রণাঙ্গনে ১২ এপ্রিলঃমুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা-মোহাম্মদ হাসান

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ১২ এপ্রিল ১৯৭১ঃ দিনটি ছিল সোমবার। রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। উপ-রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনা ও সমম্বয় সাধন করবেন। খন্দকার মুশতাক আহমেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিসভার অপর সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান। পাকবাহিনী ট্যাংক এবং অন্যান্য ভারি অস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাবরা ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি কোম্পানি ও একটি সাপোর্ট প্লাটুন সম্মিলিতভাবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর এলাকাতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর বড় ধরনের আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আরব আলী। কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে বেশ কিছু পাকসেনা নিহত হলেও শেষ পর্যন্ত পাকসেনাদের ব্যাপক আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে। ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পুরো বাহিনী কালুরঘাট থেকে রাঙ্গামাটি চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা বুহ্য গড়ে তোলে। মহালছড়িতে ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়। ভোরবেলা পাকবাহিনী আর্টিলারি সাপোর্টে যশোরের ঝিকরগাছায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ্যে ব্যাপক হামলা চালায়। প্রচ- যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর দু’জন ও বিএসএফ বাহিনীর একজন নিহত হয়। ইপিআর বাহিনী পুনরায় বেনাপোলের কাগজপুকুর নামক স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে। পাক সৈন্যদের একটি দল হাজীগঞ্জের ওপর দিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে এগিয়ে আসে এবং সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। সংসদ সদস্য ডা. জিকরুল হক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী তুলশীরাম আগারওয়ালা, ডা. শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জমান, ডা. ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ, কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালাসহ গ্রেফতারকৃত সৈয়দপুরের প্রায় ১৫০ জন স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ১৯ দিন নির্মম অত্যাচার চালিয়ে অবশেষে রংপুর সেনানিবাসের পশ্চিম পার্শ্বের উপ-শহরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকসেনারা পুনরায় গোলাবর্ষণ করে। পাকসেনাদের মর্টার থেকে গোলাবর্ষণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এ যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নাটোরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকসেনারা ব্যাপক শেলিং-এর মাধ্যমে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে বানেশ্বর (রাজশাহী) গিয়ে ডিফেন্স নেয়। পাকবাহিনী তিস্তা দখলের লক্ষ্যে তিস্তা পুলে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ্যে ভারি অস্ত্রের সাহায্যে তিনদিক থেকে আক্রমণ চালায়। কলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডে বাংলাদেশ বাহিনীর সদরদফতর কার্যক্রম শুরু করে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম.এ রব এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে খন্দকারকে যথাক্রমে চীফ অব স্টাফ এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিয়োগ করা হয়। ঢাকায় খাজা খায়ের উদ্দিন ও জামায়াত নেতা গোলাম আযম জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম থেকে শান্তি কমিটির মিছিল বের করে। পাক সেনাবাহিনীর সাফল্যের জন্য মোনাজাত পরিচালনা করেন জামায়াতের আমির গোলাম আযম। তিনি ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনদের মোকাবেলা করতে জেহাদের ডাক দেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত এক আবেদনে অবিলম্বে পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের জন্য আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, কোন সরকারেরই অস্ত্র ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনসাধারণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অধিকার নেই। ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়া সরকারি বিভাগ, স্বশাসিত, আধা-স্বশাসিত সংস্থা সমূহের সকল কর্মচারীকে সর্বশেষ ২১ এপ্রিলের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। নির্দেশে আরও বলা হয়, এরপর অনুপস্থিত কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। বেতার ভাষণে সবুর খান একটুও দয়া না দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগিতাকারীদের খতম করার আহ্বান জানায়। এমনকি সন্দেহজনক যে কোন লোকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলে। মুসলিম লীগ সভাপতি শামসুল হুদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গণহত্যার নায়ক টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশী কূটনীতিকের বরাত দিয়ে একাত্তরের এই দিনে ‘টাইম’ ম্যাগাজিন পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ ও গণকবরের প্রতিবেদনে প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই অভিযান যে গণহত্যায় রূপ নিয়েছে, তাতে কোন সন্দেহই নেই’, বললেন এক বিদেশী কূটনীতিক। আরেকজন পশ্চিমা কূটনীতিক মন্তব্য করলেন, ‘এ এক অকল্পনীয় রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মায়াদয়া কিছুই নেই।’ পাকিস্তানের এই তিক্ত সংঘাতের প্রথম দফা শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। অবধারিত ভাবেই এই দফায় জিতেছে সুসজ্জ্বিত পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। ৮০ হাজারেরও বেশি পাঠান ও পাঞ্জাবী খানসেনা নিয়ে গঠিত এই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কূটনীতিক ও উদ্বাস্তুদের মাধ্যমে খবর আসছে, চোরাগোপ্তা বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমেও হত্যাকা-ের কথা প্রকাশ হচ্ছে আস্তে আস্তে। মোট মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েও যেতে পারে বলে অনেক রিপোর্টে খবর আসছে। এই দিনে দৈনিক হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় ‘বাস্তুহারাদের মুখে আর্মি বর্বরতার কাহিনী’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার সকালে পাকিস্তানী বাহিনী ঝিকরগাছা থেকে আরও সামনে অগ্রসর হয়েছে, পথে তারা যশোর রোডের দু’ধারে শত শত ভীতসন্ত্রস্ত গ্রামবাসীকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে। দি হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ‘মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তিন হাজার সৈন্য নিহত’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের অনুগতদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চালানোর সময় প্রায় ৩০০০ পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়েছে। তাদের আনুমানিক ৭০,০০০ সৈন্যের প্রায় ৫ শতাংশ এই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলো। নিহতদের পাশাপাশি পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর একটি বড় সংখ্যা মুক্তিবাহিনী কর্তৃক বন্দী হয়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে বলে এই সূত্রটি জানিয়েছে। ছয় কর্মকর্তাসহ ১০৯ জন পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, এই সূত্র যোগ করেছে। সীমান্তে পাওয়া নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট অনুযায়ী কুমিল্লার পাকিস্তান ক্যাম্পে আক্রমণ হয়েছে জানা গেছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মোশাররফ হোসেন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকবার দেখা করতে গিয়েছেন। মুক্তি বাহিনী সূত্রগুলো সন্দেহ করছে যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা ও লোকেরা তাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বলতে পারে যে তারা যথেষ্ট লড়াইয়ের শিকার হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা শনিবার চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যে হাজীগঞ্জের কাছে একটি বড় পাকিস্তানী বাহিনীকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে পিছু হটে যাওয়া পাকসেনাদের ১৩০টি বাহন থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে। টাইম ম্যাগাজিনে ’প্রথম রাউন্ডে পাকিস্তানের বিজয়’ শিরোনামে রিপোর্টে বলা হয়, গত সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানে একজন বিদেশী কূটনীতিক বলেছেন, ‘কোন সন্দেহ নেই যে এটা একটা হত্যাকা-।’ আরেকজন পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটাকে যথার্থই রক্তগঙ্গা বলা যায়। পাকিস্তানী সেনারা একদম নির্দয়ের মতো আচরণ করছে।’ পাকিস্তানের বেসামরিক যুদ্ধের প্রথম রাউন্ড গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে এবং এতে জয়ী ছিল পশ্চিম পাকিস্তান, যাদের ৮০ হাজার পাঞ্জাব সৈন্য আছে যারা বিদ্রোহী পূর্ব পাকিস্তানে দায়িত্বরত আছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে কূটনীতিক, উদ্বাস্তু ও গুপ্তচরদের মাধ্যমে আসা খবরগুলো অনেক ভিন্নভাবে প্রচার হচ্ছে। প্রায় ৩ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তবে পাকিস্তান সরকারের মতে এ সংখ্যা মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজারের মতো এবং সেই হাজার হাজার বিধ্বস্ত মানুষেরা ছাড়া কেউ এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর তথ্য মতে, রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। উপ-রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনা ও সমম্বয়সাধন করবেন। খন্দকার মুশতাক আহমেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রির দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিসভার অপর সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ.এইচ.এম. কামরুজ্জামান।
পাকবাহিনী ট্যাংক এবং অন্যান্য ভারি অস্ত্রের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাবরা ঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি কোম্পানি ও একটি সাপোর্ট প্লাটুন সম্মিলিতভাবে লারমণিরহাট বিমানবন্দর এলাকাতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর বড় রকমের আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আরব আলী। কয়েক ঘন্টার সংঘর্ষে বেশ কিছু পাকসেনা নিহত হলেও শেষ পর্যন্ত পাকসেনাদের ব্যাপক আক্রমণর মুখে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
ইস্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের পুরো বাহিনী কালুরঘাট থেকে রাঙ্গামাটি চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। মহালছড়িতে ব্যাটালিয়নের হেড কোয়ার্টার স্থাপিত হয়।
ভোরবেলা পাকবাহিনী আর্টিলারি সাপোর্টে যশোরের ঝিকরগাছায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহে ব্যাপক হামলা চালায়। প্রচন্ড যুদ্ধে ইপিআর বাহিনীর দুজন ও বিএসএফ বাহিনীর একজন নিহত হয়। ইপিআর বাহিনী পুনরায় বেনাপোলের কাগজপুকুর নামক স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে।
পাক সৈন্যদের একটি দল হাজীগঞ্জের ওপর দিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে এগিয়ে আসে এবং সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে।
সংসদ সদস্য ডা.জিকরুল হক, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী তুলশীরাম আগরওয়ালা, ডা.শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জমান, ডা. ইয়াকুব আলী, যমুনা প্রসাদ, কেডিয়া, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালাসহ গ্রেফতারকৃত সৈয়দপুরের প্রায় ১৫০ জন স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ১৯ দিন নির্মম অত্যাচার চালিয়ে অবশেষে রংপুর সেনানিবাসের পশ্চিম পার্শ্বের উপ-শহরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
পার্বতীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকসেনারা পুনরায় গোলাবর্ষণ করে। পাকসেনাদের মর্টার থেকে গোলাবর্ষণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এ যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
নাটোরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর পাকসেনারা ব্যাপক শেলিং-এর মাধ্যমে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে বানেশ্বর (রাজশাহী) গিয়ে ডিফেন্স নেয়।
পাকবাহিনী তিস্তা দখলের লক্ষ্যে তিস্তা পুলে অবস্তানরত মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহে ভারি অস্ত্রের সাহায্যে তিনদিক থেকে আক্রমণ চালায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ‘আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব পাকিস্তান’ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত এক আবেদনে অবিলম্বে পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধানের জন্য আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। তারা বলেন, কোনো সরকারেরই অস্ত্র ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনসাধারণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই।
ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়া সরকারি বিভাগ, স্ব-শাসিত, আধা-স্বশাসিত সংস।তাসমূহের সকল কর্মচারীকে সর্বশেষে ২১ এপ্রিলের মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। নির্দেশে আরো বলা হয়, এরপর অনুপস্থিত কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।
বেতার ভাষণে সবুর খান একটুও দয়া না দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগিতাকারীদের খতম করার আহবান জানায়। এমনকি সন্দেহজনক যেকোনো লোকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলে।
মুসলিম লীগ সভাপতি শামসুল হুদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গণহত্যার নায়ক টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
ঢাকায় নিযুক্ত একজন বিদেশী কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন সন্দেহ নেই যে পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই রক্তস্নান। চেঙ্গিস খানের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য ছিল না। সেনাদল এখন বিদ্রোহীদের দমন কাজে ব্যস্ত। ট্যাঙ্ক চড়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার বুকে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে বহু বাড়িঘর।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন।
সম্পাদনাঃমোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored