রোহিঙ্গাদের প্রতি সু চির ঘৃণা বলবৎ

সাম্প্রতিক সংবাদ
তানভীর হাসান
Sponsored

একসময়ে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এবং সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতীক পরিচিত ছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন যুদ্ধ করেছেন ক্ষমতায় গিয়ে তাদের রক্ষা করার জন্য তিনিই বক্তব্য রেখেছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমার মামলার শুনানিতে তিনি প্রায় ১০ মিনিটের মতো বক্তব্য রাখেন। তার এই বক্তব্যে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কথা দুইবার বললেও একবারও রোহিঙ্গা শব্দটি এককভাবে উচ্চারণ করেননি তিনি।

বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে অং সান সু চির এই শুনানিতে অংশগ্রহণকে আগামী বছরের নির্বাচন প্রস্তুতি হিসাবে দেখা হচ্ছে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর রোহিঙ্গাদের প্রতি ঘৃণার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেই রোহিঙ্গা শব্দটি তিনি উচ্চারণ করেননি।

সু চি দাবি করেন, রাখাইনে বুদ্ধিস্ট আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র যুদ্ধ হচ্ছে এবং মুসলিমরা এর কোনও পক্ষ নয় কিন্তু যে কোনও যুদ্ধকালীন অঞ্চলের মতো এখানেও মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আদালতকে বলেন, এর ফলে চলমান সশস্ত্র সংগ্রাম আরও বাড়বে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

সু চি আদালতকে জানান, যদি মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কেউ যুদ্ধাপরাধ করে থাকে তবে সামরিক বিচার প্রথা অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।

তবে তিনি স্বীকার করেন, ইন দিন গ্রামে দশজন মুসলিমকে হত্যার কারণে চারজন সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন সৈন্যকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে। তবে আংশিক দণ্ড ভোগ করার পরে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় যেটি অনেকে ভালো চোখে দেখেনি।

রাখাইনে সশস্ত্র প্রতিরোধ চলছে জানিয়ে তিনি আরও স্বীকার করেন, এর ফলে কয়েক লাখ মুসলিম উত্তর রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

মামলার প্রভাব প্রত্যাবাসনে পড়ার হুমকি

মিয়ানমার আইনি দলের সদস্যরা অন্তবর্তীকালীন কোনও আদেশ না দেওয়ার জন্য যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনকালে একাধিকবার আদালতকে সতর্ক করে বলেন, এর ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের সমালোচনাও করেন মিয়ানমারের কৌঁসুলিরা। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে তারা বলেন, এ বিষয়ে এই আদালতের আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার নেই, গণহত্যা হয়েছে এর পক্ষে প্রমাণাদির অভাব ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়া জরুরি বিবেচনা নয়।

এই দলের সদস্য প্রফেসর উইলিয়াম স্কাবাস বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে’ এই কাজ করেছে কিন্তু যা ঘটেছে সেটির পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে সেগুলো বিবেচনা করেনি।

বসনিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়া মামলার রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে ১০ হাজারের মতো লোক মারা গেছে কিন্তু ১০ লাখের মধ্যে এই পরিমাণ লোক মারা গেলে সেটি গণহত্যা হয় না কারণ, বসনিয়ায় অনেক লোক মারা গেছে কিন্তু মোট জনসংখ্যার তুলনায় সেই পরিমাণ কম থাকায় সেটিকে গণহত্যা বলা হয়নি।

অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা এখন নেই দাবি করে কৌঁসুলি সুকোয়া বলেন, ২০১৯ এর মার্চে গাম্বিয়া মামলা করার প্রস্তুতি নেয় এবং নভেম্বরে মামলা করে। তারা যদি অন্তবর্তীকালীন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতো তবে আগেই মামলা করতো, ছয় মাস বসে থাকতো না।

অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকি রয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সংঘটিত হবে এধরনের উপাদান থাকা জরুরি কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইনে কোনও ঝুঁকি নেই বলে তিনি দাবি করেন।

মিয়ানমারের আরেক কৌঁসুলি প্রশ্ন করেন, এখানে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু মামলা করেছে গাম্বিয়া।

এই পরিস্থিতিতে কোর্টের রায় দেওয়ার কোনও এখতিয়ার নেই দাবি করে তিনি বলেন, গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই এবং অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিবাদের উপাদান থাকা জরুরি।

তিনি বলেন, এ ধরনের সমস্যা সাধারণভাবে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হয় এবং কোর্টে এধরনের মামলা কূটনৈতিক উদ্যোগের ওপর প্রভাব ফেলবে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored