ভারতীয় নৌবাহিনী আরো চারটি নতুন বোয়িং এডভান্স পি-৮আই নেপচুন এন্টিশীপ এণ্ড এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার ক্যাপবল মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট পেতে যাচ্ছে। বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের নৌ বাহিনীই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এই সিরিজের সমুদ্র নজরদারী পি-৮আই ব্যবহার করে। সাবমেরিন কিলার খ্যাত পি-৮আই নেপচুন বিমানের প্রথমটি চলতি ২০২০ সালের মাঝমাঝি সময়ে আসবে এবং অবশিষ্ট তিনটি ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের নৌ বাহিনির হাতে হস্তান্তর করা হতে পারে।
নৌবাহিনীর সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্যা হিন্দু জানায়, ভারতের নৌ বাহিনীতে সক্রিয় থাকা আটটি পি-৮আই নেপচুন বিমানের মতোই নতুন চারটিকে ভারতের নৌ বাহিনীর বিশেষ চাহিদা মোতাবেক কাস্টমাইজড বা কনফিগারেশন করে হস্তান্তর করবে মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশন। তাছাড়া পি-৮আই বহরে থাকা আগের সহ নতুন সবগুলোকে আপগ্রেডেড করে এনক্রিপটেড কমিউনিকেশন সিস্টেম ইন্সটল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্টের বোয়িং কর্পোরেশনের তৈরি পি-৮আই বিমানে এনক্রিপটেড কমিউনিকেশন সিস্টেম স্থাপন সম্ভব হয়েছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ‘কমিউনিকেশন্স, কম্পাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট’ (সিওএমসিএএসএ) সই করার কারণে। এই নতুন প্রযুক্তি ইন্সটল করার ফলে গোয়েন্দা তথ্য সাথে সাথে পাওয়ার পাশাপাশি ভারত মহাসাগরে রেড জায়ান্ট চাইনিজ সাবমেরিনের অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া অনেকটাই সহজ এবং দ্রুত করা সম্ভব হবে।
ভারত সরকার ২০০৯ সালে ২১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রথম আটটি পি-৮আই সমুদ্র নজরদারি বিমান ক্রয়ের বিমানের জন্য চুক্তি সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে ১১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি পি-৮আই বিমান সংগ্রহের চুক্তি করেছিল। আর সেই চুক্তি মোতাবেক মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশন এই নতুন ৪টি পি-৮আই ২০২০-২১ সালের মধ্যেই সরবরাহ করবে। এছাড়া ২০১৯ সালের জুনে আরো ১০টি পি-৮আই কেনার বিষয়টি অনুমোদন করে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পি-৮আই মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফটে বিশ্বের সর্বাধুনিক সাবমেরিন ধ্বংস সক্ষমতা সম্পন্ন টর্পেডো এবং উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর ৮টি পি-৮ আই স্কোয়াড্রন দক্ষিণ ভারতের রাজালি নৌবিমান ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হয়।
আসলে ৩৯.৪৭ মিটার দৈর্ঘ্য, ৩৭.৬৪ মিটার ইউন্সপেন এবং ১২.৮৩ মিটার উচ্চতার পি-৮আই এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার বিমানটির সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ গতি ৪৯০ নট বা, ৯০৭ কি.মি/ঘন্টা। তাছাড়া এর কমব্যাট রেডিয়াস ১,২০০ নটিক্যাল মাইল বা ২,২২২ কিলোমিটার এবং ফেরি রেঞ্জ ৪,৫০০ নটিক্যাল মাইল বা ৮,৩০০ কিলোমিটার। এটি স্টেশন থেকে উড্ডয়ন করে একটানা ৮ ঘন্টা মেরিটাইম পেট্রোল করতে সক্ষম। এটি দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী সিএফএম৫৬-৭ ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয়। যা কিনা ২৭,৩০০ পাউণ্ড থার্স্ট উৎপন্ন করে। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ গ্রস ওয়েট ৮৫,১৩৯ কেজি। ৯ জন ক্রু দ্বারা পরিচালিত পি-৮আই বিমনটি সর্বোচ্চ ১২,৪৯৬ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করে সমুদ্রের গভীরে নজরদারী করার করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। প্রতিটি পি-৮ এর মূল্য আনুমানিক ২৫৬ মিলিয়ন ডলার।
পি-৮আই কে লং রেঞ্জ এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার (এএসডাব্লু), অ্যান্টি সারফেস ওয়ারফেয়ার (এএসইউডাব্লু), ইন্টালিজেন্স, সার্ভেলাইন্স এণ্ড রিকোর্নিয়েন্স (আইএসআর) এর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। পি-৮আই যে কেবল মেরিটাইম পেট্রোলের জন্য উপযোগী বিষয়টি আসলে তা কিন্তু নয়। এটিকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার, জলদস্যুতা রোধ এবং সামরিক বাহিনীর অস্ত্র সহায়তাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিশনে এটি ব্যবহৃত হয়।
পি-৮আই বিমাটিতে ৫টি অভ্যন্তরীন ওয়েপন্স ‘বে’ এবং বাহিরের অংশে ৬টি হার্ড পয়েন্টে বিভিন্ন ধরণের প্রচলিত অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। এজিএম-৮৪এইচ/কে এসএলএএম-ইআর (ল্যাণ্ড এট্যাক ক্রুজ মিসাইল), এজিএম-৮৪এল ব্লাক-২ হারপুন এন্টিশীপ মিসাইল, মার্ক-৫৪ টর্পেডো, মাইন্স, ডেপথ চার্জার এবং হাই আল্টিটিউট এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার ওয়েপন্স সিস্টেম বহন করে। তাছাড়া এভিয়োনিক্স সিস্টেম হিসেবে রেইথন এপিওয়াই-১০ মাল্টি মিশন সারফেস সার্চিং রাডার, এএন/এএলকিউ-২৪০ এলেক্ট্রনিক্স সাপোর্ট মেজারস সুইট ইন্সটল করা হয়েছে।
সূত্রঃ ইন্ডিয়ান টাইমস