স্বাধীনতাকামীদের ধ্বংস করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে চতুর্দিক থেকে জাল বিস্তার করে। জেলা-মহকুমা-পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে নির্যাতনমূলক কাজসহ প্রচারণা চালাতে থাকে। কেন্দ্রীয় শান্তিকমিটির আহবায়ক খাজা খয়েরউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস রিলিজে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। এ প্রেস রিলিজের মূল লক্ষ্য ছিলো সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে উগ্র মনোভাব জাগ্রত করা; যাতে করে তারা নব উদ্যোমে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। প্রেস রিলিজে বলা হয়, তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারা সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তারা পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছে। পাকিস্তানপ্রিয় নাগরিকদের হয়রানি করছে। লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে চালাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হিংসাত্মক কাজ। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে ভেঙে দেয়ার জন্যে মিল-কারখানা এবং রাস্তাঘাট ধ্বংস করছে। পক্ষান্তরে আমাদের বীর সেনাবাহিনী অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা-বিধানে সচেষ্ট রয়েছে। সেনাবাহিনী দেশের শত্রুদের নির্মূল করে পাকিস্তানের অখ-তা বজায় রাখবেই। সুতরাং আমাদের উচিত সেনাবাহিনীর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পতাকা হাতে তাদের অভিনন্দন জানানো এবং দুষ্কৃতিকারী দমন অভিযানে শামিল হওয়া। প্রেস রিলিজে নিজ নিজ এলাকায় দেশপ্রেমিকদেরকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
মওলানা ভাসানি বাংলাদেশে পাক বাহিনীর নির্যাতন বন্ধ ও বাংলাদেশকে স্বীকৃতির জন্য ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক দল প্রধান ও ৩টি বিশ্ব সংস্থা প্রধানের নিকট তার বার্তা দিয়েছেন। দেশ গুলি হল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন (২ টি), সোভিয়েত ইউনিয়ন(৩টি), ফ্রান্স, যুগোস্লভিয়া, মিশর। সংস্থা গুলির মধ্যে জাতিসংঘ, আরব লীগ, আফ্রিকান ঐক্য সংস্থা। উল্লেখ্য ওআইসি প্রধানের নিকট কোন বার্তা দেননি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর তথ্য মতে, লন্ডনে আইরিশ শ্রমিক দলের বৈদেশিক বিষয়ক কর্মকর্তা ড. কোনার ক্রুইজ বলেন, পূর্ববঙ্গের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা সাম্রাজ্যবাদী ও দমনমূলক যুদ্ধের এক দৃষ্টান্ত।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মুক্তাঞ্চল থেকে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট, গণচীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন লাই, সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ, চেয়ারম্যান কোসিগিন ও প্রধানমন্ত্রী পদগর্নি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পম্পিডো, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ, যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট টিটো, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, আরব লীগের মহাসচিব আবদেল খালেক হাসুনা ও আরব ঐক্য সংস্থার মহাসচিব দায়লো টেলির কাছে প্রেরিত পৃথক পৃথক বার্তায় অবিলম্বে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের জেনারেল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আবেদন জানান। তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বর্বরতা অবলোকনের জন্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠানো ও বাংলাদেশের জনগণকে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের লড়াইয়ে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের জন্যও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আবেদন জানান।
বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্ব ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের কুটনৈতিক মিশনের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
মেজর ইমামুজ্জামান-এর নেতৃত্বাধীন বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্য লাকসাম ত্যাগ করে কুমিল্লার মিয়ার বাজারে চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরী করে।
২০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল যশোরে পাকবাহিনীর নাভারন ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে ১৫ জন পাকসেনা আহত ও ১০ জন নিহত হয়।
হিলিতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনী হিলি দখল করে নেয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিরক্ষা ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনী আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে কিশোরগঞ্জের পতন হয়।
পাকবাহিনীর সৈন্যরা ব্যাপক গোলাবর্ষণ দ্বারা দিনাজপুরের পঞ্চগড়শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বহু নিরীহ মানুষকে হতাহত করে এবং পঞ্চগড় বাজারটি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়ে এক শ্মসান অবস্থা কায়েম করে।
পাক হানাদার বাহিনী অতি প্রত্যুষে ফরিদপুরের গোয়ালন্দঘাট আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তুমুল সংঘর্ষের পর সকাল নয়টায় গোয়ালন্দঘাট দখল করে। একই সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে তারা ছত্রী বাহিনী অবতরণ করে।
আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেদীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানো এক বাণীতে পাকিস্তান বাহিনীর কার্যক্রমের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানান।
ঢাকায় মুসলিম লীগ নেতা খান এ. সবুর সামরিক কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতার জন্যে নিজ নিজ এলাকায় ভিজিলেন্স কমিটি গঠনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, শত্রুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সব ধরনের সাহায্য প্রদান বর্তমানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও সংগ্রামের নোটবুক।
সম্পাদনাঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment