিএলকে প্রদর্শন করে এবং বিশ্বকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেয় সেটার সক্ষমতা নিয়ে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী সচিব ডেভিড স্টিলওয়েল ১৭ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ‘আজ আমরা চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাথে যেমন জড়িত রয়েছি তেমনি চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গেও কাজ করছি।
তবে এটা যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে বাস্তবে আমরা তেমনটি দেখি না। সিসিপি এখন বিশ্বজুড়ে, বিশেষত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় তৈরি করতে চায় যেটা বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করবে।’
স্টিলওয়েল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিগত কয়েকমাসে বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন শুরু করেছে চীন। বিশেষত ভারতীয় সীমান্তে চীনা হিংস্র আগ্রাসন, দক্ষিণ চীন সাগরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ছোঁড়া, দক্ষিণ চীন সাগরের দাবিদার দেশগুলোর সঙ্গে তীব্র বর্বরতা, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে তীব্র মৌখিক ও সামরিক হুমকি এবং জাপান নিয়ন্ত্রিত সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জে নৌবহর প্রেরণ। এগুলো কোনো দায়িত্বশীল বৈশ্বিক নেতার কাজ নয়, বরং আইনকে তোয়াক্কা না করা এক বোকার কাজ।’
পিএলএ-এর যুদ্ধের কার্যকারিতা যাচাই করেছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ হলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অধ্যয়ন ও অপরাধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বেটিস গিল।
চলতি বছরে তিনি রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জন্য একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেখানে চীনা বাহিনীর কার্যকারিতা সম্পর্কে বয়ান রয়েছে।
গিল বিশ্বাস করেন যে, চীনা সেনাবাহিনীতে বর্তমান ২০ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে গ্রাউন্ড ফোর্স মাত্র ৫০ শতাংশ, পিএলএ নেভি (পিএলএএন) এবং মেরিন কর্পস প্রায় ১২.৫ শতাংশ, পিএলএ এয়ার ফোর্স (পিএলএএফ) ২০ শতাংশের কাছাকাছি, পিএলএ রকেট ফোর্স (পিএলএআরএফ) ৬ শতাংশ, পিএলএ স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স (পিএলএসএফ) ৯ শতাংশ এবং বাকি ৪ শতাংশ যৌথ লজিস্টিক সাপোর্ট ফোর্স।
এছাড়াও, প্রায় ৫ লাখ রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ চুক্তিবদ্ধ নাগরিক। পিপলস আর্মড পুলিশের (চীন কোস্ট গার্ড সহ) প্রায় ৫ লাখ সদস্য রয়েছে। সুতরাং, সব মিলিয়ে চীন ৩০ লাখের বেশি সশস্ত্র কর্মী দেখাতে পারবে না।
পিএলএ অবশ্যই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। বর্তমানে চেয়ারম্যান শি জিনপিংয়ের নির্দেশে এটি ইতিহাসের সর্বাধিক ও সুদৃঢ় পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে এই পুনর্গঠনের প্রাথমিক পর্ব শেষ হয়েছে।
পাশাপাশি চীনা সেনাবাহিনী আমাদের সামনে কয়েকটি মাইলফলক দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশটি সামরিক তত্ত্ব, সংস্থা, কর্মী, অস্ত্র-সরঞ্জামের ব্যাপকভাবে আধুনিকায়ন ও উন্নত করবে। এছাড়া ২০৪৯ সালের মধ্যে পিএলএকে বিশ্বমানের সামরিক শক্তিতে রূপান্তর করার টার্গেট নিয়েছে দেশটি।
২০৪৯ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপন করবে চীন, সুতরাং এটা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।