বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ দৌলার ২৯২তম জন্মদিন আজ ১৯ সেপ্টেম্বর। তার পুরো নাম- নবাব সিরাজ উদ দৌলা শাহ কুলি খাঁ মির্জা মোহাম্মদ হায়বত জঙ্গ বাহাদুর।
পলাশীর আম্রকাননে তার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়। সিরাজউদ্দৌলা তার নানা নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে ২৩ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাবের আসনে বসেন।
প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ২৩ জুন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে লর্ড রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাহিনীর কাছে পরাজিত হন। রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার জন্ম ১৭২৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। তিনি ছিলেন বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের নাতি। আলীবর্দী খানের কোনো পুত্র ছিল না। তার ছিল তিন কন্যা। তিন কন্যাকেই তিনি নিজের বড় ভাই হাজী আহমদের তিন পুত্র নওয়াজিশ মুহাম্মদের সঙ্গে বড় মেয়ে ঘসেটি বেগমের, সাইয়েদ আহমদের সঙ্গে মেজ মেয়ে এবং জয়েনউদ্দিন আহমদের সঙ্গে ছোট মেয়ে আমেনা বেগমের বিয়ে দেন।
আমেনা বেগমের দুই পুত্র ও এক কন্যা। পুত্ররা হলেন মির্জা মুহাম্মদ (সিরাজউদ্দৌলা) ও মির্জা মেহেদী। আলীবর্দী খান যখন পাটনার শাসনভার লাভ করেন, তখন তার তৃতীয়া কন্যা আমেনা বেগমের গর্ভে মির্জা মুহাম্মদ (সিরাজউদ্দৌলা)-এর জন্ম হয়। এ কারণে তিনি সিরাজের জন্মকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে আনন্দের আতিশয্যে নবজাতককে পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
সিরাজ তার নানার কাছে ছিল খুবই আদরের, যেহেতু তার কোনো পুত্র ছিল না। তিনি মাতামহের স্নেহ-ভালোবাসায় বড় হতে থাকেন।
১৭৪৬ সালে আলীবর্দী খান মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে কিশোর সিরাজ তার সঙ্গী হন। আলীবর্দী সিরাজউদ্দৌলাকে বালক বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।তারা জগৎ শেঠের মাধ্যমে মীরজাফরকে মসনদে বসানোর চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে ফেলে। পরিকল্পনায় আরো যোগ দেন ঘসেটি বেগম, মীরজাফরের পুত্র মীরন, জামাতা মীর কাশিম, রাজা রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভ, মীর খোদা ইয়ার খান লতিফ প্রমুখ।
ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ১৭৫৭ সালের ৫ জুন মীর জাফরের একটি গোপন চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার ফসল ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ। চুক্তি সম্পাদনের পরই রবার্ট ক্লাইভ পলাশীর প্রান্তরে সৈন্য সমাবেশ ঘটান। সিরাজউদ্দৌলাও তার সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন।
কিন্তু এ সময় মীর মদনের পরামর্শ উপেক্ষা করে কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথের বিনিময়ে মীরজাফরকে পূর্বপদে বহাল করেন। ইংরেজদের সঙ্গে গোপন চুক্তির বিষয়ে সিরাজউদ্দৌলা অবগত হলেও মীরজাফরের অনুগত সেনাদের সংখ্যা ও যুদ্ধাস্ত্রের পরিমাণ বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এর ফলে সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্তে সিরাজউদ্দৌলা সাহসিকতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। সিরাজউদ্দৌলা কিছু বিশ্বস্ত অনুচর নিয়ে রাজধানীতে ফিরে যান।
কিন্তু ২৯ জুন তাকে পলাতক অবস্থায় স্ত্রী-কন্যাসহ আটক করা হয়। এরপর ৩ জুলাই মীরজাফরের পুত্র মীর সাদিক আলী খান মীরনের নির্দেশে মুহাম্মদী বেগ সিরাজউদ্দৌলকে হত্যা করেন।
উল্লেখ্য যে, অনাথ মুহাম্মদী বেগ আলীবর্দী খানের স্ত্রী শরফুন্নেসার ঘরে লালিত-পালিত হয়েছিলেন এবং প্রচুর ধনসম্পদ দান করে তিনি তাকে বিত্তশালী করেছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যও অস্তমিত হয়।