একজন ফাঁ’সির আ’সামী শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করে দৈব শক্তি এসে তাকে রক্ষা করবে

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

একজন ফাঁ’সির আসা’মী শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেন কোন দৈব শক্তি এসে তাকে রক্ষা করবে। এমনকি পেছনে হাত বাঁ’ধা, গলায় দঁ’ড়ি পরানো অবস্থায় এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার মাঝখানে দেয়াল যখন একটি মাত্র রুমাল; নীরবে দাঁড়িয়ে তখন সে ভাবতে থাকে এই বুঝি তাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এলো!
বাংলাদেশে এক সময়ে মুনিরের ফাঁ’সি বেশ
আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর এরশাদ শিকদারের ফাঁ’সি নিয়ে ছিল মানুষের ব্যাপক আগ্রহ! একজন মৃ’ত্যুদ’ন্ডপ্রাপ্ত আ’সামী যতই ঘৃন্য হোক, তার শেষ ইচ্ছা পালনের চেষ্টা করা হয়। চেষ্টা করা হয় তার মৃ’ত্যুটি যথাসম্ভব আরামদায়ক করার। মৃ’ত্যুদ’ন্ড আরামদায়ক করার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই ধারাবাহিকতায় ইলেকট্রিক চেয়ার, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মৃ’ত্যুদ’ন্ড আবিস্কার হয়েছে। তবে যত সিস্টেমই আবিস্কার হোকনা কেন, মৃ’ত্যুতো মৃ’ত্যুই! আ’ইনানুগ সকল ফর্মালিটি শেষে ফাঁ’সির আ’সামীকে নিয়ে আসা হয় কন’ডেম সেলে। সেখানে শুধু ফাঁ’সির আ’সামীরাই থাকে। মাথায় থাকে লাল টুপি। অনেকটা ওয়েটিং রুমের মতো। এখানে কয়েকদিন রাখা হয়। তার সাথে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করা হয়।
বিদেশ থেকে আনা হয় দঁ’ড়ি। সাধারণত জার্মানি থেকে বিশেষ এই দঁ’ড়ি আনা হয়। নিয়ম করে কয়েকবার এতে মাখানো হয় সবরি কলা আর মাখন। জ’ল্লাদ নির্বাচন করা হয় কয়েদিদের মধ্য থেকেই। প্রতিটি ফাঁ’সি কার্যকরের জন্য ঐ কয়েদির ২ মাস করে সাজা কমে। আ’সামীর সম-ওজনের বালির বস্তা দিয়ে কয়েকবার ফাঁ’সির প্র্যাকটিস করা হয় কয়েকদিন আগেই। কনডেম সেলে আ’সামীর আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করানো হয়। তবে কবে ফাঁ’সি কার্যকর হবে তা আ’সামী এবং আত্মীয়-স্বজন কাউকেই বুঝতে দেয়া হয় না। সাধারণত রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে কা’রাগার মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে জে’ল সুপার ক’নডেম সেলে যান।
তখন ক’য়েদি বুঝতে পারেন যে আজই তার জীবনের শেষ রাত। সাড়ে ১১টার মধ্যে তওবা পড়ানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। ১২টার ৫ মিনিট আগে যম টুপি ও গলায় দঁ’ড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। জেল সুপার হাতে রুমাল নিয়ে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। সাথে দাঁড়িয়ে থাকেন অন্যান্য অতিথিরা। জল্লাদের চোখ তখন রুমালের দিকে। ঐ মুহুর্তে এই রুমালই একজন মানুষকে এপাড় থেকে ঐপাড়ে পাঠিয়ে দেয়ার ভূমিকা পালন করে।
আসামীর চোখে মুখে অন্ধকার। দাঁতে দাঁত খিটে থাকে। গলাটাকে ফোলানোর চেষ্টা করেন যেনো ব্যথাটা একটু কম লাগে। কিন্তু বিশাল এই দেহের ওজন কি আর গলা সইতে পারে? ধর্মীয় দো’য়া/ম’ন্ত্র পাঠ করতে থাকে আর মনে মনে অপেক্ষায় থাকে কোন দৈব শক্তির! কান খাড়া করে রাখে এই বুঝি কেউ একজন বলে উঠবে, “স্টপ; এই ফাঁ’সি হবে না”।
ভাসতে থাকে প্রিয় মানুষগুলোর মমতাভরা মুখ। তাদের মায়ামুখগুলো ভেবে হৃদয় কেঁদে উঠে। মনে হয়, যে কোন কিছুর বিনিময়ে আর ক’টা দিন যদি ওদের সাথে কাটাতে পারতাম। প্রিয় মানুষগুলোকে একটু জড়িয়ে ধরতে
পারতাম। একজন ফাঁ’সিতে আ’ত্মহ’ত্যাকারী আর মৃ’ত্যুদ’ন্ডপ্রাপ্ত আসা’মীর মৃ’ত্যুর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আত্ম’হত্যা’কারী পৃথিবীর প্রতি বি’তৃষ্ণার কারণে আ’ত্মহ’ত্যা করে। তাছাড়া সেই মুহুর্তে তার মধ্যে কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আর ফাঁ’সির আ’সামী পৃথিবীর মায়ার জন্য অ’ন্যায় করে এবং সে ভাবার মতো যথেষ্ট সময় পায়। আ’সামী যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অ’পরাধ করে শেষ সময় তারা কেউ পাশে থাকতে পারে না। যারা উপস্থিত থাকে সবগুলোই অপরিচিত মুখ। সবাই যার যার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। স্বজনদের মতো মমতা ভরা কন্ঠ এখানে নেই। গায়ে হাত বুলিয়ে দেবার কেউ নেই। তার ক’স্টে ব্য’থা পাওয়ার কেউ নেই। যত বড় দূ’র্ধর্ষ ব্যক্তিই হোক না কেন, এই সময়টিতে সে সবচেয়ে অসহায় অনুভব করে।
একজন মানুষ যখন উ’ত্তেজনায় থাকে তখন ভবিষ্যৎ পরিনতি ভাবার মতো জ্ঞান তার থাকে না। আর সে সময়টিতেই ঘটায় যত অঘটন। আর এজন্যই মনীষীরা
বলে থাকেন_ “জীবনে দুটো সময় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। ০১) খুব রা’গান্বিত অবস্থায় এবং ০২) খুব আনন্দময় অবস্থায়। এই দুটো সময়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ থাকে।
সর্বশেষ ১২টা পাঁচ মিনিটে পায়ের নিচ থেকে পাটাতন সরে যায়। গলায় আ’টকে যায় মোটা দঁ’ড়ি। শুরু হয় রহ’স্যময় যাত্রা! ১০ মিনিট ঝুঁ’লিয়ে রাখার পর একজন
ডাক্তার এসে ঘাড়ের চামড়া কেটে মৃ’ত্যু নি’শ্চিত করেন। পরে থাকে নিথ’র দে’হ। এরপর থেকে আর প্রয়োজন হয়না কোনো খাবার কিংবা পানি। রাতে খাওয়া খাবারগুলো দেহের কোনো কাজে আসেনা। পাকস্থলিতে পরে থাকে নিরব হয়ে…। মৃ’ত্যুর আগ মুহুর্তে একজন আ’সামী ফিরে যেতে চায় তার অতীতে। ভু’লগুলো মুছে দিয়ে নতুন করে লিখতে চায় জীবনের অধ্যায়।
আমরাও একই পথের যাত্রী। শুধু আমরা জানতে পারিনা আমাদের মৃ’ত্যুর সময়-ক্ষণ। আমাদের যেনো শেষ মুহুর্তে পিছনে ফিরে অতীতকে নতুন করে লিখার ইচ্ছে জাগ্রত না হয় সে জন্য প্রতিটি মুহুর্ত-প্রতিটি সেকেন্ড ভেবেচিন্তে সৎভাবে অতিবাহিত করতে হবে। কারণ জীবন খাতার অক্ষর মোছার কোনো ফ্লুইড নেই!

Sponsored
Leave a Comment
শেয়ার
সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর

সর্বশেষ

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024

ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করে ট্রেনে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…

January 6, 2024

এমনটা কেনো করলেন এ. আর রহমান?

হিরো আলম রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার পর সারা দেশে হইচই শুরু হয়ে যায়। এমনকি ওই প্রতিবাদের…

November 12, 2023

ন্যানোমিটার সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ তৈরিতে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে চীন

বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন।…

September 25, 2023
Sponsored