১৯৬৫ সালের ২৮ মার্চ | কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল নৌ বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে তৈরী এক নাটক | নাম কল্লোল | এক বাঙালি নাট্যকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেসীদের “অহিংস” উপায়ে স্বাধীনতা লাভ করার মিথ্যা প্রচারকে | তিনি বলেছিলেন, ‘‘ কল্লোল নাটক স্বাধীনতা সংগ্রামে নাবিক ও মজুরদের শুধু বীরত্ব গাথাই শুধু বলেনি, বলেছিল কংগ্রেসি বেইমানদের দেশদ্রোহিতার কথা৷’’
কেন্দ্রে এবং রাজ্যে তখন কংগ্রেস সরকার | কল্লোল নাটকের বিষয়বস্তু তাদের ভাল লাগেনি এটাই স্বাভাবিক | কংগ্রেস এই নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করতে সচেষ্ট হল | বাংলার প্রথম শ্রেণীর সংবাদপত্রগুলোতে খবর গেল – কল্লোল নাটকের বিজ্ঞাপন যেন তাদের সংবাদপত্রে প্রকাশিত না হয় | সেটাই হল | সব সংবাদপত্র কল্লোল নাটকের বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করল | কিন্তু কোথায় কি ? মিনার্ভা থিয়েটারে কল্লোল নাটকের প্রত্যেকটি শো হচ্ছিল হাউসফুল |
পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বুঝতে বাকি রইল না কংগ্রেসের | ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন ‘ভারতরক্ষা আইনে’ গ্রেফতার করা হয় সেই বাঙালি নাট্যকারকে ৷ কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার মুক্তির দাবীতে সোচ্চার হয় বাংলা তথা দুনিয়ার সাংস্কৃতিক মহল | সত্যজিৎ রায়, মধু বসু ,মন্মথ রায়কে সামনে রেখে ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ তার মু্ক্তির দাবিতে কলকাতার রাজপথে এক মহামিছিল হয়েছিল৷ শেষমেশ চাপের মুখে সাত মাস জেলের অন্তরালে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পান সেই নাট্যকার |
একবার ধানবাদ অঞ্চলের চিনাকুড়ি ও বড়াধেমো কয়লাখনিতে খাদে আগুন ধরে যায়। খনি বাঁচাতে মালিকপক্ষ খনিতে জল ঢুকিয়ে দেয় | খনির মধ্যে আটকে পড়া শ্রমিকরা মারা যায় | খবর পেয়েই তিনি ছুটে যান সেই কয়লাখনিতে। সঙ্গে তাপস সেন, নির্মল গুহরায়, উমানাথ ভটাচার্য, রবি চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ। তারা হাজার ফুট নীচের সেই খনির মধ্যে নেমে সবকিছু দেখেন | খনির ভিতরের বিভিন্ন শব্দ রেকর্ড করেন | জীবিত খনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন | কথা বলেন মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গেও | তার পরে সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে তিনি মিনার্ভার তিনতলার ঘরে বসে টানা ১৫ দিনে লিখে ফেলেন কালজয়ী নাটক ‘অঙ্গার’। যে নাটক আজও বাংলার শ্রেষ্ঠ নাটকের অন্যতম |
সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন , “তিনি যদি রাজি না হত, তবে হয়তো আমি ‘আগন্তুক’ বানাতামই না।” আর তিনি বলতেন ‘আমি শিল্পী নই। নাট্যকার বা অন্য যে কোনো আখ্যা লোকে আমাকে দিতে পারে। তবে আমি মনে করি আমি প্রপাগান্ডিস্ট। এটাই আমার মূল পরিচয়।’
আজ উৎপল দত্তের জন্মদিন।