লাদাখ ছাড়াও আরও যেসব এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় চীন

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

চীনের নীতি নির্ধারকেরা চান ‘মধ্যবর্তী সাম্রাজ্যের’ সেই পুরনো হিসেবের পথেই এগোতে । তাদের পাঁচটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে, আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়ন, ভরসা অর্জন, প্রতিকূলতার মোকাবিলা, সম্পদের বহুমুখী ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাইওয়ানকে কোণঠাসা করা।

লাদাখ বিতর্কের শুরু হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। চীনা সেনাবাহিনী জিনজিয়াং এবং তিব্বত দখল করার পর ১৯৫৯ সালে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই জওহরলাল নেহরুকে চিঠি লিখে আকসাই চীনের অধিকার দাবি করেছিলেন। ততদিনে তারা ওই এলাকার দখল নিতে শুরু করেছ। ১৯৬২ সালে চীন আরও অগ্রসর হয়। প্যাংগং লেকের একটি বড় অংশ, গালওয়ান নদী উপত্যকার একাংশ, দেপসাং সমভূমির আশপাশের এলাকা, চুমার, হট স্প্রিং, ডেমচক, দৌলত বেগ ওল্ডি-সহ বেশ কিছু এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে। এই দাবি করা এলাকার সীমানাগুলো জুড়েই লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা। সেখানে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৫৯৭ কিলোমিটার। চীন এখন দাবি করছে পুরো লাদাখটাই তাদের।

ভারতের উত্তর এবং পূর্বে চীন অধিকৃত তিব্বতের সঙ্গে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তবর্তী বড় অংশ চীন অবৈধভাবে দখল করেছে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন লাদাখ লাগোয়া আকসাই দখল করেছিল। ওই অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। ১৯৬৩ সালের ২ মার্চ একটি বেআইনি চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান ৫ হাজার ১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চীনকে দিয়ে দেয়। এরপরও চীনের দাবি পূর্ব লাদাখের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

লাদাখের পাশাপাশি চীন নেপালকে উসকে লিপুলেখ পাস লাগোয়া ট্রাইজংশন নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে। ভুটান-তিব্বত-সিকিম, ভুটান-তিব্বত-অরুণাচল এবং মিয়ানমার-তিব্বত-অরুণাচল ট্রাইজংশন নিয়ে বিতর্কের কারণও চীন। উত্তরাখণ্ড-তিব্বত সীমান্তের বারাহোতি, উত্তর সিকিমের ফিঙ্গার এরিয়া, ডোকলাম উপত্যকা-সহ পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব ভুটানের বিভিন্ন অঞ্চল এবং পুরো অরুণাচল প্রদেশ রয়েছে চীনের দাবির তালিকায়। চীন কখনও ম্যাকমাহন লাইনের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। নির্বাসিত তিব্বতি সরকারও চীনের এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছে। ১৯১৩ সালে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তাদের সঙ্গে ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের আলোচনা শুরু হয়েছিল। যার পরিণতিতে ২০১৪ সালে সীমানা নির্ধারণের জন্য সই হয় শিমলা চুক্তি। ভারত ও তিব্বতের সীমানা নির্ধারক হিসেবে ম্যাকমাহন লাইনকে মেনে নেয় দু’পক্ষই।

এটি কেবলমাত্র বৃহৎ প্রেক্ষাপটের মানচিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের মতে, দুই বাহিনীর শারীরিক উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে এলএসি’র অবস্থান সংক্রান্ত খুঁটিনাটি স্থির করা উচিত। ১৯৫৯ সালে নেহরুকে লেখা চৌ এন লাইয়ের একটি চিঠিতেও এমন ব্যাখ্যাই দেওয়া হয়েছে। ১৯৬২ সালে কলম্বো প্রোটোকলে ফের এলএসি সংক্রান্ত বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমা চিহ্নিত করে, বিতর্ক কমিয়ে দু’দেশের সমঝোতায় আসার বিষয়টিকেই প্রাথমিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

১. তিব্বত-সিকিম-ভুটান সীমান্তের ট্রাইজংশনের অবস্থান। এখানে চীনের দাবি, ভারত নির্ধারিত সীমান্তের আরো দক্ষিণে। ডোকলাম মালভূমির সাম্প্রতিক ঘটনা এবং পশ্চিম ভুটানের সারিথাংয়ে চীনা দখলদারির ঘটনা এমন দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

২. তিব্বত-ভুটান-অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তের ট্রাইজংশনের অবস্থান। এখানেও চীনা দাবি ‘দক্ষিণ-মুখী’। থাগ লা গিরিশিরা, খিনঝেমানে, তাওয়াং, বমডিলা-সহ বেশ কিছু এলাকা এমনকি পূর্ব ভুটানের সাকেতং এলাকাকেও চীন তার ভূখণ্ড বলে দাবি করে।

৩. মধ্য ভুটানের বেশ কিছু এলাকারও দাবিদার চীন। ভুটানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির কারণে এখানেও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে ভারতের।

৪. অরুণাচলের সুবনসিরি সেক্টরের অন্তর্গত লংজুর ওপরেও দাবি রয়েছে চীনের।

৫. দিবাং সেক্টরের ‘ফিশ টেল’ ভারতীয় ভূখণ্ড হিসেবে মানতে চায় না চীন।

৬. তিব্বত-অরুণাচল-মিয়ানমার ট্রাই জংশনের লোহিত সেক্টর দাবি করার পর আরও অনেকটা দক্ষিণের ওয়ালংকেও নিজেদের এলাকা বলে চিহ্নিত করেছে চীন।

উত্তরাখণ্ডের বারহোতির পাশাপাশি তিব্বত-হিমাচল প্রদেশ সীমান্তের কিছু এলাকা যেখানে চীনা অধিকারের বার্তা রয়েছে। তিব্বতে দখলদারি কায়েম করার পরে তাওয়াং এলাকা, সুবনসিরি উপত্যকার আসাফিলা এবং সুবনসিরি ও তার উপনদী সারি চুর অববাহিকায় পোটরং রিজের,‘ফিশ টেল’-এর কৈলা পাস এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকেও ‘চীনের এলাকা’ বলে চিহ্নিত করে সে দেশের সরকার। এছাড়া  লোহিত সেক্টরের জলবিভাজিকা  ডিচু পাসকেও নিজেদের এলাকা বলে চীন মনে করে।

তবে দাবি-দাওয়ার এই দীর্ঘ তালিকা সত্ত্বেও চীন ১৯৫৯ সালে এমনকি আশির দশকের শেষেও অরুণাচল সীমান্তের বিবাদ সমাধানের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। পশ্চিম সেক্টরে তার দখলে থাকা আকসাই চীনের সঙ্গে অরুণাচলের ওই অংশগুলো বদলাবদলি করতে চেয়েছিল সে দেশের সরকার। কিন্তু নয়াদিল্লি সেই প্রস্তাব মানতে রাজি হয়নি। এর পরে দু’দেশের প্রতিনিধিদের ধারাবাহিক বৈঠক হলেও সীমান্ত সমস্যা সমাধানের কোনও সূত্র মেলেনি। তবে দু’দেশের শীর্ষনেতৃত্বের আলোচনার প্রেক্ষিতে সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখার জন্য ১৯৯৩ এবং ২০০৫ সালে দু’টি চুক্তি সই হয়। বস্তুত, ২০০৩-’০৪ সালে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছিল। সে সময় মনে হয়েছিল সীমান্ত বিতর্কের সমাধান হতে পারে।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored