জীবাণুনাশক স্প্রে বানাতে কী লাগবে?
আমি আপনাদের যেভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে বানানোর পরামর্শ দিচ্ছি তাতে শুধুমাত্র ২টি উপাদান লাগবে। তা হলোঃ ১) স্যাভলন বা ডেটল, ২) পানি।
আর আপনার পছন্দ অনুযায়ী কন্টেইনার, যা দিয়ে আপনি স্প্রে করবেন।
★ জীবাণুনাশক স্প্রে বানানোর নিয়মঃ
১) প্রথমেই একটি পরিষ্কার পাত্রে বা বোতলে ১ লিটার পানি নিতে হবে।
২) এবার এতে আপনার বাড়িতে থাকা ডেটল বা স্যাভলন মেশাতে হবে পরিমাণমতো। আমার বাসায় স্যাভলন থাকায় আমি স্যাভলন ব্যবহার করেছি। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এম. ওয়ালি এর নির্দেশনা মতে- ১ লিটার পানিতে আমি ৫০০ মিলি এর স্যাভলনের ইকোনমি প্যাকের ১ ক্যাপ ব্যবহার করেছি যা পরিমাণে ৫/৬ চা চামচ।
৩) এই স্যাভলন বা ডেটল আর পানির মিশ্রণটি এবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার বাড়িতে ব্যবহারের জন্য ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে বা জীবাণুনাশক স্প্রে।
লকডাউনের এই সময় জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন বাহির থেকে ঘরে ঢুকার সময় দরজায়, নিজের জামা-কাপড়ে আর বাজারের ব্যাগ ও জুতায়। এছাড়া ছোট একটি স্প্রে বোতলেও নিয়ে বাহিরে হাতের কাছে বা পকেটে রাখতে পারেন।
★ জীবাণুনাশক স্প্রে বানাতে কেন ব্লিচিং ব্যবহার করি নি?
করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকতে বেশিরভাগ মানুষই ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করছেন। অনেকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন যে- “ব্লিচিং পাউডার কেন ব্যবহার করা হয় নি?” আমি ব্লিচিং পাউডার অনেকগুলো কারণেই ব্যবহার করি নি। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলোঃ
১) এটি কটু বা ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত যা বেশিরভাগ মানুষই নিতে পারে না। ব্লিচিং পাউডারের তুলনায় আমাদের ঘরে বা বাড়িতে রেগ্যুলার স্যাভলন বা ডেটল ব্যবহার করা হয় আর তাই এতেই আমরা অভ্যস্ত বেশি।
২) এছাড়াও ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে বানাতে গিয়ে যদি ব্লিচিং পাউডার সরাসরি চোখে, মুখে বা ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তবে সেখানে জ্বালাতন বা প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে।
৩) তাছাড়া, ব্লিচিং পাউডার যার রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট– এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাকটিভ ক্লোরিন। বাড়িতে থাকা টয়লেট ক্লিনার, ডিটারজেন্ট পাউডার ইত্যাদির সংস্পর্শে বা অ্যামোনিয়ার বিক্রিয়ায় এই ব্লিচিং মিশ্রণ যদি কোনোভাবে আসে তবে তা থেকে সহজেই ক্লোরামাইন নামক ক্ষতিকর এক ধরনের টক্সিক ক্লোরিন গ্যাস তৈরি হবে। আর আবদ্ধ জায়গায় অর্থাৎ ঘরের মধ্যে স্বল্প মাত্রার ক্লোরিন গ্যাস থেকে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে ব্যথা এমনকি ক্লোরিন গ্যাসের মাত্রার আধিক্য হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ কারণেই ব্লিচিং পাউডার আবদ্ধ জায়গায় ব্যবহার না করে খোলা জায়গায় জীবাণুনাশক হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়।
৪) অনেকেই বাড়িতে এই ডিজইনফেকট্যান্ট স্প্রে বানানোতে পানি ও ব্লিচিং পাউডারের কোনো নির্দিষ্ট অনুপাত মানছে না। ব্লিচিং পাউডার বিরঞ্জক পদার্থ হওয়ায়, আনুপাতিক হারে যদি এটি ব্যবহার না করা হয়, তবে তা আপনার ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও কাপড়ের রং নষ্ট করে দিতে পারে।
★ সতর্কতা ও টিপসঃ
জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহারে আমাদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু দেশের লকডাউন অবস্থায় আমরা বাড়িতেই অবস্থান করছি, সেহেতু সবার আগে বেশি বেশি সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে। ঘর-বাড়ি ধোয়া-মোছার ক্ষেত্রে ডেটল, স্যাভলন বা লাইজল যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, অবশ্যই তাতে দেয়া ব্যবহারবিধি মেনে চলতে হবে। আর যা মাথায় না রাখলেই না, তা হলো, বাচ্চাদের হাতের নাগালের বাহিরে জীবাণুনাশক স্প্রে রাখতে হবে। টিপস হিসেবে বলছি- যদি আপনার ঘরে তারপিন বা রং এর স্পিরিট থেকে থাকে, তাও কিন্তু আপনি জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, এটি অ্যালকোহল জাতীয় পদার্থ। তবে অ্যালকোহল দাহ্য পদার্থ হওয়াতে এটি ব্যবহার করে আগুনের কাছে যাওয়া যাবে না।আশা করি আপনাদের লেখাটি উপকারে আসবে। আর যদি ঘরে না বানিয়ে বাজারের ডিজইনফেকট্যান্ট কিনতে চান, তবে এই লকডাউন অবস্থায়ও সাজগোজ আপনাদের জরুরি ভিত্তিতে এটি সারাদেশেই সরবরাহ করতে পারবে। চাইলে, আপনারা স্প্রে সংগ্রহ করতে পারবেন অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে শপ.সাজগোজ.কম থেকে! ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
..(সংগৃহীত)