রণাঙ্গনে ১৫ এপ্রিলঃপূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি-মোহাম্মদ হাসান

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ঃ ঢাকার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ যাবত শান্তি কমিটি নামে পরিচিত শান্তি কমিটির নাম পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি রাখা হয়েছে বলে ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়। (সূত্র: ১৬ এপ্রিল ১৯৭১, সংগ্রাম) এর ২১ সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটিতে যারা ছিল তারা হল- জনাব সৈয়দ খাজা খায়েরুদ্দিন, জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব মাহমুদ আলী, জনাব আব্দুল জব্বার খদ্দর, মওলানা সিদ্দিক আহমদ, জনাব আবুল কাশেম, জনাব মোহন মিয়া, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, জনাব আব্দুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার, ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন, পীর মোহসেন উদ্দিন, জনাব এএসএম সোলায়মান, জনাব এ. কে রফিকুল হোসেন, জনাব নুরুজ্জামান, জনাব আতাউল হক খান, জনাব তোরাহা বিন হাবিব, মেজর (অবসর প্রাপ্ত) আফসার উদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী, এবং হাকিম ইরতেজাউর রহমান খান।

শান্তি কমিটির সাবকমিটিঃ
শান্তি কমিটি গঠন করার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর ও আবুল কাসেমকে নিয়োগ করা হয়।

কমিটিতে জনাব হাবিবুল হকের পরিবর্তে জনাব মাহবুবুজ্জামানকে লালবাগ এলাকার একজন সংযোগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তাছাড়া কমিটি ৩৭৫, উত্তর শাহজাহানপুরের জনাব ফজলুল হক, ১৫১, দণি কমলাপুরের শাহ মইজুদ্দিন ও ২২৫ মালীবাগের জনাব আব্দুল হাইকে রমনা থানার এবং ২৩ সেন্ট্রাল রোডের জনাব মসিহল ইসলাম ও জনাব আব্দুল খালেককে লালবাগ থানার সংযোগ অফিসার নিয়োগ করে।

কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যকরী কমিটির দৈনন্দিন কার্য নির্বাহের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়।

জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব এ জে. খদ্দর, জনাব এ এস এম সোলায়মান, জনাব আব্দুল মতিন ও এস এস কে খয়েরুদ্দিন।

শান্তি কমিটির সমর্থক ও থিঙ্ক ট্যাংকঃ
বিচারপতি জনাব এ কে এম বাকের, মওলানা সাইয়েদ মুস্তফা মাহমুদ আল মাদানী, মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম, পীর মোহসেন উদ্দীন, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, ড. হাসান জামান, ড: কাজী দীন মুহাম্মদ, ড. মফিজুল্লাহ কবীর, ড. মোহর আলী, ড. হাবিবুল্লাহ, অধ্য জালালুদ্দিন, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দীন, ব্যারিষ্টার কোরবান আলী, অধ্যাপক আবদুল গফুর, মওলানা ওবায়দুল্লাহ, মওলানা মোস্তাসির আহমদ রহমানী, অধ্য এ আর ফাতমী, অধ্য ইব্রাহিম খান, এডভোকেট এ. টি. সাদী, মেজর আফসার উদ্দীন, মওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ মাসুদ এবং ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম।

ঠাকুরগাঁও এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ পাকসেনারা আক্রমণ করে  রাতে স্থানীয় ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান’ এর ভোল্ট ভেঙ্গে রাতের বেলায় সমস্ত টাকা পয়সা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। শহরবাসী এ খবর জানতে পারে ১৫ এপ্রিল। পয়সার বাক্সসহ দু’জনকে আটকও করা হয়েছিল। অবশ্য পরে সমস্ত ঘটনা জানা গিয়েছিলো। তথ্যমতে জানা যায় এ টাকা পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকারের তহিবলে জমা হয়েছিলো। রাত ১১ টায় পাকিস্তান বাহিনীর পক্ষে মাইকে ঘোষনা করা হচ্ছিলো- পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে, আমাদের অগ্রগামী বাহিনী সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের কাছে পৌছে গেছে ইত্যাদি-ইত্যাদি। হঠাৎ শহরের দক্ষিণ প্রান্তে বিকট শব্দে একটা শেলের বিস্ফোরণ হলো। মানুষ তখন দিগবিদিক জ্ঞান হারা হয়ে ছুটতে শুরু করলো উত্তর দিকে। সবারই এক উদ্দেশ্য-টাউন ছাড়তে হবে, টাঙ্গন নদীর ওপারে যেতে হবে। গ্রাম থেকে আরো প্রত্যন্ত এলাকা হয়ে সীমান্তে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যেমূলক নিরুদ্দেশ যাত্রার যাত্রী হয়ে পালাতে লাগলো সবাই। পিছনে তাকিয়ে অনেকেই দেখলো দাউ দাউ করে জ্বলছে এসডিও সাহবের বাংলো। গোটা শহরের আকাশে কেবল আগুনের কুন্ডুলী। নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে বালিয়াডাঙ্গী, আটোয়ারী, পঞ্চগড় ও হরিপুরের সীমান্ত এলাকা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিলো ভারতীয় শরনার্থী শিবিরে। ২৫ মার্চের ২০ দিন পর ঠাকুরগাঁও শহর শত্রু কবলিত হয়।  বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরই ঠাকুর দ্রুত আশ্রয় শিবির করে দেন। অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে শরণার্থীদের ভোগান্তি একটু কম হয়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর তথ্য মতে, মুক্তিবাহিনীর ‘এ’ কোম্পানি কাকিনা নামক স্থানে, ‘বি’ কোম্পানি পাটেশ্বরী ঘাটে, ‘সি’ কোম্পানি পাটের ঘাটের বাম দিকে রৌমারী সড়কে এবং ‘ডি’ কোম্পানি ফুলবাড়ি থানায় ডিফেন্স নেয়।
হানাদার পাকবাহিনীর আক্রমণে ভৈরবের পতন হয়। পাকবাহিনী ভৈরব এলাকায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞের এক মর্মস্পশী দৃশ্য রচনা করে।
নগরবাড়ি ঘাটে পাকবাহিনী ফেরি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর মর্টার ছুঁড়ে। পাকবাহিনীর এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান থেকে ১০ কিলোমিটার পিছিয়ে বগুড়া মহাসড়কের ডাববাগান(বর্তমান শহীদ নগর) এলাকায় এসে অবস্থান নেয় এবং শত্রুবাহিনীর জন্য ত্রিমুখী ফাঁদ তৈরী করে।
পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গায় প্রচন্ড বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় অসংখ্য নিরস্ত্র নিরীহ মানুষ নিহত হয়।
পাকবাহিনী হাজীগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করে। অপরদিকে কলিমুল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থেকে ডাকাতিয়া নধীর পারে সমবেত হয়ে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নেয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১০টি ট্রাক ও ৮টি জিপে করে গুলি করতে করতে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে। আতঙ্কে ঠাকুরগাঁওবাসী শহর ছাড়তে শুরু করে। অল্পক্ষণের মধ্যে শহর হয়ে যায় ধু-ধু জনশূন্য।
তিতাস নদীর পূর্ব পাড়ে শাহবাজপুরের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা একটি প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে।
বিকালে পাকবাহিনীর হাতে ঝিনাইদহের পতন ঘটে।
লে. মাহফুজ খাগড়াছড়িতে মেজর জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে সুবেদার খায়রুজ্জামান, করিম, ইঞ্জিয়ার ইসহাক, ফারুক আহম্মদ, শওকত আলী প্রমুখকে নিয়ে রাঙামাটি বুগিঘাট বাজারে আসেন ও অবস্থান নেন। এখান থেকে তারা পাকবাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন।
চট্টগ্রামের রাজাঘাট এলাকা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়।
মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কুমিল্লার গঙ্গাসাগর পুনরুদ্ধার কর।
মুক্তিবাহিনী কয়েকদিন ধরে প্রতিরোধ যুদ্ধের পর রাজশাহী শহরের অবস্থান ছেড়ে দেয়।
ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে কর ও খাজনা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেয়।
নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মার্শাল এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা আশা করি, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান গৃহযুদ্ধের অবসানের ব্রবস্থা করবেন।’
করাচীতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সরকার ন্যায়সঙ্গত কারণেই আওয়ামী লীগকে বেআইনী ঘোষণা করেছেন।
ঢাকায় ‘নাগরিক শান্তি কমিটি’-র নাম পরিবর্তন করে ‘পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি’ রাখা হয়।
রাজা ত্রিদিব রায়- এর আহ্বানে পাকবাহিনী রাঙ্গামাটি শহরে এসে পৌঁছায়।
‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র পরিষদ’-এর সভাপতি রশিদুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সহযোগী ছাত্রদের সেনাবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে শত্রু(মুক্তিযোদ্ধা) খতমের নির্দেশ দেয়।

সংবাদ সংস্থা এএফপির খবর: ঢাকা এখন মৃত্যুপূরী। রাস্তায় খুবই কম লোক দেখা যায়। অনেক লোক শহর ছেড়ে চলে গেছেন। যারা ঢাকা থেকে পালাতে চাচ্ছেন তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে। সৈন্যরা ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে, তরুনদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্যদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করছে।

শান্তি ও কল্যাণ স্টিয়ারিং কমিটি, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সংগঠকদের ১৫ দিনের মধ্যে পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ১২ ধানমন্ডি, রোড নং-৫ এ যোগাযোগের নির্দেশ দেয়।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা…
সম্পাদনাঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored