শান্তি কমিটির অন্যতম সংগঠক এবং সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী প্রভাষক গোলাম আযম ও তাঁর সহচররা বারংবার ৭১কে গৃহযুদ্ধ বলে দাবী করেছে, এমনকি যুদ্ধহারের পরও, স্বাধীন দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে! যেহেতু আমরা বাংলাদেশীরা জাতীগত ভাবে মেরুদণ্ডহীন ও দাস মনোবৃত্তির অধিকারী, তাই এর সবল কোন প্রতিবাদ না করে উল্টে নিজেরাই গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসেছি, আসলেই কি গৃহযুদ্ধ ছিলো? কি জানি!
তাহলে কি ছিলো ১৯৭১; গৃহযুদ্ধ, আন্তরাষ্ট্রীয় সমর নাকি স্বাধীনতার সংগ্রাম?
সংক্ষেপে গৃহযুদ্ধের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা যাক। গৃহযুদ্ধ কি? সহজ ভাষায় একই রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সংঘাত। ভুলে গ্যালে চলবে না যে ২৬শে মার্চে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর তরফ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমেই ১৯৭১এর যুদ্ধ শুরু হয়, অর্থাৎ যুদ্ধের প্রথমেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে আমরা আর পাকিস্তানের নাগরিক নই। বাঙলাদেশের স্বাধীন সরকার ছিলো, বেতার ছিলো, নিজস্ব সেনাবাহিনী ও প্রশাসন ছিলো এবং যুদ্ধ শেষ হবার আগেই আমরা স্বাধীনরাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলাম।
প্রতিটি গৃহযুদ্ধের অন্তে বিবাদরত অংশগুলো হয় এককরাষ্টে পরিণত হয় অথবা একই রাষ্ট্রে ভিন্ন ভিন্ন শাসন বজায় রাখে, য্যামন সিরিয়া।
আর স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্তে একটা নূতন দেশ জন্ম ন্যায় বা সংগ্রামরত জনগোষ্ঠীটির অবদমন ঘটে। য্যামন ফিলিস্তিনিরা গত অর্ধশতাব্দীর অধিক সময় ধরে যে সশস্ত্র ও রাজনৈতিক সংঘাতটি লড়ছে তা ‘ইস্রায়েলের গৃহযুদ্ধ’ নয়, বরং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম; ক্যাননা ফিলিস্তিনিদের বিজয় হোক বা না, তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা, ইস্রায়েল রাষ্ট্রের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব অথবা ইস্রায়েল রাষ্ট্র কাঠামোয় থেকে কোন সুবিধা বা বিশেষ অধিকার আদায় করা নয়। ফিলিস্তিনী সংকটকে কেউ ইস্রায়েলের গৃহযুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করতে চাইলে ভুল হবে, কারণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেখানে পরিষ্কার- স্বাধীনতা!
এমনটা ধরে নেওয়া নিতান্তই ভুল হবে যে একটি যুদ্ধে জিতলে সেটা স্বাধীনতাযুদ্ধ হিসাবে আখ্যায়িত হয় আর হেরে গ্যালে ডাকা হয় গৃহযুদ্ধ বলে। উদাহরণ সরূপ দ্যাখা যেতে পারে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাশ্মীর সংকটকে। কাশ্মীরে চলমান সংঘাতটি ভারতের গৃহযুদ্ধ নয় বরং কাশ্মীরী মুসলমানদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। উদ্দেশ্য, প্রেক্ষাপট, কার্যকারণ ও নৈতিকতার বিষয়গুলোতে না গিয়ে শুধুমাত্র গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে কোনই সন্দেহ নেই যে চরিত্রগতভাবে এটি একটি স্বাধীনতার সংগ্রাম, গৃহযুদ্ধ নয়। ক্যাননা যদিও বাঙলাদেশের মতো কেউ ওখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দ্যায়নি বা একটা স্বাধীন সরকার স্থাপন করে সংগঠিত প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলেনি, প্রতিটি সংগ্রামরত কাশ্মীরীর লক্ষ্য হচ্ছে ভারত থেকে মুক্তি। তারা পুরো ভারত বা তার একটি অংশের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব চাইছে না, সরলভাবে ভারতের সার্বভৌমত্ব থেকে নিজেদের আলাদা করতে চাইছে।
আবার ইয়েমেন বা লিবিয়ায় সম্প্রতিকালের সংঘাতগুলি গৃহযুদ্ধ, ক্যানোনা এক্ষেত্রে দুটি বিবাদরত পক্ষ একই দেশের কর্তৃত্ব নিয়ে লড়ছে, কেউই নিজের আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবীতে লড়ছেনা।
সাল ১৯৭১এ বাঙালীরা পাকিস্তানের একটি অংশের কর্তৃত্বের জন্য সংগ্রাম করেনি, ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন যে “এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম!”
আমরা চেয়েছিলাম একটা নূতন দেশ, আর এজন্যই তিনি জাতির পিতা; কর, বর্ণবাদবিরোধী বা শ্রম অধিকার আন্দোলনের নেতা নন। ২৫শে মার্চের পর এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো যে শুধুমাত্র স্বাধীকারই বাঙালীকে থামাতে পারবে, কিছু অগ্রাধিকারমূলক সুবিধাদি দিয়ে তাদের আর মানানো যাবেনা।
একথা সর্ববিদিত যে ১৯৭১এর ৯মাসের যুদ্ধের শেষ ১৩ দিন ভারত বাংলাদেশের পক্ষে লড়েছিলো, তাহলে কি এটা আন্তরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ বা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নয়?
ভারতীয় গণমাধ্যম হয়তো মনে করে যে এটা একটা ভারতীয় যুদ্ধ, কারণ তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় সীমান্তেই তারা ত্রিমাত্রিক এবং সর্বাত্মক লড়াই করেছে এবং প্রায় ৪০০০ সৈন্যের আত্মাহুতির বিনিময়ে বিজয় লাভ করেছে।
ভুললে চলবে না যে ভারত এই যুদ্ধে অংশ ন্যায় মুক্তিবাহিনীর সমর্থনে, যুদ্ধের পুরো সময়কালেই তারা আন্তর্জাতিক মহলে স্বাধীনবাঙলা প্রবাসী সরকারের পক্ষে ওকালতি করছিলো।
ইতিহাসের ঠিক একই ক্ষণে গণচীন ও যুক্তসংঘ রাশিয়া ভিয়েতনামের যুদ্ধে নিজেদের রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করছিলো। ভিয়েতনাম যুদ্ধে গণচিনের ৪০০০-১১০০০ সৈন্য নিহত হয়, যুক্তসংঘ রাশিয়ারও নগন্য সংখ্যক কিছু প্রানহানী হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে ওটা ছিলো ঠান্ডাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে লড়া এক ছায়ারণ বা Proxy war কিন্তু আমরা ওটাকে রুশ-মার্কিন বা চীন-মার্কিন যুদ্ধ বলে ডাকি না। ইতিহাসে ওই যুদ্ধের নাম ভিয়েতনাম ওয়র, অথবা ভিয়েতনামের প্রতিরোধ যুদ্ধ।
তাহলে পাকিস্তান মুক্তিবাহিনীর বদলে ভারতের কাছে ক্যানো আত্মসমর্পণ করেছিলো?
যদিও পাকিস্তান ১৯৭৪এর আগ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দ্যায়নি, তাস্বত্বেও এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যুদ্ধ পরাজয়ের পর ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো।
১৯৭১এর ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তান কর্তৃক সাক্ষরিত আত্মসমর্পনের দলিল বা Instrument of Surrender এ পরিষ্কার দ্যাখা যায় যে তারা বাঙলাদেশ ও ভারতের “যৌথবাহিনীর” কাছে আত্মসমর্পণ করছে। ঐ দলিলের কোনখানে তারা এমনকি এটাকে “পূর্ব পাকিস্তান” বলেও উত্থাপন করেনি বরং সরাসরি বাঙলাদেশ নামেই উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ জগজিৎ সিং অরোরা সেখানে ভারতীয় বাহিনীকে নয়, দুই বাহিনীর প্রধান হিসেবে বাঙলাদেশ ও ভারত উভয়কেই প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
বাস্তবপক্ষে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলটিই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে আমরা কোন গৃহযুদ্ধ নয় বরং স্বাধীনতার যুদ্ধে জিতেছিলাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment