সাম্প্রতিক শিরোনাম

রণাঙ্গনে ২২ এপ্রিলঃ পাকসেনারা ফেনী দখলে ব্যর্থ হয় -মোহাম্মদ হাসান

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ২২ এপ্রিলঃ এইদিন গঠিত হয় কুখ্যাত আল-বাদর বাহিনী। পরবর্তীতে আল-বাদর বাহিনী জামাতের নিজস্ব বাহিনীতে রূপ নেয়। ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি আশরাফ হোসাইন ও কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে জামালপুর শহরে প্রথম আল-বাদর বাহিনী গঠিত হয়। আল-বাদর বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিলো সীমাহীন। এর চরিত্র ফুটে উঠে পত্রিকার একটি লেখা থেকে। পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়… “আল-বাদর একটি নাম! একটি বিস্ময়! আল-বাদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তি বাহিনী আল-বাদর সেখানেই। যেখানেই দুষ্কৃতকারী, আল-বাদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আল-বাদর সাক্ষাৎ আজরাইল।”

চট্টগ্রাম ও খুলনার দালালদের খুশি করতে গভর্নর টিক্কা খান উন্নয়নের নামে দু’লাখ করে টাকা দেয়। এদিন সরকারিভাবে প্রচার করা হয় যে, প্রদেশের কৃষি পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে। কৃষকরা দুষ্কৃতকারীদের কথায় কান না দিয়ে উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে। চট্টগ্রাম সফর করে এপিপি’র বিশেষ প্রতিনিধি সেখানের অবস্থা এমনভাবে বর্ণনা করে, যেন মনে হয় এদেশের মানুষ সবাই পাকীবাহিনীর পিছে একাট্টা হয়ে আছে। তিনি জনৈক ব্যক্তির উদ্ধৃতি উল্লেখ করে এভাবে- “আপনারা আমাদের সেনাবাহিনীকে বলছেন পাকিস্তানী বাহিনী কিন্তু এখন আমি এটাকে বলবো আল্লাহর বাহিনী …। ‘খোদায়ী সিপাইরা’ শয়তানের অনুচরদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেছে।” মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতামনাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে পাকী বাহিনী প্রচার করে যে, তথাকথিত ‘বাংলাদেশ সরকারকে’ স্বার্থ উদ্ধারের পর ভারতও স্বীকার করবে না। লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকার সংবাদদাতা ডেভিড লসহাক জানায়, তথাকথিত অস্থায়ী ‘বাংলাদেশ সরকারের’ অস্তিত্ব কেবলমাত্র কলকাতায় রয়েছে। আর কোথাও এসব অস্তিত্ব নেই।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর তথ্য মতে,কুমিল্লার গঙ্গাসাগরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদের অ্যামবুশ করে। এ অ্যামবুশে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোরূপ ক্ষতি ছাড়াই ৬ জন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ ও অস্ত্র দখল করে।
হিলিতে পাকবাহিনী আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্ত রেখার ভেতর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচন্ড আক্রমণ করে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের ভূখন্ডে আশ্রয় নেয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোদাগাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহে পাকবাহিনী হামলা চালায়। এখানে পাকহানাদারদের বিরাট কনভয় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এ সংঘর্ষে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করে।

পাক হানাদারদের হাতে বগুড়া শহরের পতন ঘটে।
পাকবাহিনী বাঘাবাড়িতে এসে শাহজাদপুর লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিবাহিনীর সাথে তুমুল সংঘর্ষের পর বাঘাবাড়ি ও শাহজাদপুর পাকবাহিনীর হাতে পতন হয়।

পাকহানাদার বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে মাদারীপুর শহরের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্যস্থল ছিল সংগ্রাম কমিটির কন্ট্রোল রুম মিলন সিনেমা হল। এ হামলায় কেউ নিহত না হলেও অনেক নিরীহ মানুষ আহত হয়।

চট্টগ্রাম নোয়াখালী ও কুমিল্লা এই তিনদিক থেকে পাকবাহিনী একযোগে ফেনী আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে পাকসেনারা ফেনী দখলে ব্যর্থ হয়।

রাজশাহী থেকে সড়কপথে পাকবাহিনীর একটি কনভয় ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় নওগাঁ প্রবেশ করে। রাতে পাকবাহিনীর নির্দেশমত পাকিস্তানকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করা হয়। শান্তি কমিটির দাপট ও অত্যাচারে জ্বলে ওঠে নওগাঁ শহর ও তার চারপাশের অঞ্চল।

নওগাঁ শহরের লর্ড লিটন ব্রিজের পূর্ব পাশে চকবাড়িয়া গ্রামের ১৯ বছর বয়স্ক আকালু পাকিস্তান বাহিনীর সামনে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান উচ্চারণ করতে করতে ঘাতকদের গুলিতে শাহাদাৎ বরণ করেন। অন্য এক ঘটনায় নওগাঁ নাট্য অঙ্গনের বালা সাহা (৮০) তাঁর নিজ বাসভবনে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।
ময়মনসিংহের মধুপুরে পাকবাহিনী ব্যাপক শেলিং শুরু করে। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পিছু হটে হালুয়াঘাটে একত্র হয় ও অবস্থান নেয়।

১১ নং সেক্টর-এনাজমুল হক তারা, তফাজ্জল হোসেন,এম.এ. আলম ও নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে চারটি সাব সেক্টর বিভক্ত করা হয়।

চট্টগ্রামের দোহাজারীতে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে দখল প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ম্যাকমোহন ক্যানবারায় বলেন, জীবনহানির জন্য আমরা নিশ্চয়ই দুঃখিত। আমরা চাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করুন, যত শিগগির সম্ভব তিনি বেসামরিক কতৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবেন এবং তা প্রতিষ্ঠা করবেন। আমরা আশা করি আর কোন জীবন হানি হবে না এবং পাকিস্তানের পার্লামেন্টে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গকে ক্ষমতা দেয়া হবে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব বাংলার মুক্তি সংগ্রাম পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার হতে পারে না। অবিভক্ত ভারতের ১০ কোটি মুসলমান যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান তাকে অবজ্ঞা করেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের এই মৌলিক প্রস্তাবটিকে অবজ্ঞা করে বিগত ২৩ বছর ধরে তারা পূর্ব বাংলাকে তাদের কালোনী করে রাখে। এই সংগ্রাম বীর বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম। শোষণ থেকে মুক্তি ও হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াই। মওলানা ভাসানী নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিশ্বের সকল শান্তিকামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি দলমত, পেশা, বয়স নির্বিশেষে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে জামালপুর শহরে প্রথম আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। পরবর্তীকালে বদর বাহিনী জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব বাহিনীতে রূপ নেয়। বদর বাহিনীর নিষ্ঠুরতা সীমাহীন। এর চিত্র ফুটে উঠে তাদের এক পত্রিকার লেখায়- ‘আলবদর একটি ন্যায়! একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী, আলবদর সেখানে। যেখানেই দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।’
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রতিবেদন।
সম্পাদনাঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ফান্ড আওয়ামী ঘরানার দুই ইয়েলো...

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড" বা অগ্রগামী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি...

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...