করোনা থেকে মুক্তির পর পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো কেমন?

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ডাক্তাররা সাইমন ফ্যারেলকে ওষুধ দিয়ে সংজ্ঞাহীন করে রেখেছিলেন কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য। সেই কৃত্রিম কোমা থেকে জেগে ওঠার পর সাইমনের মনে আছে তিনি তার অক্সিজেন মাস্কটা ছিঁড়ে ফেলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।

দশদিন তাকে রাখা হয়েছিল নিবিড় পরিচর্যায়। তাকে নি:শ্বাস নিতে হচ্ছিল ভেন্টিলেটারের মাধ্যমে। খবর বিবিসি বাংলার

তিনি বলেন, আমি অক্সিজেন মুখোশটা টেনে আমার মুখ থেকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম আর নার্স বারবার সেটা পরিয়ে দিচ্ছিল।

ডাক্তাররা যখন তাকে কোমা থেকে জাগান, তখন কোভিড-১৯এর সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা তিনি কাটিয়ে উঠেছেন, কিন্তু তার ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসের তখনও স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেবার ক্ষমতা ছিল না। তার অক্সিজেনের দরকার ছিল।

দুই সন্তানের বাবা ৪৬ বছরের সাইমন তখন মারাত্মক প্রলাপের মধ্যে। তার শরীরে যে অক্সিজেনের দরকার সেটা বোঝার ক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার মনে হচ্ছিল এসবের কোন দরকার নেই।

আমাকে ঠেকান দেখি, ইংল্যান্ডে বার্মিংহাম কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের নার্সকে তিনি বারবার একথা বলছিলেন তার মনে আছে। তার নার্স বলছিলেন, আপনি শান্ত না হলে আপনার দু হাতে আমরা মেডিকেল গ্লাভস পরিয়ে দেব।

শেষ পর্যন্ত আমার দু হাত তারা টেপ দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল। আমি দস্তানাগুলোও ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছিলাম। আমি কামড়ে দস্তানা ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলেছিলাম। তাদের আবার নতুন দস্তানা দিয়ে আমার হাত বেঁধে দিতে হয়েছিল।

কোভিড-১৯ যাদের গুরুতরভাবে অসুস্থ করেছে, যাদের বেশ কিছুদিন ভেন্টিলেটারে থাকতে হয়েছে এবং যাদের কড়া মাত্রায় ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখতে হয়েছে, সেসব রোগীর মধ্যে আইসিইউ-তে এমন লক্ষণ প্রায়ই দেখা গেছে।

লন্ডনের রয়াল ফ্রি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের ঊর্ধবতন চিকিৎসক ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল বলছেন, এধরনের রোগীদের মধ্যে মারাত্মক প্রলাপ বা বিকার, বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা আমরা দেখছি।

সাধারণত কারো যদি অস্ত্রোপচার হয় বা সাধারণ নিউমোনিয়া রোগীকে সংজ্ঞাহীন করা হয়, তারপর জ্ঞান ফিরলে তারা এতটা বিভ্রান্ত বা অস্থির অবস্থায় থাকে না। এই কোভিড-১৯ রোগীদের ভেন্টিলিটার থেকে বের করার পর তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ কাজটা সফলভাবে করা গেলেও, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ।

লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগ পুনর্বাসন বিভাগের অধ্যাপক স্যালি সিং বলছেন, অনেকেই মনে করেন রোগীকে সারিয়ে তোলাটাই বড় কথা, ফলে রোগী আসলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে কিনা, সেটাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা আমরা হয়ত ভাবছি না।

একটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। কাজেই এদিকটা উপেক্ষা করলে চলবে না।

দীর্ঘ পথ

বিশ্বে লাখো লাখো মানুষ এখন এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে।

অনেকে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা নিয়েছে, অনেককে হয়ত অতটা কঠিন সময় পার করতে হয়নি, অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছনর আগে হাসপাতালে অক্সিজেন চিকিৎসা তাদের সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এদের সবার জীবনকে বদলে দিয়েছে।

কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাদের নিবিড় পরিচর্যায় যেতে হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে, সেটা তারা কোমা থেকে জেগে ওঠার আগেই শুরু করা উচিত। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তাকে সাহায্য করার কাজটা সেই সময় থেকেই শুরু করতে হবে।

তারা বলছেন, যখন গুরুতরভাবে আক্রান্তরা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছে, সে অবস্থাতেই নার্স ও বিশেষজ্ঞদের রোগীর পেশী ও হাড়ের জয়েন্টগুলো সচল রাখতে বিশেষ ব্যায়াম করাতে হবে। নাহলে দীর্ঘসময় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকার কারণে তার শরীর খুব শক্ত হয়ে যাবে।

ইংল্যান্ডে প্লিমাথ শহরের ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের বিশেষজ্ঞ নার্স কেট ট্যানটাম বলছেন, যেমন, কাউকে যদি ভেন্টিলেটারে রাখা হয়, বা তার বিভিন্ন অঙ্গ যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে চালু রাখা হয়, এমনকী পাশাপাশি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি নানাধরনের ওষুধ তার শরীরে বিভিন্ন নলের মাধ্যমে প্রবেশও করানো হয়, তেমন অবস্থাতেও তাদের ব্যায়াম করার বিশেষ সাইকেল যন্ত্রে তোলা সম্ভব।

যন্ত্রে রোগীর পাদুটো বসিয়ে দিলে বাকি কাজটা যন্ত্রই করবে। তাতে করে রোগীর পেশী, হাড়, অস্থিমজ্জা সব কিছু সচল রাখা যাবে, সেগুলো কঠিন হয়ে যাবে না।

ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল বলছেন, আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন বা কড়া ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা রোগীদের সাথে তার সহকর্মীরা অনবরত কথা বলেন। তাদের বলা হয় তারা কোথায় আছে, তাদের নিয়ে কী করা হচ্ছে, তাদের আশ্বাস দেয়া হয় যে তারা নিরাপদে আছে।

ডা. ধাদওয়াল বলেন, তাদের যখন জ্ঞান ফিরবে তখন রোগীর মানসিক অবস্থার জন্য এগুলো খুবই জরুরি। কোন কোন রোগী জ্ঞান ফেরার পর এমনও বলেছেন, ও আপনার কণ্ঠ আমার মনে আছে, তারা কিছু স্মৃতি নিয়ে জেগে ওঠে।

তবে কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা অবশ্যই অনেক বেশি কঠিন ও জটিল হয়, কারণ আইসিইউ-তে কোভিড রোগীদের অনেককেই ভেন্টিলেটারে রাখতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে।

অনেকেই যখন জ্ঞান ফিরে পান, যন্ত্র থেকে যখন তাদের বের করে আনা হয়, তখন তারা ভীষণরকম দুর্বল থাকেন।

ডা. কুলওয়ান্ত ধাদওয়াল বলেন, ধরুন একজন রোগী সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকছেন ৪০ দিন বা তারও বেশি। তাদের জন্য ভেন্টিলেটার থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সময় লেগে যায় ছয় সপ্তাহ, কখনও কখনও তার থেকেও বেশি। এরপর তাদের উঠে দাঁড়ানো, হাঁটাচলা শুরু করা, সব মিলিয়ে লম্বা সময়ের ব্যাপার।

তবে কেউ কেউ বিস্ময়কর ভাবে তাড়াতাড়ি সেরে উঠছেন, এমনও দেখছেন চিকিৎসকরা।

ডাক্তাররা বলছেন, কোভিড-১৯-এর মত মারাত্মক ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর অন্যতম বড় একটা চ্যালেঞ্জ হল খুব মারাত্মক প্রদাহ কাটিয়ে ওঠা।

অনেক রোগীর জন্য বড় সমস্যা হয় নি:শ্বাস নেবার জন্য তাদের মুখের ভেতর দিয়ে নল ঢোকাতে না পারার কারণে। কোভিড আক্রান্ত হলে গলার নালী, স্বরযন্ত্র এবং আশপাশের অংশগুলো খুব ফুলে যায়। ফলে তাদের গলা দিয়ে নল ঢোকানো কঠিন হয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারদের গলার কাছে ফুটো করে সেখান দিয়ে নল শ্বাসনালীতে প্রবেশ করাতে হয়, যেটা ভেন্টিলেটারের সাথে যুক্ত করতে হয়।

এই ফুটো করার কারণে গলায় যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, সেটারও পরবর্তীতে দেখাশোনার দরকার পড়ে, ব্যাখ্যা করছিলেন ইংল্যান্ডেরই আরেকটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা ডাক্তার কার্ল ওয়াল্ডমান।

সব মিলিয়ে সেরে ওঠার গোটা প্রক্রিয়াটাই অনেক লম্বা এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রলাপ বা বিকার

চিকিৎসকরা বলছেন, যাদের ভেন্টিলেটার যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে শ্বাস নিতে হয়, তাদের তিন চতুর্থাংশ রোগীর মধ্যে প্রলাপের লক্ষণ দেখা গেছে। অধিকাংশ চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা হল, এই প্রলাপ খুবই ভয়াবহ মাত্রায় হয় এবং তারা বিকারের মধ্যে এমন কিছু দেখেন যা বাস্তব নয়, যাকে হ্যালুসিনেশন বলা হয়। তারা বলছেন, যারা কোভিড-১৯এ গুরুতরভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে এটাও হয় খুবই তীব্র মাত্রায়।

সংক্রমণের কারণে অথবা বেশি জ্বরের কারণে প্রলাপ হতে পারে। তবে রোগীকে স্বস্তি দেবার জন্য যেহেতু কড়া ঘুমের ওষুধ দিতে হয় তার কারণে এর মাত্রা এত তীব্র হয়ে ওঠে।

রোগী যখন ওষুধ দিয়ে তৈরি কোমা থেকে জেগে ওঠে এবং এই ওষুধের প্রকোপমুক্ত হতে শুরু করে, তখন তারা ভয়ঙ্কর সব কল্পিত দৃশ্য দেখে এবং তাদের মাথার ভেতর একটা বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্মায় তারা যা দেখছে সেটা সঠিক।

লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার অধ্যাপক ডরোথি ওয়েড বলেন, প্রলাপ কিন্তু স্বপ্ন দেখার মত নয়, মানুষ বুঝতে পারে- স্বপ্ন অবাস্তব। কিন্তু প্রলাপ এমনই যে রোগী মনে করে সেটাই বাস্তবে ঘটছে। তারা সবসময়েই বলে – এটা একেবারে সত্যি, এই ভীতিজনক ঘটনাটা আমার জীবনে আসলেই বাস্তব।

এই রোগের কারণে শরীরে রাসায়নিকের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং ডরোথি ওয়েড বলছেন, তার থেকে রোগীর শারীরিক কষ্টের জন্য মস্তিষ্ক একটা কল্পিত ব্যাখ্যা তৈরি করে। এই কোভিড রোগীদের প্রায়ই বলতে শোনা গেছে- আমাকে অপহরণ করা হয়েছে, বা নির্যাতন করা হয়েছে বা আমি জেলখানায় আটকা, আমাকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হবে ইত্যাদি।

ডরোথি ওয়েড বলেন, এরা মনে করে ডাক্তার ও নার্সরা সবাই মিলে ষড়যন্ত্রকারী। তার রক্ত বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেচে দিয়ে এরা অর্থ লোটার জন্য তাকে বন্দি করেছে।

অর্থাৎ এর মানসিক প্রভাব রোগীকে ভয়াবহ রকমে আছন্ন করে ফেলে।

এই সমস্যা কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে প্রকটভাবে হচ্ছে, তার কারণ যখন তাদের ভেন্টিলেটার খুলে নেয়া হচ্ছে, সেসময় পরিবারের কারো সান্নিধ্য রোগীরা পাচ্ছে না। তারা যখন বাস্তব জগতে ফিরছেন, তখন তাদের চারপাশে শুধু হাসপাতালের যন্ত্র, হাসপাতালের গন্ধ ও পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখ ও কণ্ঠ। স্বজনেরা কেউ নেই।

দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা

কোমা থেকে জেগে ওঠার পর অনেক সপ্তাহ ধরে এই প্রলাপ বা বিকারগ্রস্ত অবস্থা থেকে যেতে পারে।

ডাক্তাররা বলছেন সময়ে ব্যবস্থা নেয়া না হলে এই বিকার থেকে পরে অবসাদ, উদ্বেগ ও নানাধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজনের মানসিক উদ্বেগে ভোগার নজির আছে। কিন্তু কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

ডরোথি ওয়েড বলছেন, কোভিড আক্রান্ত রোগীরা সেরে উঠে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর প্রাথমিকভাবে স্বস্তিবোধ করছেন এবং একটা আনন্দের আবহে থাকছেন। কিন্তু এসব রোগীদের ক্ষেত্রে সবকিছু স্বাভাবিক আছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণে রাখা খুবই জরুরি, কারণ এধরনের মানসিক উদ্বেগের পরিস্থিতি একটা সমস্যা হিসাবে দেখা দিতে সময় লাগতে পারে।

শারীরিকভাবে সেরে ওঠা

অনেক সপ্তাহ ধরে যদি কেউ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে সেবা নিয়ে থাকেন তার জন্য শারীরিকভাবে সেরে ওঠা বড়ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কেট ট্যানটাম বলেন, কোভিড একটা জঘন্য, সত্যিই জঘন্য রোগ। শরীরের সবকিছু এই ভাইরাস গ্রাস করে ফেলতে পারে।

ওষুধ দিয়ে সংজ্ঞাহীন থাকার চার সপ্তাহ পর যখন রোগী জেগে ওঠে, তখন অনেক সময় দেখা যায় রোগী শুধু তার আঙুলের ডগাগুলো ছাড়া আর কিছুই নাড়াতে পারছে না। যেটা আমরা দেখছি হাজার হাজার কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, তাদের শরীরের সমস্ত অংশ আমাদের আবার সচল করে তুলতে হচ্ছে। তাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আবার ব্যবহার করার কাজটা নতুন করে শেখাতে হচ্ছে। নিজে খেতে পারা, চুলে আঁচড়ানো, উঠে বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা সব কিছু।

অনেক কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা অসম্ভব অবসন্ন বোধ করছেন এবং তাদের পেশী বিকল হয়ে গেছে। তারা এতই ক্লান্ত যে চেয়ারে আধ ঘন্টা বসে থাকলে তাদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য এরপর চার ঘন্টা ঘুমতে হচ্ছে। পেশী আবার শক্ত করে তোলা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

কেটি ট্যানটাম বলছেন, রোগীকে ঠিকমত পুষ্টি জোগাতে না পারলে, সে কখনই পুরোপুরি সেরে উঠতে পারবে না।

কাজেই এই রোগ থেকে একজনকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে ডায়াটেশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, স্পিচ এবং ভাষা থেরাপিস্ট এবং অকুপেশনাল থেরাপিস্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

কোভিড-১৯ একসঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশকে আক্রমণ করে বিকল করে দেয় বলে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা এতবড় চ্যালেঞ্জ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

শ্বাসকষ্ট

কোভিড-১৯ থেকে শারীরিকভাবে সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ চ্যালেঞ্জ হল শ্বাসকষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারা।

যারা আক্রান্ত হয়েছে, সেটা হালকা বা গুরুতর উপসর্গ হোক সকলের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।

স্যালি সিং বলেন, যারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে তাদের সকলের জন্যই শ্বাসকষ্ট স্পষ্টতই একটা সমস্যা। কারণ কোভিড মূলত শ্বাসতন্ত্রের একটা রোগ। এই ভাইরাস ফুসফুসকে সাময়িকভাবে অকেজো করে দেয়, ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ওপর হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে থাকার কারণে তাদের শরীর স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না।

ফলে সিঁড়ি ওঠানামার মত সহজ কাজও তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বয়স্ক লোকেদের জন্য এটা বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করে।

যারা নিবিড় পরিচর্যায় থেকেছেন শ্বাস নেবার কষ্ট শুধু যে তাদের ক্ষেত্রে অনেকদিন থেকে যাচ্ছে তা নয়। এই ভাইরাসে কমবেশি আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীকে এই সমস্যার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। শ্বাসক্রিয়া আবার স্বাভাবিক হতে তাদের বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিটি রোগীর যে কোন রোগব্যাধি থেকে সেরে ওঠার মধ্যে তফাত থাকে। কোভিড-১৯ নতুন একটা রোগ। এর থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার বিষয়টি নিয়ে গবেষক, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন।

স্যালি সিং বলছেন, আমরা এখনও পুরোপুরি জানি না এই রোগ মানুষের শরীরের ভেতর কতটা ক্ষতি করতে সক্ষম।

তবে তিনি বলছেন চিকিৎসকরা এখনও পর্যন্ত যেধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন, তার ভিত্তিতে এটা পরিষ্কার যে এই রোগে, বিশেষ করে গুরুতরভাবে আক্রান্তদের জন্য দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবার দরকার।

একজন আক্রান্ত ব্যক্তি ভাইরাসের প্রথম ধাক্কাটা সামলে ওঠার পরই এই চ্যালেঞ্জের আসল শুরু।

Sponsored
Leave a Comment
শেয়ার
সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored