সিরাজুর রহমানঃ গতকাল ছিলো বিশ্ব হিরোশিমা দিবস। ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট এর এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় মানব ইতিহাসে্র অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং জঘন্যতম নিউক্লিয়ার অস্ত্রের প্রয়োগ করে বসে শুধুমাত্র নিজেকে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে প্রকাশ করার জন্য। আর হিরোসিমায় ফেলা ‘লিটলবয়’ নামক এই নিউক্লিয়ার বোমার ধ্বংস ক্ষমতা ছিল ১৫ কিলোটন টিএনটি। এই এ্যাটোম বোমা হামলায় হিরোশীমায় ১,৪০,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। এটা ছিল সেই ৭৫ বছর আগেকার এক ভয়ানক ইতিহাস।
আর ৬ই আগস্ট ২০২০ এর ঠিক একদিন আগে ৫ই আগস্ট মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট একটি দেশ লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্র বন্দরে একটি গুদামে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ প্রায় ২,৭৫০ টন ওজনের অত্যন্ত বিপদজনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়ে এক ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। আল জাজিরা নিউজের তথ্য মতে, এই বিস্ফোরণে এখনো পর্যন্ত ১৪০ জনের কাছাকাছি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৫ হাজারের কাছাকাছি। তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশাঙ্খা করা হচ্ছে। তাছাড়া এই ভয়ানক ধ্বংসযজ্ঞে লেবাননের রাজধানীর ৪০% পর্যন্ত এলাকা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ৩৭ লক্ষ জনসংখ্যার এই শহরের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ এই মুহুর্তে একেবারেই গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বৈরুতের এই ধ্বংযজ্ঞের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ৭৫ বছরে বিশ্ববাসী এত বড় ভয়ানক বিষ্ফোরণ চোখে দেখেনি। যেখানে কিনা জাপানের হিরোশিমায় ফেলা ‘লিটলবয়’ এ্যাটম বোমার ধ্বংস ক্ষমতা ছিল ১৫ কিলোটন টিএনটি, সেখনে কিনা বৈরুতে নজিরবিহীনভাবে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর অ্যাামনিয়ান নাইট্রেট বিস্ফোরণের ধ্বংস ক্ষমতা ছিল হিরোশীমায় ফেলা এ্যাটম বোমার আনুমানিক ২০% বা ৩.০০ কিলোটন টিএনটি ধ্বংস ক্ষমতার কাছাকাছি। আর আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তানের অস্ত্র ভাণ্ডারে মজুত থাকা বেশিরভাগ নিউক্লিয়ার অস্ত্রের ধ্বংস ক্ষমতাও কিন্তু ৩ থেকে ৫ কিলোটন পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে।
এই বিস্ফোরণে দেশটিতে ৩.৮ কিংবা ৪.৫ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবং এর তীব্র শক ওয়েভে ১০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত জানালার কাঁচ ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া গ্রীস থেকেও এই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে সারা বিশ্বে যুদ্ধ কিংবা সামরিক সংঘাতে যত জন লোক মারা যায় কিংবা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাদের ৯০% পর্যন্ত কিন্তু কোন না কোন ভাবেই ইসলাম ধর্মের অনুসারী বা মুসলিম জাতিগোষ্ঠির লোক। আর এই মুহুর্তে বৈরুতে ঘটে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ কী তা জানা সম্ভব না হলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকা মুসলমানেরাই কিন্তু চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলো তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।
এই বিপর্যয় কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সৃষ্টি কিংবা পরিকল্পিত নাশকতা কিনা তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চললেও প্রাথমিক তদন্তে দেশটির চলমান লাগামহীন দূর্নীতি এবং চরম সরকারি অব্যাবস্থাপনার মতো অতি স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।