কফি হাউজের আড্ডায় নিখীলেশ-সুজাতারা নিয়মিত তর্কে মেতে উঠতেন বিষ্ণু দে’কে নিয়ে।কে এই বিষ্ণু দে?
কফি হাউজের আড্ডাটা পরিচিত একটি নাম বিষ্ণু দে । তবে শুধু নামটিই তার পরিচয় পেয়েছে, তিনি কিংবা তার কবিতাগুলো দূরেই রয়ে গেছে। খুব বেশি পরিচিত কবির তালিকায়ও তার নাম পাওয়া যাবে না। তবু কফি হাউজের গানটি শুনতে গিয়ে কখনো না কখনো আপনার মনেও নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছিলো- “কে এই বিষ্ণু দে?” রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের যে কবিরা রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত হয়ে কবিতা লেখার কলম ধরেছিলেন, তাদেরই একজন বিষ্ণু দে। কল্লোল যুগের পঞ্চপান্ডব কবি রবীন্দ্রবেষ্টনীর মধ্যেই সীমিত থাকলেও বিষ্ণু দে নিজেকে সেই সীমায় আটকাননি। তিনিই প্রথম খোলাখুলিভাবে বলতে পেরেছিলেন,
“রবীন্দ্র প্রভাব মুক্ত হতে না পারলে বাংলা কবিতার উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই।”
বাংলা কবিতায় আধুনিকতার আনয়নে তার অনেকটাই ভূমিকা ছিলো। প্রচন্ড প্রগতিশীল ভাবধারার এই কবি কবিতা ছাড়া গদ্যেও বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলেন, কিন্তু কবিসত্ত্বাটিই তার সমস্ত কিছু ছাড়িয়ে প্রবল হয়ে ওঠে। এজন্য বিষ্ণু দে’কে জানতে হলে তার কবিতাকে জানাই যথেষ্ট। তার মতাদর্শ, জীবনবোধ, তাড়না, বাস্তববাদিতা সবকিছুরই দেখা মেলে তার কবিতায়। যা কখনো বিশ্বাস করেননি তা তার কবিতায় তিনি লেখেননি, কোনো মিথ্যে বিশ্বাস কবিতায় রেখেও যাননি।ব্যক্তি বিষ্ণু দে নিয়ে কিছু কথা।
বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২)
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই (২রা শ্রাবণ, বঙ্গাব্দ ১৩১৬) বিষ্ণু দে কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা অবিনাশচন্দ্র দে ও মাতা মনোহারিণীর পঞ্চম সন্তান। তার পরিবার বংশগত দিক থেকে কলকাতার আদি বাসিন্দা ছিলো না। হাওড়া জেলার পাঁতিহাল গ্রাম থেকে আগত তার পূর্বপুরুষ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতায় বসবাস করতে আসেন। উনিশ শতকীয় বঙ্গীয় জাগরণের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক ছিল বলে স্বদেশ আন্দোলনের একটা ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। দ্বান্দ্বিক এই কবি ১৯৮২ সালের ৩রা ডিসেম্বর কলকাতায়ই মৃত্যুবরণ করেন।
প্রেমকে তিনি দিয়েছেন ক্ষণিকত্বের সংজ্ঞা
তার কবিতাগুলো কখনো ফ্যান্টাসিতে হারিয়ে যাওয়ার মতো কিছু নয়, যা আমরা কবিতা বললেই ভাবতে শুরু করে দিই- অবাস্তব, কল্পনার ভাষা! তিনি বাস্তব জগতকে যেমনি দেখেছেন তেমনি লিখেছেন, হয়তো কোথাও অনেক উপমাও দিয়েছেন। কিন্তু দিনশেষে বিষ্ণু দে’র কবিতা বাস্তব সমস্যাগুলো কিংবা যা আছে যা হচ্ছে-হয়েছে, তাকেই নির্দেশ করে। তার কবিতাগুলো একই সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সমন্বয়কারী। তিনি বস্তুনিষ্ঠভাবে চোখে রঙিন চশমা না লাগিয়ে কবিতায় তুলে এনেছেন তখনকার বাস্তবতাকে এবং পরক্ষণেই বিষয়নিষ্ঠ হয়ে বাস্তববাদিতার মধ্য দিয়েই যে একটা বিপ্লব দরকার, মুক্তির জোয়ার আসা দরকার- তা তিনি খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
“হঠাৎ হাওয়ায় আসে উপবাসী মানুষের রোদনের দুয়ো,
কেটে যায় বিটোফেনী সিমফনির গন্ধর্ব বাতাস”
– (২২শে শ্রাবণ)।
এভাবেই যখন সত্য ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা তার চোখে প্রবল হয়ে ধরা পড়তো, সুর কেটে যেত-ছন্দে ঘাটতি হতো। কঠিন শব্দ নয় শুধু, কঠিন ভাবকে কবিতায় এনেছেন তিনি। তাঁর কবিতা পড়তে গিয়ে বারবার দুর্বোধ্য মনে হয় পাঠকের, হয়তো শব্দে শব্দে থমকে যেতে হয়! কারণ সমানুভূতি না হলে বিষ্ণু দে’র কবিতা মনের খুব কাছে এনে অনুভব করা যায় না।
বন্ধু যামিনী রায়কে নিয়ে লেখা তার একটি বই।
প্রকৃতি তার প্রেম পায়নি, এমন নয়। প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে তিনি কবিতায় বেশ ভালোভাবেই আনতে পেরেছেন। নিসর্গকে তিনি ভালোবেসেছেন, তবু নিসর্গের প্রেমে থেকে সাদা-কালো শহরের গায়ে থাকা কলুষতাকে রেখে তিনি প্রকৃতিপ্রেমে ডুবে যেতে পারেননি। তিনি যেন নিজেই সত্যকে যে করেই হোক কবিতায় আনতে হবে এমন পণ নিয়েছিলেন!
“আমার আনন্দে আজ আকাল বন্য প্রতিরোধ,
আমার প্রেমের গানে দিকে দিকে দুস্থের মিছিল,
আমার মুক্তির স্বাদ জানেনাকো গৃধ্নুরা নির্বোধ-
তাদেরই অন্তিমে বাঁধি জীবনের উচ্চকিত মিল”
– (২২শে শ্রাবণ)
সময় ও সংকটবোধ তার কবিতায় আধুনিক পথে যাত্রা করেছে। কবি-চেতনার প্রবল তাড়না দেখি কবিতাগুলোয়। তার কবিতাগুলোকে এককথায় প্রকাশ করলে বলা যায় ‘অ্যান্টিরোমান্টিক’। তার ব্যক্তিমনের প্রেমভাব বা অনুভূতির ওপরে উঠে তিনি স্থান দিয়েছেন প্রবল আত্মসচেতনতার। তার লেখা তাই ভাবালুতার খাদমুক্ত।
কাব্যগ্রন্থ ‘চোরাবালি’
প্রায় সব কবির মতোই প্রথম কাব্যে বিষ্ণু দেও প্রেমকেন্দ্রিক ভাবনার অনুগামী হলেও এর পর থেকেই প্রেমচেতনার সিদ্ধরস বিচূর্ণ হয়েছে তার কাছে এসে। ‘অমর প্রেম’ এর ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বাস্তব অর্থে প্রেম বিষয়টি ক্ষণস্থায়ী একটা রূপ আছে এবং হাজার আতিশয্যেও আমরা তাকে অস্বীকার করতে পারি না। এবং তার কবিতায় দেখা যায় স্বাভাবিকভাবেই প্রেমবিষয়ক প্রচলিত বা প্রতিষ্ঠিত ধারণার প্রতি প্রবল অস্বীকৃতি। তার দৃষ্টিতে প্রেমের গন্তব্য হচ্ছেঃ
“ভাসিয়েছি প্রেম আজ নীলিমার অন্ধকার জলে”
– (সমুদ্র)
ইন্দ্রধনুর অস্থায়ী বর্ণবিলাসের মতো প্রেমের শিশিরধর্ম, চিরন্তন রোমান্টিক প্রেমভাবনার বিপরীত। বহুভুঞ্জিতা উর্বশীর দেহ-সৌন্দর্যের অন্তহীন আমন্ত্রণ বিষ্ণু দে’র এসে অনেকটাই প্রত্যাখ্যাত। তারপরও উর্বশীকে তিনি কিছুক্ষণ থাকতে বলছেন, প্রেমকে পুরোপুরি অস্বীকার করছেন না। একই সাথে তার ক্ষণিকত্বও বর্ণিত হচ্ছে।
“তোমার দেহের হায় অন্তহীন আমন্ত্রণবীথি,
ঘুরি যে সময় নেই- শুধু তুমি থাকো ক্ষণকাল …”
– (উর্বশী)
উর্বশী কবিতাটি
তার মনের বর্ণন করেছেন কিছুটা এভাবে,
“নদীর বাঁকের চরাই পাড়ের ছায়ে
একটি অমর করবীশাখা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
Leave a Comment