প্রাণঘাতি ভয়াবহ মহামারী করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে এতদিন লকডাউনে ছিল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। এর ফলে দেশগুলির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। সেই থমকে যাওয়া অর্থনীতিকে ফের সচল করতে এখন সব দেশই মোটামুটি লকডাউন খুলে দেওয়ার পথে হাঁটেছে। চালু হয়েছে সরকারি, বেসরকারি পরিবহণ। খুলেছে শপিং মল, সিনেমা হল, পানশালা, রেস্তরাঁ। কিন্তু, লকডাউন শিথিল হতেই বেশ কিছু দেশে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
গেলো শুক্রবার গোটা বিশ্বকে সতর্ক করে হু প্রধান টেড্রস আধানম জানিয়েছেন, এবার এক নতুন রূপে করোনা ভাইরাস আরও ভয়াবহ অধ্যায় শুরু করেছে। হু প্রধানের কথায়, ‘বিশ্ব এখন এক নতুন এবং ভয়ঙ্কর (করোনা) সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে। মানুষ দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থেকে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ভাইরাস এখনও দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে চলেছে।’ তাই লকডাউন শিথিল হলেও মানুষকে এখন আরও বেশি করে সচেতন থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন হু প্রধান। হু প্রধানের আশঙ্কা যে একেবারেই অমূলক নয়, তা ব্রাজিলের পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যাবে। ব্রাজিলে বর্তমানে সংক্রমণের হার সবথেকে বেশি। সে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত কয়েকদিনে সেখানে আগের তুলনায় বেশ কয়েক গুণ বেড়েছে সংক্রমণের হার। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্রাজিলে সরকারি পরিসংখ্যানে যেটা বলা হচ্ছে আদতে সংক্রামিত এবং মৃতের সংখ্যা তার থেকে অন্তত সাত গুণ বেশি। যদিও ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসেনারোর এসব নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। লকডাউন শিথিল করে অর্থনীতিকে সচল করার পক্ষেই অনড় তিনি।
শুধু ব্রাজিলই নয় বিশ্বের সব দেশেই কমবেশি সংক্রমণ বাড়ছে। যেমন, ইতালিতে ফের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। আর সেটাকেই অস্ত্র করে ভাইরাসের উৎস নিয়ে ইউরোপের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে চীন। সেদেশের বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, আসলে ইতালি থেকেই চীনে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। জিনোম ডাটা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য মিলেছে। উহানের যে বাজারকে করোনার উৎস বলে ধরা হচ্ছে, সেখানে ইতালি থেকে আমদানি করা বহু পণ্য বিক্রি হতো। এই দাবির স্বপক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, গত বছর ডিসেম্বরে চীনে প্রথম করোনা সংক্রামিতের খোঁজ মিলেছিল ঠিকই। কিন্তু, তার কিছুদিনের মধ্যেই ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালিতে ভয়াবহ আকার নেয় করোনা। তাই ইতালিকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখাটা ঠিক হবে না।