সাম্প্রতিক শিরোনাম

ওপার থেকে ভিক্ষা চাই – মতি নন্দী


গত ছ’সাত মাস ধরে বােমা ফাটার শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছি আর বােমা ফাটার শব্দে জেগেছি। নিশ্চিত জানি, আজ এই নববর্ষের দিনেও তাই হবে। আজও দেখব, পড়ার অভ্যাস ভুলে যাওয়া ছেলেগুলাে পাংশু মুখে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে চমকে চমকে উঠছে অপরিচিত লােককে সাদা পােষাকের পুলিশ ভেবে। আজও খবরের কাগজ খুলে দেখব ছােরা, বােমা ও গুলিতে নিহতের সংখ্যা দশ, বারাে কিংবা এগারাে। আজও গা ছমছম করবে রাস্তায় তিন-চারটি ছেলের মুখােমুখি হলেই।
.
স্কুল জ্বলছে, পরীক্ষা বন্ধ, অনুত্তীর্ণেরা- উত্তীর্ণ হচ্ছে রাস্তায় ফুটবল-ক্রিকেট বন্ধ; মৃত মনীষীরা লজ্জিত; দল বেঁধে হত্যা ঘটেছে দিব্য লােকে রাজপথে, স্কুল কলেজের ক্লাসে; অলিতে গলিতে লাশ পড়ছে; হাইকোর্টের বিচারক থেকে রিক্সা চালক পর্যন্ত আততায়ীর ছােয়ার নাগালের মধ্যে। সারা পশ্চিম বাংলায় এখন শবাগারের গন্ধ এবং নৈঃশব্দ। | অথচ এখনি হয়তাে বেতারযন্ত্রে বাজবে “আমার সােনার বাংলা, আমি তােমায় ভালবাসি”। শুনতে শুনতে বুকের একটা জায়গা থেকে ঝর্ণা ঝরবে। এই ধারায় ক্লেদাক্ত বিবেককে পরিষ্কার করার জন্য, ওপার বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে চীৎকার করে উঠব, সাহায্য পাঠাতে ব্যস্ত হব।

উদাত্ত দাবী জানাব, অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবার। | কিন্তু ১৩৭৭ এ, এপার বাংলায় এমন কোন কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হলনা, এমন কোন বিশাল প্রয়াস অনুষ্ঠিত হল না, যা কাপুরুষতার দূর্গ ভেঙ্গে আমাদের মুক্তির পথে টেনে নিয়ে যায়। অথচ আমরা নির্ভীক হব বলে জনে জনে ফিসফাস পরামর্শ করেছি, বিচ্ছিন্ন ক্ষীণ কণ্ঠে আপত্তি জানিয়েও বজ্রনির্ঘোষ সমর্থন না পেয়ে ভয়ের কাছে মাথা নত করেছি, অতঃপর চতুর যুক্তির বর্ম এঁটে আত্মরক্ষা করেছি নিষ্ক্রিয় থেকে।


কিন্তু আমার সােনার বাংলা এপারেই। এপারের জল-বায়ু-মাটি আর মানুষ দিয়েই গড়া আমার বাংলা। এই বাংলায় ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে সংগ্রাম করার কথা ছিল তা আমরা করিনি। ওপার বাংলার হাজার জীবন লুটিয়ে জীবনকে ভালবাসার যে বিরাট অনুষ্ঠান চলছে, তাকে সমর্থন জানানাের নৈতিক অধিকার থেকেও মনে হয়, স্বভাবতই আমরা চ্যুত। জীবন স্বাধীনতা স্বদেশ তাে সমার্থক তিনটি শব্দ। মহৎ এবং গভীর এবং বিশালকে স্পর্শ করতে গেলেও কিঞ্চিৎ যােগ্যতার সঞ্চয় থাকা চাই। সেই যােগ্যতা কিছুটা বিবেক, কিছুটা ভালবাসার ক্ষমতা আর কিছুটা আত্মসম্মানবােধের দ্বারা গঠিত।

সঞ্চয়ের ভাণ্ডার কি রিক্ত? হৈ হৈ করে ছুটির মেজাজে সীমান্তে যুদ্ধ দেখতে যাওয়া আর ফেরার কালে লাউ কুমড়াে মাছ হাতে ফেরা, এতে কেন অবাক হব? বাংলা ভাষাকে রক্ত দিয়ে মহার্ঘ্য করল যে একুশে ফেব্রুয়ারি, উনিশ বছর পরও কি তাকে বুকে তুলে নিতে পেরেছি? তাহলে ইংরাজি নবিশরা এখনাে সন্ত্রম উদ্রেকারী গােষ্ঠীরূপে পরিগণিত হয় কেন? | রিক্ত? অসম্ভব। আসলে আত্মগ্লানির কালিমায় মলিন আমাদের চৈতন্য। সমর্থন ও সাহায্য দানের তুষ্ট হাত বাড়িয়ে দিয়ে নয়, বিনীত ভিক্ষুকের দীন হতে এগিয়ে দিয়ে ওপার থেকে আজ ভিক্ষা নিতে হবে প্রবলভাবে জীবনকে ভালবাসার ক্ষমতাটিকে। সেই ভালবাসার শিকড় এপার বাংলার মাটিতে নামুক। আমাদের হৃদয়ে মহীরূহ জন্ম নিক।

১৫ এপ্রিল, ১৯৭১

সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খন্ড -০৭

সর্বশেষ

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক পত্রে পুতিন বলেন ‘রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বের...

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, আল খারজ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ও আল কাসিম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন...