বাংলাদেশের সামাজিক অবকাঠামোয় তিনি ছিলেন সময়ের চেয়ে অগ্রগামী। আত্মবিশ্বাস আর
আত্মসম্মানবোধ অটুট রেখে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রবলভাবে বেঁচে থাকা সহজ নয়, তিনি তা পেরেছিলেন।
বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক, মেধাবী, দুঃসাহসী, রহস্যময়,প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী,আত্মবিশ্বাসী ভাস্কর নভেরা আহমেদ। ১৯৩৯ সালের আজকের দিনে ব্রিটিশ ভারতে তাঁর জন্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপ তখন প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে দ্বিতীয় রেনেসাঁর, সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় নতুন পালকের যোগ হচ্ছে। ধ্বসে পড়ছে জীর্ণ ও পুরাতন বহু কিছুই।
সেই স্রোত উপমহাদেশেও কিঞ্চিৎ এসেছিল। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর যে ক’জন মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন শিল্প ও সংস্কৃতির বিনির্মাণে তাঁরাই মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষকালে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। আবার অনেকেই, অজানা কোন অভিমানে স্বদেশ ছেড়েছেন। তাঁদেরই একজন কিংবদন্তী ভাস্কর নভেরা আহমেদ।
নভেরা আহমেদ, কোনদিনই সম্পূর্ণভাবে তাঁকে জানা যায়নি। নিজেকে এতটাই আড়ালে রেখেছিলেন এ কিংবদন্তী।বাংলাদেশের ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রদূত, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন প্রবাস জীবন।
লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকেছেন জীবনের সব’চে বেশি সময়টুকু। পৃথিবী থেকেও বিদায় নিয়েছিলেন আড়ালে থেকেই । কিন্তু তাঁর ভাস্কর্যগুলো চিরকাল বলে যাবে, সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এক মানুষ ছিলেন নভেরা।
মৃত্যু পর্যন্ত বাংলাদেশী পাসপোর্ট বিসর্জন দেননি, এবং ২০০৯ সালের একটি তথ্য থেকে জানতে পারি তিনি প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দূতাবাসের কর্মকর্তার সাথে বাঙলায় কথা বলেননি।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ভাস্কর্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, নভেরা আহমেদকে একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।
সেই সম্মাননা গ্রহণের জন্যও নভেরা দেশে আসেননি! শিল্পী শাহাবুদ্দিনের হাত থেকে তিনি এই সম্মাননা গ্রহণ করেন প্যারিসের এক হোটেলে।
নভেরা আহমেদ, আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মহীয়ান মানুষ।
আমাদের গৌরবের শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। স্রস্টা যেন পরম মমতায় আপনাকে চির শান্তির স্থানে রাখেন।