সাম্প্রতিক শিরোনাম

"ক"হিনী- ৪টি গল্প, একটি উপাখ্যান

বন্ধুর প্রেয়সীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ-

“ক’র অনেকগুলো নাম ছিলো, “বল্টু”টাই এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী মনে পড়ছে, যদিও আমি ছাড়া আর কেউ কখনো ওকে এই নামে ডাকেনি। তৃতীয় শ্রেণী থেকে আমার সেরা বন্ধু “ক” এক অসাধারণ ছেলে ছিলো। আমি জীবনে আর এমন কোন মানুষ দেখিনি যার এতো বেশী বন্ধুবান্ধব থাকতে পারে। আমার চেয়ে একশ্রেণী উপরে পড়তো, যখন উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ছিলো, পুরো মহাবিদ্যালয়ের ওই বর্ষের প্রতিটি ছেলে আর অর্ধেক মেয়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুতা ছিলো। “ক” নেতাগোছের কেউ ছিলো না, মনে মনে ছাত্রদলের সমর্থক ছিলো কিন্তু ডাক দিলে লীগ, শিবির, ছাত্র ইউনিয়ন যে কোন নেতার সামনেই হাজির হয়ে যেতো। প্রতিটি দলের নেতা ওকে পছন্দ করতো আর বোঝাতে চেষ্টা করতো যে ওর মধ্যে কতোটা সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এবং একটু গুরুত্বের সাথে নিলে রাজনীতিতে ওর ভবিষ্যতে কতোটা উজ্জ্বল। তাছাড়া, ওনারাতো আছেনই!

“ক” মহাবিদ্যালয়ের এক বদমাস গোষ্ঠির বিশেষ অনুরক্ত ছিলো যার নাম হচ্ছে “হোল গ্রুপ” (Whole Group) সব দলের বখাটে ছেলেরা মিলে নিখাদ অপকর্মের স্বার্থে এই বিশেষ দফতরহীন চক্রটি  বানিয়েছিলো।

এতো গ্যালো নিজের শিক্ষায়তনের কথা, সেকালে খুলনা শহরে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মহাবিদ্যালয় ছিলো। “ক” এর সুদীর্ঘ বন্ধু তালিকা নিজ বিদ্যাপীঠের গন্ডি পেরিয়ে আরো দুটি মহাবিদ্যালয়ে বিস্তৃত ছিলো। বন্ধুতা মানে, ক্যাবল দ্যাখা হলে “ক্যামন আছো? ভালো আছি” গোছের না, প্রয়োজন হলে টাকা ধার করা, সমস্যা হলে মারপিট করতে যাওয়া, কোন্দল হলে সমঝোতা করানো বা মন উতলা হলে একসাথে বসে নেশা করা ধাঁচের বন্ধুতা। বলতে দুঃখ নাই, বন্ধুটি আমার হ্যানো অপকর্ম নাই যা জীবনে অন্তত একটাবার নিজে করে দ্যাখেনি। আজকাল ব্যারিষ্টার, কিন্তু কোন এক যুগে ওর কোটিপতি বাপকে মোটা অংকের উৎকোচ গুনতে হয়েছিলো যাতে সুন্দরবনের এক গহীন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর হাতে আটক পুত্রের ক্রস্ফায়ার না হয়ে যায় (Operation Clean Heart)।

এতো কিছুর পরও এটা বলা জরুরী যে “ক” বদমাশ ছিলো, অপরাধী না। মারপিট করেছে ঠিকই, গুন্ডাগিরি কখনোই না। এহ্যানো তারকাখ্যাতি সম্পন্ন আমার সখাটির দূর্বলতা ছিলো মাত্র একটা- অত্যন্ত ঘনঘন নূতন কোন মেয়ের প্রেমে পড়ে যাওয়া, কিন্তু হয়তো অতি রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে বলেই, মেয়েটাকে কখনো পটাতে না পারা!এমননা যে মেয়েদের সাথে কথা বলতে ওর কোন সংকোচ বা জড়তা ছিলো, একটু বেশীই খোলামেলা ছিলো বরং, খামোখাই অনেক মেয়ের হাত ধরে বসে গল্প করতো, কারো কারো সাথে একত্রে বসে বিড়ি টানতো, দু’একজনের বাড়িতে পর্যন্ত ঘড়ির কাটার যে কোন দাগে চলে যেতে পারতো। আমি বেশ কিছু মেয়েকে জানতাম যারা মনে মনে, অথবা প্রকাশ্যেও ওর প্রতি বিশেষ দূর্বল ছিলো।

কিন্তু একিলিসের গোড়ালিটা ছিলো এই যে পুরো জীবনে “ক” নিজে যতোগুলো মেয়ের প্রেমে পড়েছে কেউ কখনো সাড়া দ্যায়নি। য্যামনটা বলেছি, ও অতিবন্ধুবৎসল ছিলো। অনেক সম্ভাব্য বনিতা ওকে শেষতক বান্ধব বানিয়ে ছেড়েছে। বল্টুর প্রেম উপাখ্যান আমার কাছে চিরকালই এক মহা আমোদের হেতু ছিলো। ওর জীবনের প্রতিটা প্রেমই “প্রথম প্রেম” কিন্তু কোনটাই ‘শেষ প্রেম’ নয়।

শীতের সকাল, আজকের দিনটা শুরু হয়েছে হালকা এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে। হঠাৎ বহু বছর পূর্বের আরেক বৃষ্টি ভেজা সকালের কথা মনে পড়ে গ্যালো। খুলনা ঘন বরষার শহর, মধ্য-দক্ষিণ সড়কের মাঝামাঝি কোথাও কেয়াদের বাসা। কাক ভেজা আমি সোজা গিয়ে ওদের বারান্দার দরজায় কড়া নাড়লাম। আর কেউ না স্বয়ং কেয়া বেরিয়ে এলো।

“হাই! আমি ক’র বন্ধু, আমার নাম অর্য্য’।

অর্য্য! যশোরে থাকো?

হ্যা।

তোমার কথা অনেক শুনেছি। ভেতরে এসো, “ক” কই?

“ওতো বাইরে।” “ক” তখন রাস্তার ঠিক মাঝখানে দুহাতে পেখম মেলে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।

বাইরে ক্যানো? দুজনেই ভেতরে চলে এসো।

না না আমরা দুজনেই ভিজে একসা হয়ে আছি, তোমাদের মেঝে নোংরা হয়ে যাবে।

কোন সমস্যা নেই, আসোতো।

সমস্যা আসলে একটা আছে, এতো সুন্দর বৃষ্টি রেখে আমরা ঘরের ভিতর ঢুকতে পারবোনা৷ গুনাহ লাগবে।

তোমরা দুটোই বদ্ধ পাগল, এটা জানো? ঈশ্ আমারও খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে, আমি আসি?

আরে নানা! খোলা রাস্তা না হলে আসতে বলতাম, তোমার মার কাছে বকা খাওয়াতে চাও?

বেচারী ৯০এর শেষ ভাগের মধ্যবিত্ত নায়িকা, খানিকটা দমে গ্যালো। কিছুক্ষণ পর ৩ কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এলো। তিনজন মিলে চা খাচ্ছি, ও বারান্দার ভেতরে আর আমরা বাড়ির সামনে, ভিজতে ভিজতে। সেদিন আমরা আরো ২ ঘন্টা ওভাবেই ওখানে দাঁড়িয়ে ত্রিমুখী আড্ডা জমিয়েছিলাম।

২ ঘন্টা পর খুলনার ঘনঘোর বরষা থামলো, ফিরতি পথে “ক” জানতে চাইলো ক্যামন দেখলি?

দোস্ত আমি নিজেই প্রেমে পড়ে যাচ্ছি, দারুণ মেয়ে!

“ক” একগাল প্রশস্ত একটা হাসি দিলো। কেয়া “ক” এর জীবনের মাত্র দুইটা মেয়ের একটা, যার সাথে আরেকটু একাগ্রতায় চেষ্টা করলেই গল্প পূর্নতা পেতে পারতো। কিন্তু কুসুম কুসুম এই ভালোবাসা, ক্যানো শেষতক ‘প্রেম’ হয়ে উঠতে পারেনি আমার আজো জানা হয়নি। বন্ধুটির আমার সারা জীবনেই লেগে থাকার ক্ষমতা খুব কম।

“ক”র প্রতিটি হৃদয়ভংগই একেকটা অডিসি, আর ওর প্রায় প্রতিটা আকর্ষণের সাথেই আমার প্রথম দ্যাখার আজব কিছু গল্প লুকিয়ে আছে। ভাবছি সময় পেলে একে একে সবগুলো লিখে ফেলবো।

################

প্রথম “প্রথম প্রেম”

তরু আপা আমাকে দু’চোখে দেখতে পারতেন না, ওনার মা’ও না। ওদের কাছে আমি ঘরের অতিআদরের ছোট ছেলেটার জীবনে এক কালনাগ বিশেষ, তার বিপথে যাবার প্রধান হেতু।

উচ্চ বিদ্যালয়ে উঠেই শ্রেনীকক্ষ হতে ক’য়ের প্রথম অন্তর্ধান (আসলে চতুর্থ  শ্রেণী থেকেই নিয়মিত), প্রথম ধূমপান, প্রথম মদিরা সেবন, ঘর ছেড়ে প্রথম পলায়ন.. সবই আমার সহযোগিতায়, তাই ওঁদের অভিযোগগুলোকে খন্ডানোও আমার জন্য কিছুটা কঠিণ।

এতো লোকের মাঝে ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ক’র বাবা। আমার দিকে খুব অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে তাকাতেন। পছন্দ অবশ্যই করতেন না, কিন্তু রাগও কখনো দেখিনি ওনার চোখে, এমনকি ওনার নগদ ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে দুজনে ফেরারী হবার পরও না। সেটা ২০০১ সাল, সেযুগে দেড় লাখের দাম ছিলো!

আমার ক্যানো য্যানো মনে হতো নিজের জীবনে যে উশৃংখলতাগুলোর অভাব উনি বোধ করতেন, আমাকে দেখে তার একটা ঠিকানা খুঁজে পেতেন। ক’র পুরো পরিবারের চোখে আমার আজতককার ভাবমূর্তি “the ideal bad boy’এর।

সেসব কিছু যাই হোক, এহ্যানো বৈরী আর বন্ধুর পারিবারিক আবহের ঠিক মধ্যেখানে, তরু আপার বিয়েতে আমি কি করছি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। চারপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম শ’দেড়েক অতিথির মাঝে বন্ধুকুল থেকে ক্যাবল আমিই উপস্থিত।

“আপুর বিয়ে আমার জীবনের একটা উল্ল্যেখযোগ্য দিন, আমি চাইছিলাম যে তুই উপস্থিত থাক” ক একেবারে টলিউডি ঢঙে কথাটা বলেই নিমন্ত্রিতদের ভীড়ে নিখোঁজ হয়ে গ্যালো।

ঘটনাতো সত্য, আমি ভাবলাম, আমরা দুজনেই দুজনের জীবনের এমন সব মুহুর্তের সাক্ষী যা অন্য কাউকে বলা দূরে থাক নিজের কাছে স্বীকার করাও দুষ্কর। কতো বর্ণালী দিন আমরা একসাথে দেখেছি… য্যামন ক’র প্রথম “প্রথম প্রেম”!

যেহেতু ক ইঁচড়ে পাকা, তার প্রথম গহন প্রেম পঞ্চম শ্রেণীতে। মেয়ের নাম ‘শিমু’, দক্ষিণ জলাধার সড়কে আমাদের কোনাকুনি উল্টো দিকের বাড়িতে থাকতো। পাড়ায় এতো হ্যাঙলা ছেলে থাকা স্বত্বেও ক ছাড়া আর কেউ ওর প্রেমে পড়েছে বলে কখনো জানা যায়নি।

দেখতে ভালোই ছিলো যদিও, আমার আজো মনে আছে, বাঙালী মেয়ে হিসাবে অস্বাভাবিক ফর্সা ত্বক, অনেকটা গোরাদের মতো, আর টানা টানা ভাবুক চোখ। সমস্যাটা অন্য জায়গায়, মেয়েটার মধ্যে বাঙালী থেকে ইংরেজভাব বেশী ছিলো। ছেলেদের মতো ছোট করে ছাঁটা চুল, আর চিরকাল ডোরাকাটা ঢোলা জামা-পাজামা পরে থাকতো। না কখনো কোন মেয়েলি পোষাক পরেছে না কোন বন্ধু বা বান্ধবী ছিলো। বাসা থেকেও বের হতো না, কারো সাথে মিশতোও না। শুধু প্রতিদিন পড়তি দুপুরে দুহাতে শিক ধরে দাঁড়িয়ে নিজেদের বারান্দা থেকে পাশের মাঠে আমাদের খেলতে দেখতো, মানে যেখানে ক এলাকার তুখোড় সব গোল্লাবাজদের টক্কর দিয়ে গোলা ছুঁড়তো, আর আমি আউট হলেও মানতে চাইতাম না।

যাহোক আমীর খানের দিল হ্যায় কী মানতা নেহী তখন নূতন নূতন ছাড় পেয়েছে। ভিসিয়ারের কল্যাণে বহু তরুণের মনে তখন “ইশকদা লাগীয়া রোগ”, কও হঠাৎ কিভাবে দিনরাত উজাগর করে শিমুর স্বপ্নে কাতর হয়ে পড়লো।

ক কখনো ভেনিসে যায়নি আর গান বাজনা থেকে চিরকাল যোজন ক্রোশ দূরত্বে থেকেছে। কিন্তু বিকেল হলেই শিমুর বাড়ির সামনে “সেরেনাতা” ভঙ্গীতে রোজ পায়চারীর কার্যক্রম শুরু করলো। নায়কের সাথে তার চ্যালা থাকা জরুরী, তাই গোলগলা গেঞ্জির ওপর বোতাম খোলা জামা আর কলার উঁচিয়ে আমাকেও তাতে সঙ্গ দিতে হতো। এই পায়চারীর ছকটা বড়ো অদ্ভুত ছিলো, শিমুর বাড়ির এমাথা-ওমাথা ৩০ পা, তারপর ঘুরে দাঁড়াও আবার ৩০ পা, ঘোরো…।

প্রতি চক্করে মাত্র একটা বার শিমুর সাথে চোখাচোখি হতো, এরচেয়ে বেশী কিছু আমাদের ঐ বয়সে আর ভাবতেও পারতাম না। মুশকিলটা ছিলো এই যে আমাদের এই “রঞ্জনাটি” একই গাঁএ নয় বরঞ্চ একই পাড়ায় থাকতো, ফলে শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত এই অংশটিতে কারোর ক’র এই দৈবাৎ অধঃপাতের কথা জানতে আর বাকি ছিলো না। অন্ততঃ আমরাতো তাই ভেবেছিলাম!

আগেই বলেছি শিমু কারো সাথে মিশতো না। আমরা যখন বস্তির ছেলেদের সাথে মিশে মহানন্দে রোজ নূতন নূতন অঘটন ঘটাতাম, কিম্বা তেতলার জুঁইয়ের বান্ধবী মহলে চাপাহাসির কারণ বনতাম,  ও তখন নিজের মতো থাকতো। আর হঠাৎ হঠাৎ রাস্তায় দ্যাখা হয়ে গ্যালে অবাক একটা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকতো, য্যানো আমরা খুব দুর্বোধ্য কিছু। ও নয় বরং আমরাই য্যানো খানিকটা আজীব!

সূদীর্ঘ ৭ দিনেও এই “অবাক দৃষ্টি” পরিবর্তিত না হওয়ায় ক ভাবলো কিছু একটা তড়িৎ ব্যবস্থা নেবার সময় এসে গ্যাছে। ক’র জনসংযোগ দক্ষতা ছিলো মারাত্মক, নিজের পছন্দের মেয়েটার সামনে সরাসরি দাঁড়ানোর সাহস না থাকলেও, খুব দ্রুত কাকলী আপার খোঁজ বের করে ফেললো। জানা গ্যালো শিমূ কারো বাসায় না গ্যালেও কাকলী আপারা দুই বোন নিয়মিত শিমুদের বাসায় যান এবং শিমুর সাথে বিশেষত তাঁর বেশ খাতির। এক সন্ধ্যায় কাকলী আপা আমাদের ৪ তলা বাসার ছাতে আসতে রাজি হলেন। ক অতি উগদ্রিব হয়ে আমাকে জানালো- “তুইই কিন্তু সব কথাবার্তা বলবি”। কাকলী আপা নিতান্ত ভালো মানুষ আমরা কখনো হাসিমুখ ছাড়া তাকে দেখিনি, আর বন্ধুর জন্য এটুকু করবো না? আমি মুহুর্তে রাজি হয়ে গেলাম।

এরশাদ শাসনের শেষ সাল ছিলো সেটা। প্রতিদিন স্বৈরাচার বিরোধী মিছিল বের হতো, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো’ দলধ্বনি  দিয়ে আমরা পুলিস কন্ট্রোল রুমের দিকে এগিয়ে যেতাম। আর এলাকার বড়ো ভাইরা পূরানো টায়ারে আগুন ধরিয়ে সেগুলো সজোরে গড়িয়ে দিতেন টহলরত আরক্ষা (Police) বাহিনীর দিকে। ব্যস মুহুর্তে এরশাদের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী বৃষ্টির মতো এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তো। সবাই জানতো ওগুলো রাবার বুলেট, কিন্তু নিজের গায়ে বিঁধিয়ে পরীক্ষা করার খায়েস কারোরই ছিলোনা, তাই সব হুড়মুড় করে ভেগে আসতাম। কখনো কখোনো দুএকজন গ্রেফতার হয়ে যেতো, সেইটাই ছিলো আসল ভয়। সামরিক একনায়কের আমলে বিক্ষোভ করে গ্রেফতার হওয়াটা খুব উত্তম কোন বুদ্ধি না।

অবশেষে বহু প্রতিক্ষিত দিন। কাকলী আপা দ্যাখা গ্যালো আমাদের থেকেও বেশী উৎসাহী পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। ক ওকালতি শুরু করতে না করতেই তিনি বলে উঠলেন সেকি! তুমিও ওকে পছন্দ করো নাকি? আমরা দুজনেই তো শুনে টাব্বুস! জানা গ্যালো এই যে গত কয়েকদিন ধরে আমি আর ক শিমুর বাড়ির চারপাশ পরিক্রম করছি, এতে করে তাঁর ধারণা হয়েছে আমিই মূল প্রার্থী ক নয়! দুজনেই এমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম যে পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেবো বুঝতেই পারলাম না। কাকলি আপাকে একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতেই উনি বললেন “চালাকি করার চেষ্টা করে লাভ নেই, আমি ভালো করেই জানি কে শিমুকে পছন্দ করে, এখন কথা ঘুরিয়ো না।”

নৈঋত বাঙলার এই প্রেম কাহিনীতে হঠাৎ হিন্দী চলচিত্রের রঙ লাগলো। পূজার বাগদান পরবর্তী সম্বর্ধনা থেকে যেভাবে আমীর খান পিছুপায়ে, সবার অলক্ষ্যে বেরিয়ে গিয়েছিলো ক ঠিক ত্যামনি ছাত থেকে নীচের সিড়ি ধরে চলে গ্যালো। কাকলি আপা খানিকটা ঝুঁকে আমাকে জিগ্যেস করলেন-  তুমি চাইলেই আমি কথা আগে বাড়াতে পারি, করবো? আর আমার মাথার মধ্যে তখন- “তু পাসান্দ হ্যায় কিসি অর কি, তুঝে মাঙতা কোয়ী অর হ্যায়!”

################

না বলা বারতা

কথায় বলে একজন মানুষের দৌড় কতোটুকু, তা বোঝা যায় তার শত্রুর মাপ দেখে। কএর বাবা, আমাদের বন্ধুমহলে “সাবের সাহেব” নামে এতো বেশী পরিচিত ছিলো যে এমনকি ক নিজেও তাঁকে আড়ালে আবডালে “সাবের সাহেব” বলেই ডাকতো। শূন্য থেকে শুরু করে তিনি একজন মাঝারী ধাঁচের কোটিপতিতে পরিণত হওয়ায় আমাদের বন্ধুদের মাঝে তাঁর একটা নায়কোচিত প্রতিচ্ছবি ছিলো। সত্যি বলতে একটি মাত্র ব্যাক্তি যে তাঁর উপরে সর্বদা ক্ষেপে থাকতো হচ্ছে ক নিজে! আমি তাঁকে ৩ কামরার এক মধ্যবিত্ত বাসার ভাড়াটে থেকে উত্তর আর দক্ষিণ বাঙলা ব্যাপী নানাবিধ ব্যবসার মালিক হয়ে উঠতে দেখেছি।

যতোদিনে আমরা বেড়ে উঠেছি ততোদিনে সাবের সাহেব আঞ্চলিক হিসাবে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ট্রাক, বাসের বিশাল বহর, বোধহয় ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অথবা উল্টোটা। পাশাপাশি কম দামে ভূমি কিনে, সেটাকে আবাসিক জমি বানিয়ে, কবছর পর উঁচু দামে বিক্রি করেন। শহরের অন্যতম একটা কাঁচাবাজারও তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তার উপর সরকারী দলের কোন এক অঙ্গ সংগঠনের নেতা, আমাদের এলাকার দুই নগরপাল তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচিত।

ভাবা যায়, জীবনে প্রথমবার আমার নাম পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এই সাবের সাহেবের বদৌলতে? ছবিসহ শিরোনাম- “ধরিয়ে দিন!” আরো আছে, আরক্ষা বিভাগের (Police) খাতায় প্রথমবার আমার নাম জমা পড়েছেও সাবের সাহেবের দাক্ষিণ্যে- “নিখোঁজ”! আমি নিপাট ভালো মানুষটি ছিলাম বলছিনা, কিন্তু জীবনের দুই দশক পার হবার আগেই এমন সমারূঢ় প্রতিপক্ষ নিসন্দেহে আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করছিলো!

ক সব দিক থেকে আমার বিপরীত ছিলো। আমি দুই গজ সমিতির সদস্য, ও টেনেটুনে ৫ ফুট ৪। আমি পড়ালেখায় আজন্ম লবডংকা, ও প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্ত্বি পাওয়া ছেলে। এটাই ওর মায়ের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ, আমার সাথে খাতিরের আগে ওর রীতিমতো ভালো ছাত্রদের মধ্যে গুণতি হতো।

সারাটা জীবন মানুষ এমন কারো খোঁজ করে যে তাকে একটুখানি বুঝবে, যাকে মনের কথা খুলে বলা যায়। ক আর আমার সেই সমস্যা ছিলো না। আমরা একে অন্যের মগজের ভেতর পর্যন্ত পড়তে পারতাম। যে কোন পরিস্থিতিতে অন্যজন কি ভাবছে, কি করতে যাচ্ছে আমরা তা ধরে ফেলতে পারতাম, আলোচনার দরকার পর্যন্ত পড়তো না। রাজনীতি হোক বা ব্যাবসায়ীক সিদ্ধান্ত, দুজনের ভাবনার ছক আশ্চর্যজনক ভাবে হুবুহু মিলে যেত। দুজন একই ধরণের বই পড়তাম, এমনকি দুজনের প্রিয় লেখকও ছিলো এক!

এমন বন্ধু হাজার বছরে মাত্র একবার পাওয়া যায়, ভাবা যায় এমন কেউ পিঠে ছুরি মারতে পারে? বাস্তবিক কও তা করেনি অবশ্য, ছুরিটা সোজা বুক বরাবর চালিয়েছিলো। সুনীল বলেছিলেন যে বাঙালী ছেলের প্রথম প্রেম হয় খালাতো বোনের সাথে, যেহেতু ক প্রথাবিরোধী, তার আরেক “প্রথম প্রেম” আমার খালাতো বোনের সাথে!

বলে রাখা ভালো যে ##হানা নীপা আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ ছিলো না, এমনকি আমরা এক গ্রাম থেকেও না, কিন্তু তারপরও লতায় পাতায় জড়িয়ে কিভাবে য্যানো সে আমার ‘খালাতো বোন’। ক আর আমার দুজনের জীবনেই একটা বিয়োগান্ত সংযোগ ছিলো এই যে আমরা বারবার নামের শেষাংষে “হানা” আছে, এমন মেয়েদের প্রেমে পড়ে যেতাম।

নীপা অবশ্যই ভালো লাগার মতোই একটা মেয়ে, সাজতো কিন্তু চোখে পড়ার মতো না। সবার সাথেই হাসিমুখে কথা বলতো, বিশেষভাবে কারো সাথেই না। দূরের হলেও আত্মীয় বলে বলছিনা, নীপা খুব চমৎকার একটা মেয়ে ছিলো, সরকারী মজিদ মেনোরিয়ালে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষের একমাত্র মেয়ে যার কারো সাথে কোন চক্কর চলছিলো না।

আমি নীপাকে মহাবিদ্যালয়ের আগে থেকেই চিনতাম, পারিবারিকভাবে অবশ্যই। দুজনেই আলাদা আলাদা জেলা থেকে হলেও ঔ সময়ে দুই পরিবারই খুলনা শহরে বসবাস করছিলো। এক বিয়েতে প্রথম পরিচয়। সারাটা সন্ধ্যা সমবয়সীদের একটা বড়ো দল বানিয়ে হইচই আর ওর খুড়তুতো বোন ছন্দার সাথে প্রায় একটা কিছু হয়েই যাচ্ছিলো বলে আমাকে খানিকটা মশকরার চোখে দেখতো।

কোন কোন প্রেম আসে বসন্তের সকালের মতো। বহু প্রতীক্ষিত অথচ এতো ধীর পায়ে যে টেরই পাওয়া যায় না কখন এলো, কিন্তু তার উষ্ণতা যখন মনকে গ্রাস করে, তখন তাইই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড়ো সত্য, বাকী সবকিছু ম্লান হয়ে যায়। ক’র সাথেও এরকম কিছুই হয়েছিলো। নীপা আমাদের সামনেই ছিলো, এক শ্রেণীতে পড়ালেখা করে, এক ক্যান্টিনে আড্ডা মেরে ৪ মাসে যা হয়নি, হঠাৎ এক সকালে তাই ঘটে গ্যালো। আব্দুল্লাহ স্টোরের বাকির খাতায় হিসাব লিখতে লিখতে ক গম্ভীর গলায় জানালো- “দোস্ত আমার মনে হয় আমি নীপার প্রেমে পড়েছি, ওকে ছাড়া বাঁচবো নাহ!” সাথের দুচারটা বন্ধু মহানন্দে উল্লাস করে উঠলো “হো! দোস্তো মাল খাওয়াবা!”

কিন্তু আমি আমার বন্ধুটিকে খুব ভালো করেই চিনতাম, তাই সাবধান করলাম- পাগল হয়েছিস? নীপা খুব ভালো একটা মেয়ে, ওর থেকে দূরে থাক।

-ও ভালো মেয়ে মানছি, কিন্তু আমি কি খারাপ?

এতো কথার দরকার নেই, তোকে দূরে থাকতে বলেছি, দূরে থাক।

-তোর সমস্যাটা কি?

বলেছিইতো, নীপা খুব ভালো একটা মেয়ে।

লোকে বলে বেঁটে লোক শয়তানের বন্ধু, ক যদিও আমারই বন্ধু, পাক্কা শয়তানের মতো একটা হাসি দিয়ে বললো- “আমি কি খারাপ?”

আমি ভেবেছিলাম কথাবার্তা সব ওখানেই শেষ, কিন্তু বিকালের চায়ের আড্ডায় আবার কথা উঠলো। “তোর সমস্যা কি?” ক জানতে চাইলো।

“জানিসনা ও আমার বোন?”

-“হ্যা তোকে বলেছে, ক্যামন বোন তাও বলতে পারিস না, আচ্ছা ওর গ্রামের নাম কি বল? যদি বলতে পারিস তাহলে কখনো বিরক্ত করবো না, কথা দিলাম।”

“উজানী, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ!!” আমি এক নিশ্বাসে চিৎকার করে উঠলাম। তারপরই মনে পড়লো উজানী তানিদির দেশের বাড়ি, তানিদি নীপার খালাতো বোন ও আমাদের পরিচয়ের সূত্র, নীপার গ্রামের বাড়ি নিশ্চয়ই অন্য কোথাও হবে। ক’র দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। শুধু আমি না, ওয়ো আমার মগজ পড়তে পারতো, হারামজাদাটা ঠিকই বুঝে ফেলেছে। “নীপার পিছনে লাগবি না”, আমি শক্ত ভাষায় বলে দিলাম।

-ক্যান, তোর সমস্যাটা কি? ক’র বদমাইস মাথায় কিছু একটা চলছে আর ও তাতে খুব আমোদ পাচ্ছে।

“তোকে মানা করেছি, শুনবি, ব্যস!”

ক এক গাল হাসি দিয়ে বললো “এতো বেশী সংরক্ষণশীল? আমারতো সন্দেহ হচ্ছে তলে তলে তুইই ওকে পছন্দ করিস নাতো?”

“হাহ?” আমি আকাশ থেকে পড়লাম, “এটা আবার ক্যামন কথা?”

–তুই নিশ্চয়ই ওকে মনে মনে পছন্দ করিস, সমস্যা নেই, আমাকে বল, তাহলে আর পিছু করবো না।

“পাগল হয়েছিস?”

-তাহলে আমাকে সুযোগ দে, শালা বাবু!

“শালা ফালা করবিতো এক থাপ্পড় খাবি।”

-আচ্ছা তারমানে তুই ওর ভাই হতে চাস না? আমিও তাই ভাবছিলাম।

“দ্যাখ তোর এইসব নাটক আমার পছন্দ হচ্ছে না। শেষবার বলছি, ভালো করে শুনে রাখ- নীপার পেছনে লাগবি না!” ঠান্ডা গলায় কথাগুলো বলে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম।

-“আরে শোন শোন।” আমি না দাঁড়িয়ে চলে এলাম।

মহাবিদ্যালয়ে নীপার দুইটা সাংকেতিক নাম ছিলো, প্রথমটা “লেসসি”, ক্যাননা শুধু মেয়েদের সাথেই ঘুরতো, কোন ছেলের আশেপাশে দ্যাখা যেতো না। দ্বিতীয়টা “সিঙ্গাড়া”, কারণ বিদ্যাপীঠের পাশে কাশেমের পান্থশালা ছিলো তার প্রধান তীর্থপীঠ, আর প্রিয় খাবার অবশ্যই- সিঙ্গাড়া!

পরদিন সকালে মহাবিদ্যালয়ে ঢোকার মুখেই দেখি নীপা ৩ বান্ধবীর সাথে কাশেমের দোকানে ঢুকছে। যথার্থ! মনে মনে ভাবলাম। ক শহীদ মিনারের সিড়িতে দল পাকিয়ে বসে আছে, দেখেও উপেক্ষা করে সামনে এগোলাম। দীর্ঘ দুই দশকের সম্পর্কে বহুবার আমাদের বন্ধুত্ব “চিরকালের মতো” শেষ হয়েছে। এটাও সেরকমই একটা দিন। ক সরাসরি রাজনীতি না করলেও আমি ছিলাম কোন এক চুনোপুঁটি সংগঠনের পাতি ছাত্রনেতা, একারণে বহির্গত হওয়া স্বত্বেও ক’র বিদ্যাপীঠে  আমার অবাধ বিচরণ ছিলো। শহরের সবচেয়ে ঘটনাবহুল মহাবিদ্যালয়, কে দূরে থাকতে পারে? আসলে আমি তখনও মাধ্যমিকের ছাত্র, তাই প্রথম দিকে অনেকে মিশতে সন্দিহান থাকলেও ক এমন রটনা ছড়িয়ে দিয়েছিলো যে আমি পাক্কা চাক্কুবাজ, ঘ্যাঁচ করে কারো পেটে চাকু ঢুকিয়ে দেওয়াটা আমার জন্য ডালভাতের মতো!! এজন্য সবাই একটু সমীহ করতো, আর কোথাওই আনাগোনা করতে বেগ পেতে হতো না।

বারান্দা দিয়ে হাঁটতেই কোন এক শ্রেনী কক্ষের ছেলেরা আমাকে দেখে হইহই করে উঠলো, সবই বন্ধুবান্ধব, তো আমি মহা আয়েশে শিক্ষকের মঞ্চে উঠে জ্ঞান বিতরণ শুরু করলাম “বন্ধুরা, আজকের পাঠ্য বিষয়-প্রেম কি?”

সবাই হাহা করে হেসে উঠলো, পিছন থেকে আওয়াজ পেলাম- “পন্ডিত মশাই! আমি জানি প্রেম কি, বলবো?” ক সাঙ্গপাঙ্গ সমেত হাজির।

আমি বুঝে ফেললাম কিছু একটা গড়বড় আছে, কিন্তু কিছু বলার বা করার আগেই ক মঞ্চে উঠে এলো। “ভাইয়েরা, আমাদের পন্ডিত মশাই আজকে প্রেমের পাঠ পড়াচ্ছেন ক্যানো জানেন কি? কারণ তিনি নিজেই আজ প্রেমে পড়েছেন!”

আমি বুঝে গেলাম কি ঘটতে যাচ্ছে চটজলদী বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই ৬/৭ জোড়া হাত আমাকে আঁকড়ে ধরলো।

ক’র ভাষণ চলছে- “মেয়ের নাম কি জানেন কি?”

-কে? কে? (ইয়াল্লাহ! আমি মনে মনে ভাবলাম)

“মেয়ে হলো লেসসি, আর আমাদের পন্ডিত মশাই আজই সবার সামনে তাকে প্রস্তাব দেবেন, এবং এখুনি!!”

“আরে না!” আমি চমকে উঠলাম।

-হো!হো!! পুরো শ্রেনীকক্ষ একসাথে উচ্ছাস করে উঠলো। ঘটনার রাশ টেনে ধরার এখনি সময়, আমি ঝটকা দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে মঞ্চের সামনে এগিয়ে গেলাম- “প্রিয় ভাইয়েরা…” আমার কলধ্বনি কারো কান পর্যন্তও পৌছালো না।

“O loves Lessie! YOoo!!” ক চিৎকার করে উঠলো।
Hoooo! ৪০/৫০জন ছাত্র একযোগে হুংকার দিয়ে উঠলো। একটা চামচা গোছের ছেলে এর মধ্যে এসে ঘোষণা দিলো “সিঙ্গাড়া তেতলার পাঠাগারে!”

-চলো! ক বলে উঠতেই প্রায় ৩০ জনের একটা বাহিনী আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে বের হলো। “আরে শোন থাম বলছি!” কিছু বোঝার আগেই আধা শিক্ষায়তন  ঘুরে আমরা পাঠাগারের সিড়ির সামনে হাজির হলাম, ৩ তলার বারান্দা থেকে খবর এলো “লেসসি এখানে নেই!” যাক বাবা এযাত্রা প্রাণে বাঁচলাম! “কি ব্যাপার?” বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো। ক খুব দ্রুত দুচার কথায় ‘পরিস্থিতি’ বুঝিয়ে বললো। “লেসসিতো কাশেমের দোকানে”, একটা মেয়ে জানালো, “সিঙ্গাড়া খাচ্ছে”। যথার্থ! মনে মনে ভাবলাম। তখন বিম্পী সরকারের আমল, কিন্তু ছাত্রদলের মিছিলেও এতো ছেলেমেয়ে হয় না, আমি কেটে পড়ার চেষ্টা করতেই কয়েকজন আমাকে জোর করে মাথার ওপর তুলে নিলো আর পুরো শোভাযাত্রাটা কাশেমের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। নীপা আর তার তিন বান্ধবী সবে বের হচ্ছে, সারাদিন ওখানেই থাকে কিনা কে জানে। বিশাল উদ্দেলিত ঝটিকা বাহিনীটি নীপার সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়াতেই, সে অবাক হয়ে কি হচ্ছে জানতে চাইলে ক এগিয়ে গ্যালো, নীপাকে একপাশে নিয়ে গিয়ে বললো ওতো খুব সমস্যায় আছে। অবস্থা দেখছো?

-কি হয়েছে?

তুমি জানোনা? তোমারইতো সবচেয়ে ভালো জানার কথা।

আমার! কিভাবে?

-আরে অ তোমাকে জান দিয়ে ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না, দ্যাখো বেচারার মনের দুঃখে দিন দিন কি হাল হচ্ছে।

আমার এই হাল তোর কারণে হারামজাদা! মনে মনে ভাবছি, চিৎকার করে বললাম “নীপা ওর কথা একদম শুনোনা”, পুরো মিছিল গর্জে উঠলো- “হো!!”

দেখেছো তোমাকে কতোটা ভালোবাসে? ক’র মামলা একদম পোক্ত। নীপা সবসময়েই সাচ্ছন্দ্যে থাকে কিন্তু এবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। ক ইশারা করতেই মোর্চার মাথা থেকে আমাকে ছুঁড়ে ফ্যালা হলো। আমি যেভাবে পড়লাম তাকে হয়তো নীপার সামনে হাঁটু গেড়ে বসা বলা যায়।  “লাবিউ বল! লাবিউ বল!!” সবাই চিৎকার করে উঠলো। আমি আমার পুরো সততা দিয়ে বললাম “শোন নীপা, ওদের কথায় কান দেবেনা!”
মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে, তার গন্ডদেশ লালচে হয়ে উঠলো। ক কোত্থেকে জানি দুটা সস্তা বেলী  ফুলের মালা কিনে রেখেছিলো, নীপার হাতে একটা ধরিয়ে দিয়ে বললো “ওকে দাও!” বেচারী চরম অপ্রস্তুত হয়ে ফুলের মালাটা এগিয়ে দিলো। “তুইয়ো মালা দে”, ক আমার হাতে আরেকটা বেলীর ছড়া ধরিয়ে দিলো, ভীড়ের উন্মাদনা আর শোরগোলের মাঝে আমিও বেলীর মালাটা নীপার হাতে তুলে দিলাম।

আমার পুরো জীবনে আর কেউ এভাবে কখনো জনসম্মুখে অপদস্ত করেনি। কিন্তু ক’র আস্ফালন এখানেই শেষ হলো না। তিন মহাবিদ্যালয় ব্যাপী আমাদের বন্ধুমহলে ছড়িয়ে দেওয়া হলো যে নীপার সাথে আমার গোপনে বিয়ে হয়ে গ্যাছে। বহু “সাক্ষী” অবলীলায় স্বীকার করলো যে বিয়েটা তাদের উপস্থিতিতেই হয়েছে, এবং তারা নিজেরাই এটা চাক্ষুষ করেছে। একটা লোক পাওয়া গ্যালোনা যে বলবে যে এসবই ছিলো খুবই বাজে ধরণের একটা রসিকতা। ৩/৪দিন পর নীপার বিদ্যাপীঠে আসা বন্ধ হয়ে গ্যালো।

পুরো ১০ দিন পর মেয়েটার বাসায় গিয়ে মাফ চাওয়ার পরই সে ক্যাবল শিক্ষায়তানে ফিরেছিলো, কিন্তু জীবনে আর কখনো আমার সাথে কথা বলেনি।

পুনশ্চঃ ভাবা যায় এমন ভালো কোন বন্ধু কখনো এভাবে পিঠে ছুরি মারতে পারে? ক’কে একটা কথা কখনো বলা হয়নি। নীপা ছিলো ওর জীবনের মাত্র দুইটি মেয়ের দ্বিতীয়টা যার সাথে সত্যিই একটু একাগ্রতা দিয়ে চেষ্টা করলে ওর একটা দারুণ প্রেম কাহিনী হয়ে উঠতে পারতো।

###############

সুখের জীবন

বন্ধুত্ব বাঘ আর হরিণের মতো একটা সম্পর্ক, ক্ষুধার্ত বাঘ য্যামন পুরো জঙ্গল তোলপাড় করে হরিণের পালকে ধাওয়া করে আর হরিণেরা খুরের তলায় জীবন আর মৃত্যুকে সাথে করে দৌড়ে পালায়। ঠিক ঐ মুহুর্তে এরচেয়ে বড় শত্রুতা আর হতে পারে না। অথচ শিকারের পরই ভরপেটে বাঘ যখন ঘাসের মাঝে উদাসীন বিশ্রাম ন্যায়, তাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে হরিণেরা নিজের নিজের মতো চরতে থাকে, ক্যাননা এ সবই জঙ্গলের নিয়ম, ব্যক্তিগত আক্রোশ কাজ করে না।

বন্ধুত্বও ঠিক ত্যামনই, বন্ধু যাই করুক, সময়ে যতোই খারাপ হোক, সময় পার হলে বন্ধুত্ব আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে; উদাসীন বাঘের পাশে নির্বিকার মৃগ। প্রতিটি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে একটা করে বাঘ আর হরিণ থাকে। হয়তো ক্ষেত্রবিশেষে বাঘ আর হরিণের ভূমিকা অদলবদল হয় কিন্তু কাউকে উপজীব্য না করে একটা সম্পর্ক চলতে পারেনা।

ক’র সাথে সজলের বন্ধুত্বও ঠিক এমনই একটা সম্পর্ক। বারবার ঠিককরা হতো যে আর মেশা যাবে না, কিন্তু প্রতি কিছুদিন পর যেইকেসেই! “স্বর্ণালী যুগের বন্ধু” ঠিক এনামেই ডাকা হতো সজলকে, ক্যানো কে জানে। কিন্তু কোন কারণে সেই বন্ধুত্ব আসলে কখনোই পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি।

এই গল্পটা যদিও ক বা সজল নয়, বরং তন্দ্রাকে নিয়ে লেখা। তন্দ্রা সজলের বউ বা বলা ভালো “ছিলো”। আমাদের কখনো দ্যাখা হয়নি কিন্তু তারপরও বেচারির ব্যতিক্রমী উপাখ্যানটা আমাকে ছুঁয়ে যায়। যা হোক তন্দ্রাকে নিয়ে কিছু বলতে গ্যালে কাহিনীর শুরু করতে হবে আসলে আমাদের “স্বর্ণালী যুগের বন্ধু” সজলকে নিয়ে।

সজল নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। শুধু গরীব হলে কথা ছিলোনা, ওর পরিবারটা খুবই কলহ আর রেষারেষিপূর্ণ। বাবা-মা সারাক্ষণ ঝগড়া করছে। ওরা দুই ভাইও যখনতখন ঝগড়া-মারামারি করছে। এধরণের ঘরোয়া আবহ মানুষকে হতোদ্যম করে তোলে। সজল একটা সময়ে এসে পুরোপুরিভাবে নেশায় জড়িয়ে পড়লো।

নেশার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রচুর আর নিয়মিত অর্থের যোগান চাইই। বাসায় টাকার জোগাড় নেই, তো সজল পাশাপাশি কিছু কিছু করে মাদকদ্রব্য বিক্রী করাও শুরু করলো। এইসব করতে গিয়ে বারকয়েক কারাগারেও যেতে হলো। সজলের বাবা মায়ের তাতে কিছুই যেতো আসতো না, ছেলে যাই করুক ঘর খরচার যে বেশ একটা অংশ তার কাছ থেকে আসতো, এতেই তারা খুশী।

এ দিনগুলোতে সত্যিকার অর্থে সজলের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন তার ছোটচাচু। শুধু যে বিপদে আপদে টাকা দিতেন তাই না, সজলদের বাজার খরচ, এমন কি কখনো সখনো ঠ্যাকায় পড়লে সজলের নেশার খরচও ওনার কাছ থেকেই আসতো। ধর্মত্যাগ করে খ্রিস্টান হওয়ায় সজলের দাদা তাকে অনেক আগেই বাড়িছাড়া করেছিলেন, কিন্তু ছোটচাচু নিজের উদ্যমে পড়ালেখাই শুধু করেননি, অত্যন্ত উঁচু বেতনে চাকরী করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

বিয়েথা করেননি যদিও। জীবনে এতোদূর আসা স্বত্বেও আপনজন বলতে কেউ নেই বলেই হয়তো সজলদের এতো যন্ত্রণা সহ্য করেন। সজলদের পরিবারে যাহোক তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়। সবাই আশা করছিলো সজলকে তিনি কোন একটা ছোটখাটো চাকরী বা ব্যবসায়ে দাঁড় করিয়ে দেবেন।

সজল যখন জীবনে সবকিছু নিয়ে খুব হতাশ, হঠাৎ করে তন্দ্রা নামে একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গ্যালো। আসলে সজলের সেরা বন্ধু জাহাঙ্গীরের সাথে আঁখি নামের একটা মেয়ের বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিলো, তন্দ্রা আঁখির বড় বোন।

জাহাঙ্গীরেরই বুদ্ধি ছিলো যে দুইবন্ধু ওই দুই বোনের সাথে প্রেম ও পরে বিয়ে করবে। শুধু যে হৃদয়বৃত্তিই একমাত্র কারণ ছিলো ঠিক তাও না, তন্দ্রার বাবা খুবই উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, বেতন আর উপরি মিলিয়ে মাসে লাখো টাকার আয় আর কোটী টাকার সম্পত্তি। এমন পরিবারে সম্পর্ক হওয়া মানে দুই বন্ধুর জীবনের সিড়িতে কয়েক ধাপ উপরে উঠা, ফলে সজলও কিছুটা না না করে, শেষপর্যন্ত রাজি হয়ে গ্যালো।

জাহাঙ্গীর ঠিকই বুঝেছিলো যে একা তারপক্ষে এতোদিক সামলানো সম্ভব না। সজলের জীবনে প্রথম কোন কাজে সফলতা আসলো, জাহাঙ্গীর আর সজলের সাথে আঁখি আর তন্দ্রার ঘরপালিয়ে বিয়ে হয়ে গ্যালো। কিন্তু য্যমনটা ভাবা গিয়েছিলো, ভাগ্য সেভাবে সহায় হলো না। তন্দ্রার বাবা দুই মেয়েকেই স্বামীসহ বাড়ি থেকে বের করে দিলেন।

যাহোক বড়লোক বাবার মাত্র দুইটা মেয়ে, আজ না হোক কাল সম্পত্তির ভাগ দিতেই হবে, এই ভেবে সজল নূতন সংসারে মন দিলো। কে জানতো ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে!

বিয়ের পর সজল চেষ্টা করেও নেশাটা ছাড়তে পারলো না, এতোদিনের অভ্যেস! এমন না যে সে চেষ্টা করেনি, কিন্রু রাত রাতভর ঘুম না আসায়, অনেক সময় সজল গভীর রাতপর্যন্ত বন্ধুদের সাথে নেশা করে ঘরে ফিরতো, কখনো কখনো নেশার ঘোরে কথা কাটাকাটি হলে তন্দ্রার গায়ে হাতও তুলতো। তন্দ্রা শান্ত স্বভাবের মেয়ে, যেভাবেই হোক মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছিলো, যদিও সজল থেকে তাকে বেশী যন্ত্রণা দিতো আসলে সজলের মা। বড়লোকের মেয়ে হওয়া স্বত্তেও নিজের সাথে টাকাপয়সা না নিয়ে এসে উলটে সজলদের নির্মম অর্থনৈতিক অবস্থায় বাড়তি চাপ হয়ে বসায় হয়তো একটা ক্ষোভ ছিলো, তাকে পদে পদে খোঁটা শুনতে হতো।

দুবোনের মধ্যে বেশী সুন্দরী হলেও তন্দ্রার আসলে কপাল ভালো ছিলোনা। ছোটবোন আঁখির বর জাহাঙ্গীর বিয়ের পর একদম শুধরে গিয়েছিলো। আর নেশা করতো না, ছোটখাটো একটা ব্যবসা শুরু করে বেশ ভালোই করছিলো, এমনকি তন্দ্রার বাবার বাসায় তারা পরবে-পার্বনে যেতেও পারতো। এদিকে সজলের আয়ের উৎস তখনো মাদকদ্রব্য বিক্রয় আর ছোটচাচুর কাছ থেকে যৎসামান্য যা পাওয়া যায়। সজলের বেকার বাবাও মাঝে মধ্যে নানান ফন্দিফিকির করে ঘরে টাকা আনতেন, তবু মাস খরচার একটা বড়ো অংশ আসতো সজলের ছোট চাচুর কাছ থেকে। বেচারা বিনাস্বার্থে অনেক করেছে বড়ভাইয়ের পরিবারের জন্য।

মানুষের জীবন গতিশীল। দৌড়ালেও দিন পার হয়ে যায়, হাঁটলে, এমনকি বসে থাকলেও। দিনের সাথে সাথে মানুষের ভাগ্যও পরিবর্তীত হয়; কারো ভালো হয়, কারোবা মন্দ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ মামলায় সজল গ্রেফতার হয়ে হাজতে চলে গ্যালো। জানা গ্যালো এর পিছনে আসলে কোন একটা প্রতিদ্বন্দ্বী দলের চক্রান্তও ছিলো। তারাই পুলিশকে টাকাপয়সা দিয়ে সজলকে আটক করিয়েছে। দূর্ভাগ্যক্রমে সজল বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বস্তুর সাথে গ্রেফতার হয়েছিলো। খবর এলো প্রতিদ্বন্দ্বীরা টাকা খাইয়েছে, সজলের ক্রসফায়ার হয়ে যাবে। তন্দ্রার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সজলের বাবা বাধ্য হয়ে তার ছোট ভাইকে খবর দিলেন।

ছোটচাচু এসে সব কথা শুনলেন, তিনি করিৎকর্মা মানুষ। থানাহাজতে গিয়ে সজলের সাথে দ্যাখা করলেন, উকিলের সাথে কথাও বলে আসলেন। সন্ধ্যায় সজলদের বাড়িতে বৈঠক বসলো, ছোটচাচু পুলিশের সাথে কথা বলেছেন, তারা ক্রসফায়ার করবে না, মামলাটাও হাল্কা বানিয়ে সজলকে কারাগারে পাঠিয়ে দেবে, কিন্তু নগদ ৫ লাখ টাকা দেওয়া লাগবে। এতো টাকা সজলের বাবার নেই। তন্দ্রার বাবাও এধরণের বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়াবেন না, তারকাছে সাহায্য চাইতে গ্যালেও পাওয়া যাবে না। উপায়? একমাত্র ছোটচাচু।

অনেকক্ষণ ভেবে ছোটচাচু অবশেষে রাজী হলেন, কিন্তু অদ্ভুত একটা শর্ত দিলেন। সজলের বাবা অবাক হলেও, সজলের মা বেশ সহজভাবেই নিলেন। সেই হিসেবে ছোটচাচু তন্দ্রার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। সজলের মা বাইরে থেকেও শেকল তুলে দিলেন। এরপর থেকে এই ঘটনা প্রতিদিন ঘটতে থাকলো।

পুলিশ টাকা খেয়ে মামলা হালকা করে দেওয়ায় সজল মাত্র ৮ মাস কারাবাসের পরই বাইরে বেরিয়ে আসলো। তার ৭ মাস আগেই তন্দ্রা গলায় দড়ি দিয়ে মারা গ্যাছে।

সে অনেক চেষ্টা করেছিলো বাপের বাড়ি পালিয়ে যেতে বা ছোট বোনের কাছে সাহায্য চাইতে, কিন্তু সেরকম কিছু হলে সজলকে আর বাঁচানো যেতনা, তাই সজলের মা অতি সাবধান ছিলেন যাতে তন্দ্রা পালাতে বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে না পারে। প্রতিদিন রাত ১০টায় ছোটচাচু মদ্যপ হয়ে বাসায় চলে আসতেন, আর অত্যান্ত সহজ ভঙ্গীতে তন্দ্রার ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিতেন, আর বের হতেন গভীর রাতে। তব্দ্রার চীৎকার বা কান্না কারো গ্রাহ্য হয়নি। বলা হয় গলায় দড়ি দেবার আগে নাকি সে একটা চিঠিও লিখেছিলো, শেষ চিঠি। পুলিশি ঝামেলার ভয়ে সজলের মা সেই চিঠিটা জ্বালিয়ে দ্যান।

সজল বের হবার পর খুব দ্রুতই ভিতরের সব খবর জানতে পারলো। প্রতিবেশীরাতো ছিলোই ঘরেও কোন লুকোছাপা ছিলোনা। যা হয়েছে, করতে হয়েছে, জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে এমনটা হয়। সজলের ইচ্ছে হলো ছোটচাচুকে মেরে ফ্যালার, তার আগে একটিবার অন্তত জিগ্যেস করার, কিভাবে পারলেন?

বাসায় ২ দিন ধরে কোন বাজার নেই, সজলের বাবা-মা ইচ্ছে করেই নিজেরা মুখ ফুটে কিছু বলছেন না, অবশেষে সজলকেই আবার ছোটচাচুর কাছে যেতে হলো। চাচু তড়িঘড়ি করে পাশে বসালেন।

-কিরে?
-২০০টা টাকা লাগবে, ঘরে কিছু নেই, সজল জানালো।

ছোটচাচু ১০০০ হাজার টাকা দিলেন, রাখ্ আবার লাগলে নিয়ে যাস। সজল হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিলো, কি য্যানো ভাবতে ভাবতে বের হয়ে এলো, বাজার করতে হবে।

ভাবতে চেষ্টা করি এই গল্পের কি আর কোন পরিশেষ হতে পারতো? তন্দ্রার পক্ষে কি হাল ছেড়ে দেওয়াটা ভুল ছিলো? সজলের কি কিছু করণীয় ছিলো? নাকি এটাই জংগলের নিয়ম? উদাসীন বাঘের পাশে নির্বিকার মৃগ হয়ে বেঁচে থাকা!

সর্বশেষ

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং...

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে ছাত্রদলের যে পাঁচজনকে দেখা গেছে তারা হলেন- সাঈদ হোসেন...

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। এর মাঝে একটি এজেন্সিও দিয়েছেন নাম...

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া...