সাম্প্রতিক শিরোনাম

উত্তাল ২৩ মার্চঃপ্রথমবারের মতো সারাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন হয়-মোহাম্মদ হাসান

উত্তাল ২৩ মার্চ ১৯৭১ঃ এদিনে প্রথমবারের মতো সারাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা ও চলমান আন্দোলনে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ধানমণ্ডির বাসভবনে নিজ হাতে পতাকা উত্তোলন করেন। সেখানে তখন লাখো জনতা সম্মিলিত কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন “জয় বাংলা, বাংলার জয়” গানটি। এসময় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন বাংলার পতাকা বিতরণ করা হয়।
ঢাকার সেক্রেটারিয়েট, প্রধান বিচারপতি ভবন, হাইকোর্ট, ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বেতার ও টেলিভিশন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সব সরকারি-বেসরকারি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা
ছাত্রলীগ এই দিনে পল্টনে সমাবেশ করে। সেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জয়বাংলা বাহিনি মার্চ পাসট করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সালাম গ্রহন করেন।
আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্যদিয়ে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি সমবেত কন্ঠে পরিবেশিত হয়।
পাকিস্তান দিবসে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দফতর ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী আজ তিনি সারা বাংলায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।
অসহযোগ আন্দোলনের ২২তম দিবসে মুক্তি পাগল মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিয়ে এগিয়ে যায়।
ঢাকায় সেক্রেটারিয়েট ভবন, হাইকোর্ট ভবন, পরিষদ ভবন, ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা বেতার ভবন, ঢাকা টেলিভিশন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোন ভবন, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, প্রধান বিচারপতি ও মুখ্য সচিবের বাসভবন-সহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা তোলা হয়। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে ছাত্র-জনতা তা উপেক্ষা করে পতাকা তোলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ আজ ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালণ করে। এ উপলক্ষে রাজধানী গণআন্দোলনের প্রবল জোয়ারে পরিণত হয়।
রাজপথে লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ‘জয় বাংল’ শ্লোগানে সারাদিন রাজধানী প্রকম্পিত করে। জনতা ভুট্টো ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। জনতা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ‘মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনীর’ আনুষ্ঠানিক কুজকাওয়াজও মহড়া আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। কুজকাওয়াজ এবং মহড়া শুরুতে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি এবং সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। এ সময় রেকর্ডে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাজানো হয়।
জয় বাংলা বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁরা সেখানে অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ শেষে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার মানুষ কারো করুণার পাত্র নয়। আপণ শক্তির দুর্জয় ক্ষমতা বলেই আপনারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। বাংলার জয় অনিবার্য।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ ও ড.কামাল হোসেন প্রেসিডেন্টে উপদেষ্টা বিচারপতি এ.আর. কর্নেলিয়াস, লে.জেনারেল পীরজাদা, এম.এ.আহমেদ কর্নেল হাসানের সঙ্গে দুপুর এবং বিকেলে দুই দফায় দুইঘন্টা স্থায়ী বৈঠকে মিলিত হন।
বিকেলে জাতীয় পশ্চিম পাকিস্তানি পরিষদের ষংখ্যালঘিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে প্রধান,পাঞ্জাব কাউন্সিল প্রধান ও বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই দেশের মঙ্গলের জন্য সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়ে যাক। এ সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনারা ভালো কামনা করুন, কিন্তু খারাপের জন্যও প্রস্তুত থাকুন।
বিকেলে রংপুরের সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী ও গ্রাসবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সৈয়দপুর শহরের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে কারফিউ জারি করে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সেনানিবাসে গিয়ে সেনাকর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। তিনি সৈনিকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...