উত্তাল ২৮ মার্চ ১৯৭১ঃ এইদিন জল-স্থল- আকাশ থেকে বহুমাত্রিক আক্রমনে বাঙালী সেনারা পিছিয়ে গেলে পাকিস্তান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায় চট্টগ্রাম। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাঙালী সেনা এবং যশোর ও বরিশালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক সাফল্য পায়। অন্যদিকে লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিক্ষোভ সারাবিশ্বে পৌছে দেয় যুদ্ধের বার্তা।
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন ৪ ছাত্রনেতা, যারা পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ মুক্তিবাহিনীর জন্য রসদ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
এই চার তরুণ হলেন- বশুরুজ্জামান চৌধুরী, জাফর আহমদ, দীপক বড়ুয়া ও মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ এর ইতিহাস মতে, কাজীর দেউড়ী স্টেডিয়ামের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নৌ ভবনে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৭ মার্চ ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন ও মোছলেম উদ্দিনকে আটক করার পর নির্যাতন চালায়। এরপর ২৮ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল বিমান অফিসের পেছনের গলি দিয়ে মেথর পট্টি হয়ে এবং লাভ লেইন দিয়ে ডিসি হিলে উঠে অবস্থান নেয়। বশুরুজ্জামান সহ চারজন গাড়ি নিয়ে আন্দরকিল্লা থেকে মোমিন রোড হয়ে চেরাগী পাহাড়ের সামনে আসতেই হায়েনারা গুলি করে গাড়ি থামিয়ে দেয়। এরপর গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় চার ছাত্রনেতাকে। তাদের বুকের তাজা রক্তে ভেসে যায় রাজপথ।
বশরুজ্জামানের বাবা ব্যবসায়ী নুরুজ্জমান চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থক। স্বাধীনতার উত্তাল দিনগুলোতে বশরুজ্জমানদের পাথরঘাটার বাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আস্তানা। ‘জুপিটার হাউস’ বাড়িটি উন্মুক্ত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। তার ভাই বশিরুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসায়ী ছিলেন। অপর ভাই আখতারুজ্জামান চৌধুরী ৭০ সালের নির্বাচনে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে নির্বাচিত এমপিএ ছিলেন। আখতারুজ্জামান পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আরো চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জাফর আহমদের বাড়ি মাদারবাড়ি এলাকায়। তিনি ছিলেন সিটি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা। কক্সবাজারের উখিয়ার দীপক বড়ুয়া থাকতেন এনায়েত বাজার এলাকায়। তিনি ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন (এনএসএফ) নামে একটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এসময় দোলন গ্রুপের সঙ্গেও যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি কাজ করছিলেন। নাইট কলেজের ছাত্র মাহবুবুল আলম চৌধুরীর বাড়ি ফটিকছড়ি। তিনিও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন।
স্বাধীনতার ঘোষণার সময় চট্টগ্রাম ও আশাপাশের অধিকাংশ এলাকা বাঙালি সেনাদের দখলে থাকলেও ২ দিনের ব্যবধানেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। চট্টগ্রামের দক্ষিণ থেকে বেলুচ রেজিমেন্ট, উত্তর থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অগ্রসরমান পাকসেনাদের হামলায় পিছিয়ে আসার কৌশল নিতে হয় বাঙালীসেনাদের। তার সঙ্গে বঙ্গোপসাগর ও আকাশ থেকে বোমাবর্ষণে ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম চলে যায় পাকিস্তানীদের নিয়েন্ত্রণে।
তবে যশোর অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যায় দুর্বারগতিতে। তাজউদ্দিন আহমদ, ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলামরা পশ্চিমবঙ্গের দিকে ছুটে পথে পথে দেখেন যুদ্ধের প্রস্তুতি। ড. রেহমান সোবহান উল্টোপথে পূর্বে ত্রিপুরামুখী পথে দেখেন, সেনা ইউনিট নিয়েও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকসেনাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে খালেদ মোশাররফ চোরাগুপ্তা গেরিলা হামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রাখেন নিজের হাতে।
আন্ডরগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিতরা বরিশালের পেয়ারাবাগান থেকে যুদ্ধ শুরু করে ২৮ মার্চ থেকে, পুরো মুক্তিযুদ্ধে তারা ভারত যায়নি। এমন গোপন দলগুলো নক্সালকর্মীদের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে ২৮ মার্চ থেকে, অস্ত্রের যোগানও আসে সেখান থেকেই।
আন্তর্জাতিকভাবে এদিন বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনে বড় ঘটনা ঘটে লন্ডনে। গণহত্যার বদলা নেয়ার প্রত্যয়ে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালী। এতে অংশ নেন বিদেশীরাও।
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ। রংপুরবাসীর কাছে অবিস্মরণীয় একটি দিন। স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিবাদী রংপুরবাসী ৭১`র এই দিনে লাঠিসোটা, তীর-ধনুক নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে জন্ম দিয়েছিল এক অনন্য ইতিহাসের।২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাত্র একদিন পরই রংপুরবাসী ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল সে পথ ধরেই সূচিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রাম। একাত্তরের তিন মার্চ কিশোর শংকুসহ তিনজন শহীদ হওয়ার পর রংপুরের স্বাধীনতাকামী মানুষ সংগঠিত হতে থাকে। প্রস্তুতি গ্রহণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের। এরই অংশ হিসেবে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও এর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বাধীনতাকামী মানুষ।দিনক্ষণ ঠিক হয় ২৮ মার্চ। ঘেরাও অভিযানে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়ে রংপুরের বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঢোল পেটানো হয়। আর এ আহবানে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারদিকে। যার যা আছে তাই নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয় এ অঞ্চলের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র, কৃষক, দিনমজুরসহ সকল পেশার সংগ্রামী মানুষ।রংপুরের আদিবাসীরাও তীর-ধনুক নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে। এক্ষেত্রে মিঠাপুকুর উপজেলার ওরাঁও সম্প্রদায়ের তীরন্দাজ সাঁওতালদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তীর-ধনুক, বল্লম, দা, বর্শা নিয়ে তারা যোগ দিয়েছিল ঘেরাও অভিযানে।এদিনে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটানা মেশিনগানের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে চারদিকে তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় মৃতদেহ। সে এক মধ্যযুগীয় বর্বরতায় পুরো এলাকার বাতাস মুমূর্ষু মানুষের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে। কয়েক হাজার নিহত মানুষের মৃতদেহ এক জায়গায় জড়ো করে পুড়িয়ে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা।
তথ্য সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনা।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment