খান-এ-সবুর, যে যাই বলুক না ক্যানো, আদতে খুলনার মহানায়ক ছিলেন। খুলনা বাংলাদেশের রাজাকারদের টরটুগা (অঘোষিত রাজধানী বিশেষ)।
খুলনা মহানগরীর অন্যতম প্রধান সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে এই মহানায়কের নামে, এমনকি সবচেয়ে জনপ্রিয় মহাবিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে তাঁর অতিঘনিষ্ঠ সহযোগীটির নামে (সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ)।
আম্রিকী কবি এলেন গিন্সবার্গের “সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড” কবিতাটি যারা পড়েছেন, হয়তো শুনলে আশ্চর্য হবেন যে যশোর রোডের যে অংশটি খুলনা মহানগরীর প্রানকেন্দ্র হতে প্রবাহিত হয়েছে, তার নাম বদলে নামকরণ করা হয়েছে খান এ সবুর রোড। আশ্চর্য্য এই কারণে যে গিন্সবার্গ এই কবিতাটি লিখেছিলেন যশোর রোড ধরে বয়ে আসা নিরাশ্রয়, অসহায় আর সন্ত্রস্ত মানুষের করুন অবস্থা দেখে আর সবুর খান ছিলেন সেই ব্যক্তিটি যিনি যুদ্ধের ঐদিনগুলিতে যশোর রোডের অপর প্রান্তে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করছিলেন পাক সেনাবাহিনীর সহযোগিতায়, বিশেষত হিন্দু ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের জন্য!
কিন্তু শুধু এইনা খুলনা মহানগরীর বেশকিছু বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আজো সবুর খানের নামে রাখা। ২০১৫ সালে উচ্চআদালতের একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও তা বদলানো হয়নি, এটাই স্বাধীন দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সবুর খানের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
১৯০৫ সালে বড়লাট প্রভু কার্জন যখন বংগভঙ্গের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের সৃষ্টি করেন খুলনা পশ্চিমবাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সেটা ছিলো আব্দুস সবুর খানের জন্মের মাত্র তিন বছর আগে, অর্থাৎ জন্মসূত্রে তিনি হয়ে দাঁড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের লোক।
অথচ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময়ে খুলনা কিনা এসে পড়লো পূর্ব বাংলায়! বলা হয়ে থাকে যে এই আশ্চর্য্যসাধন সম্ভব হয়েছিলো আমাদের প্রিয় মহানায়ক আব্দুস সবুর খানের বদৌলতে। যিনি ততোদিনে মুসলিম লীগের জেষ্ঠ অবস্থানে পৌছেছিলেন আর মুর্শিদাবাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁর নিজভূম খুলনাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন এবং বহু আলোচনা আর সমঝোতার পর, পেয়েওছিলেন।
“হিন্দুরাষ্ট্রের” হাত থেকে নিজের জন্মভুমি (সে আমলে বাগেরহাটও খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিলো) রক্ষার পর বেশ কিছুটা সময় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোনার পাকিস্তান বিনির্মানে, মুসলিম লীগের প্রাদেশিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে ক্রমে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ ও অবশেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পর্যন্ত পৌছাতে তাঁর অনেকটা সময় ব্যায় হয়।
যাহোক ১৯৬৪তে পাকিস্তানের ‘ধর্মনিরপেক্ষ” লৌহমানব আইয়ুব খানের উষ্কানিতে পূর্ব বাংলায় শুরু হওয়া মহান হিন্দু বিতাড়ন কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বিহারী সংখ্যাগরিষ্ঠ ২০ হাজার জনশক্তির এক সুবিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন যাঁরা সেই জামানায় ৩শত আগ্নেয়াস্ত্রে বলিয়ান হয়ে পরবর্তী কয়েকদিনে আশেপাশের এলাকাগুলোতে প্রায় ৬০০ হিন্দুকে হত্যা করেন, এছাড়া চলে ব্যপকহারে হিন্দুজমি অধিগ্রহণ, বলপূর্বক ধন্মন্তরিকরণ, হিন্দুনারী ধর্ষণ ও হিন্দু গৃহে অগ্নিসংযোগ।
এই সময়ের লব্ধজ্ঞানই তাঁকে ১৯৭১এ আবারো উদ্বুদ্ধ করে, যখন তিনি খুলনা অঞ্চলে শক্তিশালী চন্দ্রবাহিনী (আল-বদর) গঠন করেন। ইসলাম ও পাকিস্তান বাঁচানোর দুর্বার প্রচেষ্টায় আলবদর বাহিনীর সেসময়কার কর্মকাণ্ডের স্মৃতি জড়িয়ে আছে গল্লামারী বধ্যভূমিতে ও খুলনা অঞ্চলের অন্যান্য জায়গায়।
একটি চিত্তাকর্ষক ব্যাপার হচ্ছে গল্লামারীতে অবস্থিত পাকিস্তান বেতারকেন্দ্র, যেখানে ইসলামবিরোধী “মুক্তিদেরকে” ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন ও হত্যা করা হতো, সাবেক সেই বেতার ভবনটিই বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। বলা চলে সবুর খানের কীর্তির ছাপ মহানগরী খুলনার সর্বত্র।
স্বাধীনতার পর সেনাশাসক জিয়ার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কালে তিনি বাংলাদেশে পুনরায় মুসলিমলীগ গড়ে তোলেন এবং খুলনার যে তিনটি আসনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হন, তারই একটিতে (খুলনা-২) আজপর্যন্ত ‘গণতন্ত্রের মাতা’ বেগম খালেদা জিয়া বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
এই পুলকের কোন শেষ নেই, হুমার ভাষায়- “এই আনন্দের জন্ম এই পৃথিবীতে নয়, তার বাইরে কোথাও!”
সংগৃহীতঃ সংবাদ শিরোনামে খান-এ-সবুর-
কুখ্যাত রাজাকার সবুর খান পলাইয়াছে
(ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ সালের পত্রিকার সংবাদ, দৈনিক বাংলা)
কুখ্যাত রাজাকার সবুর খানের সম্পত্তি ও মালামাল ক্রোক
(ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালের পত্রিকার সংবাদ, দৈনিক বাংলা)
দালাল সবুর গ্রেফতার
(মার্চ, ১৯৭২ সালের পত্রিকার সংবাদ,দৈনিক বাংলা)
দালাল সবুরের বিচার শুরু
(জুন, ১৯৭২ সালের পত্রিকার সংবাদ,দৈনিক বাংলা)
সবুর খানের মুক্তি
(ডিসেম্বর ১৯৭৩ এর পত্রিকার সংবাদ, ইত্তেফাক ও দৈনিক বাংলা)
বর্ষীয়ান পার্লামেন্টিরিয়ান সবুর খান হাসপাতালে ভর্তি
(ডিসেম্বর, ১৯৭৩ সালের পত্রিকার সংবাদ দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাক)
জনতার উদ্দেশ্যে ভাষন দিচ্ছেন প্রখ্যাত পার্লামেন্টিরিয়ান সবুর খান
(ডিসেম্বর, ১৯৭৮ সালের পত্রিকার সংবাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা)
প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সবুর খান মুসলিম লীগের কনভেনার হয়েছেন
(এপ্রিল,১৯৮১ সালের পত্রিকার সংবাদ দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাক)
প্রখ্যাত, বর্ষীয়ান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সবুর খান মৃত্যবরণ করেছেন
(জানুয়ারী ১৯৮২ সালের পত্রিকার সংবাদ, দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাক)
যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সবুর খানকে জাতীয় কবরস্থানে দাফন
(জানুয়ারী, ১৯৮২ সালের পত্রিকার সংবাদ, দৈনিক বাংলা ও ইত্তেফাক)
https://m.bdnews24.com/amp/en/detail/bangladesh/1063923
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment