৩০শে এপ্রিল ১৯৭১, সেদিন শুক্রবার ইতিহাসের পৈশাচিকতম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল আমাদের বাংলাদেশে। বলছি শিশু রেহেনার কথা, বয়স তাঁর মাত্র ৪ মাস…… শিশু রেহেনার বাবা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে রেখে, মার্চেই যোগ দিয়েছিলেন ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখ সমরে।
খুলনার দীঘলিয়া থানার সিনেহাটি গ্রামে সেদিন দেশীয় অমানুষরা, পাকিস্তানী সেনা নিয়ে এসেছিল তাঁর বাড়িতে।
বাড়ির পাশের জঙ্গলে মেয়েকে নিয়ে আরও অনেকের সঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন রেহেনার মা। দেশীয় বেঈমান দালালদের সহায়তায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অমানুষরা তাঁকে সেখান থেকে ধরে আনে। মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেয় রেহেনাকে।
আছড়ে ফেলে বাড়ির উঠানে। তারপর বুটের তলায় পিষে মেরে ফেলে মাত্র চার মাস বয়েসি দুধের শিশুটিকে। রক্তে-মাংসে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল সেই জামা। অপরাধ, রেহেনার বাবা আবদুস সালাম গেছেন মুক্তিযুদ্ধে।
রেহেনার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম পরবর্তীতে, এই জামা ধুয়ে পরিষ্কার করে কাঁচের ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছিলেন । বুকের ওপর সোনালি বর্ডার দেওয়া সবুজ রঙের হাতাকাটা ছোট্ট এই জামাটিই নির্মম বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার রেহেনার একমাত্র স্মৃতি।
এই জামাটি ছাড়া রেহেনার কোনো ছবি নেই, নেই আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন। কোন ভাষায় এমন নির্মমতার বর্ণনা দেবো ? কোন ভাষায় এই নৃশংসতার প্রতিবাদ করবো ? গৌরব ও বেদনার স্বাধীনতা যুদ্ধে রেহেনা যখন প্রাণ দেয়, বয়স তার মাত্র চার মাস!
রেহেনা বেঁচে থাকলে আজ ৪৯ বছরের পূর্ণবয়সী মানুষ হতেন, নিজ সন্তানদের শোনাতেন মুক্তিযোদ্ধা বাবা’র গৌরবগাঁথা। পৃথিবীর অভিশপ্ত নরক ‘পাকিস্তান’ থেকে আসা জল্লাদ’রা মাত্র ৪ মাস বয়সী শিশু রেহেনাকে হত্যা করেছিল।
এরপরও পাকিস্তানী পশুদের জন্য ও পাকিস্তান নামের ঐ নরকের জন্য যাদের ভেতর বিন্দুমাত্র সহানুভূতি থাকবে, তাদের ওপর যেন সকল শহীদের অভিশাপ নেমে আসে। বাংলায় কি কোন মা আছেন যার চোখে জল আসবেনা, কোন পিতা কি আছেন, যার বুকে হাহাকারের মর্মর ধ্বনি বাজবেনা রেহেনার জন্য?
স্বত্বার গভীরতম স্থান থেকে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, স্রষ্টা যেন পাকিস্তানী জল্লাদ আর দেশীয় বেঈমান অমানুষদের আমৃত্যু সেই যন্ত্রণা দেয়, যে যন্ত্রণা তারা এদেশের আপামর সাধারন মানুষকে দিয়েছিল।
যারা হত্যা করেছিলো শিশুদের মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে। যারা হত্যা করেছিলো পঙ্গু থেকে বৃদ্ধ,হত্যা করেছে কিশোরদের, প্রতিবাদী যুবকদের পরম করুনাময় তুমি তাদের আমৃত্যু নরক যন্ত্রণায় রেখো।
আর রেহানা সেই একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন জামাতি সংরক্ষিত রয়েছে আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে।