ভারত-নেপাল বিরোধে চীনা রাষ্ট্রদূতের রহস্যজনক ভূমিকা

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

ভারত-নেপাল সীমান্তবিরোধ এবং লাদাখে ভারত-চীন সংঘর্ষ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। যখন লাদাখ উত্তেজনা চরমে, তখন হঠাৎ করে নেপাল-ভারতের বিরোধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রশ্নবিদ্ধ কূটনৈতিক চাল দেখছেন বিশ্লেষকরা। অনেক ভারতীয় সরাসরিই বলছেন, ভারত-নেপাল সীমান্তবিরোধের জন্য নেপালের চীনা রাষ্ট্রদূত হু ইয়ানকির কূটনৈতিক চালই দায়ী। তিনিই এই সংকটের ‘নেপথ্যে’!

সম্প্রতি কাঠমাণ্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত হু দলীয় নেতাকর্মী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে ভূমিকা পালন করছেন, তা চলমান এই সংকটে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং তা রহস্যজনক। তীব্র সমালোচনায় পড়েছেন হু।

নেপাল-ভারত সীমান্তবিরোধে চীনের করণীয় কিছু নেই। এ সমস্যা হুর নেপাল আসার অনেক আগে থেকেই চলছে। কিন্তু তাতেও তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা থামছে না। বরং ওই চীনা রাষ্ট্রদূত নেপালের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর আরো বেড়েছে।

নেপালে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ঠিক এ সময়ে নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হু ইয়ানকির বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাবেক কূটনীতিকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সপ্তাহ দুয়েক আগে যখন ভারত আর চীনের মধ্যে বিরোধ চরমে, তখন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভণ্ডারির সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত হু। শুধু তা-ই নয়, তিনি বৈঠক করেন দেশটির ক্ষমতাসীন দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) প্রবীণ নেতা মাধব কুমার নেপালের সঙ্গেও। এ ছাড়া একাধিক শীর্ষস্তরের আমলার সঙ্গেও আলোচনা চালিয়েছেন চীনা রাষ্ট্রদূত। যখন নাকি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের ব্যাপারে দলের মধ্যেই চাপ বাড়ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির মসনদ বাঁচাতে নেমেছে চীন। নেপালের শাসক দলের মধ্যে কলহ মিটিয়ে চীনপন্থী অলিকেই আসনে রাখতে মরিয়া দেশটি। হয়তো এর জের ধরেই অলির বক্তব্য- ভারতের ষড়যন্ত্রে শামিল হয়ে দলেরই একাংশ তাঁকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করছে।

গত ৩০ জুন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির স্থায়ী কমিটির ৪৪ সদস্যের মধ্যে ৩০ জন, এমনকি দলের চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দহল এবং সিনিয়র নেতা নেপাল, ঝলনাথ, খানাল এবং বামদেব গৌতম কে পি শর্মা অলিকে প্রধানমন্ত্রী এবং দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। ক্ষমতাসীন দলের স্থায়ী কমিটির ৩০ জনই দহলের পাশে দাঁড়ানোয় বিপাকে পড়ে যান প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি।

এরপর আবার ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত হু ইয়ানকি। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মূলত নেপালের ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অস্থিরতা মিটিয়ে নিজেদেরে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই তৎপরতা চালাচ্ছেন হু।

নেপালের প্রেসিডেন্টের এক সহযোগী জানিয়েছেন, নিয়মিত সৌজন্য সাক্ষাতের অংশ হিসেবে গত ৩ জুলাই বিদ্যাদেবী ভণ্ডারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন হু। তাঁদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি



তবে বলেছেন, একজন কূটনীতিক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আমরা না বলতে পারি না। আমরা জানি না, কেন দলীয় নেতাকর্মী এবং রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বৈঠকগুলো বিতর্কে টেনে আনা হয়েছে।



কাঠমাণ্ডু পোস্ট বলছে, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে ভাণ্ডারি যে ভূমিকা পালন করে চলেছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। বিশেষত, যখন দুই দলের চেয়ারম্যান অলি ও দহলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া যখন ভণ্ডারীর সঙ্গে বৈঠকের পর অলি সংসদ ত্যাগ করেন এবং তাঁর বিরোধীদের বিরুদ্ধে আরো আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণ করেন।



আবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের বৈঠকও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। বিশেষত, নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বারবার কূটনৈতিক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছে। এ ক্ষেত্রে এই বৈঠককে গোপন বৈঠকও বলা যায় বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।

নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরেন রিলেশন ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি চিফ বিষ্ণু রিজাল বলেন, এই বৈঠক নিয়ে আমি কিছু জানি না। তবে চীনা প্রটোকল মতে, শীর্ষস্তরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর অন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন রাষ্ট্রদূত।



স্বাভাবিকভাবে কূটনীতিকদের মতো চলাফেরা নেই হু ইয়াংকির মধ্যে। আমলাতান্ত্রিক ভাবগাম্ভীর্য তাঁর মধ্যে নেই বললেই চলে। বিনোদন তারকাদের মতো প্রায়ই নিজের আকর্ষণীয় সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। এ থেকে আবার নেপালের পর্যটন শিল্পেরও উন্নয়ন হচ্ছে। অবশ্য তিনি নিজেও নেপালের পর্যটন খাতের উন্নয়নের পথে। তবে তা নিয়েও আছে অনেক সমালোচনা। একপর্যায়ে সংবাদমাধ্যম তাঁকে বলেই ফেলেছে, ‘মডেলের মতো কূটনীতিবিদ’!



কূটনীতিবিদ হিসেবে ২৪ বছরের পেশাগত জীবন হু ইয়ানকির। নেপালে আছেন দেড় বছরের মতো। এর মধ্যেই দেশটির জনপ্রিয় বিদেশি নাগরিকে পরিণত হয়ে গেছেন। নেপালে আসার আগে নিজেদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে উচ্চতর পদে ছিলেন। পাকিস্তানেও কাজ করেন কিছুদিন। তবে তুমুলভাবে আলোচনায় আসেন নেপালে এসেই। গত কয়েক মাসে নেপালের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored