প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে আপনি কোন বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখবেন। যদি কোন সাম্প্রতিক ঘটনা বা ইস্যু নিয়ে লিখতে চান তবে আপনাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে –
– ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত আছে
– কোথায় ঘটেছে ঘটনাটি, কেন ঘটেছে
– কবে ঘটেছে ( দিন, তারিখ, সময়)
– কিভাবে ঘটলো, সূত্রপাত, ঘটনাপ্রবাহ ও বিস্তারিত
– ঘটনা ঘটার সময়ে আশে পাশে থাকা বক্তা / একাধিক বক্তার মন্তব্য
রিসার্চ ও গভীরে জানা:
একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে আপনি যা নিয়ে লিখবেন না কেন, মনে রাখতে হবে আপনার পাঠক কিন্তু এ বিষয়ে অজ্ঞ। তাই আপনি যা জানাবেন তাই সে জানবে। ঘটনাপ্রবাহ ও ফিচার এমনভাবে লিখতে হয় যাতে পাঠক একবার পড়লেই পুরো ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পান। এ জন্য যা করতে হবে তা হলো রিসার্চ। যে বিষয় বা ঘটনা নিয়ে লিখবেন, ঐ বিষয়টি গুগল করুন। আপনার সামনে আসবে আসবে হাজার হাজার তথ্য। নিজের প্রয়োজন মত তথ্যাদি সংগ্রহ করুন ও তা প্রয়োগ করুন লেখার সময়।
বড় বড় সংবাদ সংগ্রহকারী ওয়েবসাইট আছে যার সারাবিশ্বের সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত যেমন – রয়টার্স, বিবিসি, সিএন এন ইত্যাদি৷ এদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সংবাদ তৈরী করতে পারেন। নিয়মিত পেপার, টেলিভিশনের সাথে আপ-টু-ডেট থাকা আপনার জ্ঞানকে বাড়িয়ে তুলবে রিসার্চ এর ব্যাপারে৷ একজন ভালো সংবাদকর্মী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই গবেষণা ও রিসার্চ করতে হবে ও যে কোন বিষয়ে সাধারণ জনগণের চেয়ে বেশি জানতে হবে।
ফরমেট তৈরি ও লেখনী:
নির্বাচন করুন কোন ধরনের আর্টিকেল আপনি লিখছেন। যাই লিখুন না কেন লেখাটা একটি ফর্মেটে নিয়ে আসুন যে ফর্মেট এর প্রথমে থাকবে ভূমিকা/ইনট্রো। শেষে থাকবে উপসংহার এর প্যারা। মাঝে থাকবে আপনার বিস্তারিত লেখা। সাধারণত ৬-৮ টি ভাগের মাঝে শেষ করে দেয়া হয় ফিচার৷ আপনার শব্দ সংখ্যার লিমিট থাকলে লেখার সময় তা মাথায় রাখবেন। প্যারা বিন্যাস সাধারণত এভাবে হয়ে থাকে –
-ভূমিকা
-প্যারা ১
-প্যারা ২, ৩
-প্যারা ৪
-প্যারা ৫
-প্যারা ৬-৮
-প্যারা ৯-১০
-উপসংহার
পাঠক এর ব্যাপারে ভাবা ও জানা:
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আপনাকে জানতে হবে আপনি এই লেখাটা মূলত কাদের জন্য লিখছেন। আপনার পাঠক শ্রেণি কারা। তারা কি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণ-তরুণী, নাকি বৃদ্ধ বয়সের বাবা মা – দাদা দাদীরা, ফ্যাশন সচেতন নারীরা নাকি ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা। নাকি আপনাকে লিখতে হবে সব শ্রেণির কথা চিন্তা করে।
পাঠক শ্রেণিকে আমরা কয়েকটা ধাপে ভাগ করতে পারি:
- শিক্ষিত জনগোষ্ঠী
- বিশেষজ্ঞ লোকজন
- সাধারণ জনগণ
- বিশেষ পেশার মানুষ
আর্টিকেল এর লিড ও নামকরণ:
নিউজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এর হেডিং বা নামকরণ। একটি আকষর্ণীয় ও সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম নিউজের সৌন্দর্য বাড়াবে বহুগুণে। তাই একজন সাংবাদিক হতে হলে আপনাকে হেডিং নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।
ইন্টারভিউ নেয়া ও যাবতীয়:
অনেক ক্ষেত্রে ফিচার রাইটিং এর জন্য মানুষের ইন্টারভিউ করতে হয়। মাথায় রাখতে হবে, আপনার ভালো ইন্টারভিউ নেয়ার উপর আপনার ভালো লেখা নির্ভর করবে। ইন্টারভিউ নেয়ার সময় কিছু আদবকেতা অনুসরণ করতে হয়। নিজেকে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচয় দেবেন এবং এপ্রোচ করবেন। আপনার ইন্টারভিউ নেয়ার মানুষটি যে কেউ হতে পারেন। হতে পারেন কোন সেলিব্রিটি, কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কোন তরুণ-তরুণী।
তাই ইন্টারভিউ করার সময় সম্বোধন ও কথা বলা অফিসিয়াল হওয়া ভালো।এতে পেশাদারিত্ব বজায় থাকে৷ প্রয়োজনে ইন্টারভিউ রেকর্ড করবেন। নানা বিষয়ে যাবতীয় কিছু ইন্টারভিউ করা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন ও জরুরি টপিকগুলো লিখে রাখবেন। কোন তথ্য নিয়ে কনফিউজড হলে, ছাপানোর ব্যাপারে তার পারমিশন নেয়া ভালো। ইন্টারভিউ এর জন্য ছবি খুব গুরুত্ব বহন করে। তাই ভালো ছবি ম্যানেজ করার চেষ্টা করবেন সবসময়। যার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ এর ঠিকানা / নাম্বার নিয়ে রাখুন যতে পরে কোন তথ্য লাগলে জানতে পারেন ।
ব্যতিক্রম সবসময় গ্রহণযোগ্য:
নিউজ রিপোর্ট লিখতে গিয়ে মাথায় রাখতে হবে যাতে কখনো একঘেয়ে না হয়ে যায়। সব জরুরি তথ্য যাতে থাকে। তবে এক্ষেত্রে রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে নিজস্বতা বজায় রাখতে হবে। সবাইকে আনিসুল হক, হতে হবে না। সব বিখ্যাত সংবাদকর্মীরা সেরা, কারণ তারা নিজস্বতা আনতে পেরেছেন সংবাদে, লেখনীতে, উপস্থাপনায়। তাই আপনাকে হতে হবে আপনার মতো সেরা। একটি ভালো উপসংহারে নিজের মতো করে ব্যাতিক্রম বানাতে পারেন নিজের লেখা ফিচারটি।
সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা:
যারা ছোট বেলা ইচ্ছা রাখো সাংবদিকতা করার, তাদের অনেকের প্রশ্ন থাকে সাংবাদিকতা করতে হলে কি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করা লাগবে নাকি? উত্তরটা হলো “না”। কারণ আমি যেমন মেডিকেলের শিক্ষার্থী হয়েও সংবাদিকতা করছি তেমনি আমার মতো এমন অনেকেই আছেন যারা সাংবাদিকতা বিভাগে না পড়েও অনেক ভালোই সাংবাদিকতা করছেন। তবে হ্যাঁ,ভালো কাজ শিখতে হলে ও ভালো সাংবাদিক হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
এইচ এস সি পাশের পর ভর্তি হতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা জাহাঙ্গীরনগর এ Media Studies & Journalism বিভাগে। এজন্য পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হবে। এছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যেমন, Daffodil University, BUP ( Bangladesh University of professionals), East west, North South ইত্যাদি নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ চালু হয়েছে এবং আপনি সেখান থেকে হাতে কলমে সাংবাদিকতা শেখার সুযোগ পাবেন, সার্টিফিকেট ও পাবেন৷ তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে সিনিয়র সাংবাদিক ও শিক্ষকদের সাথে কাজ করার ও কাজ শেখারও সুযোগ পাবেন।
কাজের ক্ষেত্র:
সাংবাদিকতার কাজের ক্ষেত্র বিশাল। সাংবাদিকদের জন্য রয়েছে নানা দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল। এছাড়া টিভি সাংবাদিকতার জন্য রয়েছে নিউজ প্রচারকারী অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল। এ পেশায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতা। পরিশ্রম করে আপনি টিকে থাকবেন আর অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে কাজে দক্ষ হবেন। যদি কারও প্রিন্ট মিডিয়া ( পেপার) এ লেখালেখি করার ইচ্ছা থাকে নিয়মিত খোঁজ রাখবেন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালগুলোর ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে।
অফিসগুলোতে খোঁজ রাখবেন। যখন নিয়োগ হয় এপ্লাই করবেন। কোনভাবে যদি কোথাও চাকরী হয়ে যায় তখন শুরু হবে আসল কাজ। নিয়মিত লেখা ও অভিজ্ঞতা বাাড়ানো। সিনিয়রদের থেকে কাজ শেখা। এছাড়া Contributor হিসেবে লেখা জমা দিতে পারেন কোন পত্রিকার এডিটর কে। নিয়মিত লেখা ছাপার সাথে সাথে বাড়বে আপনার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতে চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা। আপনাদের জানার জন্য কিছু বিষয় জানিয়ে দেই:
পেপারে এক একটি পাতা / বিভাগের দায়িত্বে থাকেন একজন এডিটর যিনি সব দেখেন কাজ। এডিটর এর অধীনে কাজ করেন সাবএডিটর। সাবএডিটর ২-৩ জনও থাকতে পারেন। আর সাবএডিটরদের অধীনে কাজ করেন ফিচার রিপোর্টার ও কন্ট্রিবিউটররা।
ফাইনাল টাচ, গুরুত্বপূর্ণ:
প্রতিটা লেখা লেখার পর তা অবশ্যই সাবএডিটর ও এডিটরকে দিয়ে চেক করাতে ভুলবেন না। কারণ তারা আপনার আমার চেয়ে ভালো কাজ জানেন বলেই ঐ জায়গায় আছেন এবং কাজ করছেন। তাই যে ছোটখাটো ভুল আপনার চোখে ধরা পড়বে না তা, তারা ধরতে পারবেন চোখ বুলালেই।
আয় ও সুযোগসুবিধা:
-সত্যি বলতে, আপনি যদি কোন সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেন কেমন আয় করেন, কোন সঠিক উত্তর পাবেন না। কারণ এ পেশায় আয় খুবই সীমিত। প্রথম দিকে বিনা পারিশ্রমিকেও লিখতে হতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে ও অভিজ্ঞতা বাড়লে আপনার পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধা বাড়বে৷
– কেন তাহলে মানুষ এত পরিশ্রম করে লেখে? উত্তরটা হলো ভালোলাগা, ভালোবাসা। শুধু কি তাই? এটি একটি ক্ষমতাশীল পেশা। একজন সাংবাদিককে সবাই সম্মান করে। অনেকে ভয় ও পায়। আপনার একটি প্রেসকার্ডের মূল্য অনেক বেশি। যেকোন জরুরী জায়গায়ও আপনার প্রবেশ এর অধিকার আছে, শুধুমাত্র সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে। আপনার হাতের কলমের লেখা যেমন গড়তে পারে কারও জীবন, তেমনি করতে পারে কারও সর্বনাশও। সেনসিটিভ এ পেশাতে তাই চলতে হয় অনেক বুঝেশুনে। বিশেষ করে যারা ক্রাইম, রাজনীতি ইত্যাদি সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে লেখেন তাদের কাজটা সহজ হয়ে উঠে না৷ পারিপার্শ্বিক নানা চাপের মুখে কাজ করতে হয় এই মানুষগুলোকে।
এই তো বলা হয়ে গেল প্রিন্ট মিডিয়ার( পেপার) সাংবাদিকতার নানা দিক। একই বিষয় প্রয়োগ করা যায় অনলাইন মিডিয়াতেও। আশা করছি একটু হলেও উপকার হবে সবার। যদি প্রতিদিন পেপার পড়ে মনে হয়, আমিও তো এমন লিখতে পারি, লিখতে চাই। তবে দেরী কেন? কাগজ কলম নিয়ে তৈরি হয়ে যান স্বপ্নপূরণের পথে।