বিভাগ জাতীয়

আগামী ৫-৭ দিনে সংক্রমণ কমতে পারে, ভয় মৃত্যু নিয়ে

সাম্প্রতিক সংবাদ
মোহাম্মদ শিপন
Sponsored

আগামী পাঁচ থেকে সাত দিনে দেশে ধীরে ধীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতে শুরু করবে—বিশেষজ্ঞরা এমন পূর্বাভাস দিলেও তাঁরা বলছেন, মৃত্যু কমতে আরো দু-এক সপ্তাহ সময় নেবে। সংক্রমণ কমাকে এক সপ্তাহ ধরে চলমান কঠোর লকডাউনের সুফল হিসেবেই বিবেচনা করা যাবে—এটাও মনে করছেন তাঁরা।

এখন যারা মারা যাচ্ছে তারা মূলত আরো দু-এক সপ্তাহ আগে সংক্রমিত হয়েছিল। তখন শনাক্ত ছিল এখনকার তুলনায় প্রায় অর্ধেক বা তার চেয়ে কম। তখনকার সংক্রমণের আনুপাতিক হারে মৃত্যু দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এখন সংক্রমণ যে মাত্রায় আছে, সেই অনুপাতে সামনে সে হারেই মৃত্যু অব্যাহত থাকতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

তবে কেউ কেউ এমন পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা বলছেন যে এবারও প্রত্যাশিত মাত্রায় লকডাউন কার্যকর হয়নি। তাই প্রত্যাশা অনুপাতে সুফল আশা করা যায় না। বড়জোর সংক্রমণ ও মৃত্যুর গতি কিছুটা ধীর হবে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ জনের ওপরেই থাকছে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে। এর মধ্যে গত দুই দিনে তা ২০০ জনের ওপরে-নিচে ওঠানামা করল। সব শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১৯৯ জন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৫ জন মারা গেছে ঢাকায়। আগের দিন বুধবার মারা গেছে ২০১ জন। তার আগের দিন মারা যায় ১৬৩ জন। অর্থাৎ মঙ্গলবারের পরের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু এক লাফে ৩৮ জন বেড়ে যায়।

অন্যদিকে গত ২৭ জুনের আগ পর্যন্ত দৈনিক হিসাবে মৃত্যু ১০০ জনের নিচেই ছিল বেশির ভাগ সময়। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে তিন দিন মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়ে ছিল। সর্বশেষ গত দুই-তিন দিনে মৃত্যুর এমন উল্লম্ফনের বড় অংশই ঘটেছে খুলনা ও ঢাকায়। আবার মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো সর্বোচ্চসংখ্যকই থাকছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের মানুষ। যাঁরা আগে থেকেই নানা রোগের জটিলতায় ভুগছিলেন। গত আট দিনে বাসায় মারা গেছে ৮৪ জন করোনার রোগী।

গত ১ জুলাই লকডাউন শুরুর দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে মোট নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৬০০ জন। সুস্থ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩৩ জন এবং মারা গেছে এক হাজার ১৪৬ জন। গতকাল সকাল ৮টার আগে দেশে মোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা (বাসা, হাসপাতাল ও আইসোলেশনসহ) এক লাখ ১৭ হাজার ৮১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এই পজিটিভ রোগীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১০ হাজার ৩৯ জন বা প্রায় ৯ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৫৯ হাজার ৩৪৩ জন ছিল আইসোলেশনে। এর পরও ৬৯ হাজার ৩৮২ জনের অবস্থান কোথায় তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো তথ্যে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, হাসপাতালের বাইরে যারাই পজিটিভ আছে তাদের কিছুসংখ্যক সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশনে আছে, বাকিরা আছে বাসায়।

আর পজিটিভ রোগীর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশেরই কোনো উপসর্গ নেই। বাকি যাদের উপসর্গ থাকে তাদের মধ্যেও ১৫ শতাংশ মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাসায়ই চিকিৎসা নেয়।

মাত্র ৫ শতাংশকে হাসপাতালে যেতে হয় কমবেশি জটিলতার কারণে। তাদের মধ্যেই বেশি মৃত্যু ঘটছে। ফলে এখন যারা শনাক্তকৃত তাদের আইসোলেশন জরুরি। যদি আক্রান্তরা অন্যদের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংক্রমণ কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। তবে মৃত্যু কমতে কমপক্ষে আরো এক সপ্তাহ দেরি হতে পারে। তিনি বলেন, গত আট দিনে যতটুকু বিধি-নিষেধ কার্যকর হয়েছে সেটার তো কিছুটা সাফল্য আসবেই। এখন কথা হচ্ছে, সেটা হয়তো প্রত্যাশিত মাত্রায় না-ও হতে পারে। কারণ শুধু বিধি-নিষেধ কার্যকর করলেই তো হবে না।

যে মানুষগুলো আক্রান্ত হয়ে গেছে, তাদের ব্যবস্থাপনা তো সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাদের মাধ্যমে পরিবার ও অন্যদের মধ্যে করোনা ছড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে, উপযুক্ত মাত্রায় কন্টাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন করা। আক্রান্তদের মধ্যে যারা শনাক্ত হচ্ছে তাদের একাংশকে হাসপাতালে রাখা এবং আরেক অংশকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশন নিশ্চিত করা দরকার। নয়তো এ দফায় সংক্রমণ কিছুটা কমলেও পরবর্তী সময়ে আবার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘আশা করছি, আগামী পাঁচ থেকে সাত দিনে শনাক্ত কমে আসবে। তবে মৃত্যু কমতে আরো দু-এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা লাগতে পারে। মানুষের আরো সতর্কতা দরকার। স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। আবার টিকা নিলেই নিজেকে নিরাপদ ভাবা যাবে না। মাস্ক পরতে হবে।

তবে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এই দফায় প্রথম চার-পাঁচ দিন যেভাবে লকডাউন দেখা গেছে সেটা এখন নেই। বরং ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আমরা প্রত্যাশিত মাত্রায় সাফল্য আশা করতে পারছি না। হয়তো বড়জোর সংক্রমণ ও মৃত্যুর গতি কিছুটা কমে আসবে। কিন্তু খুব স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে নেমে যাবে, সেটা দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটবে, সেটা মনে করতে পারছি না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন গতকাল নিয়মিত বুলেটিনেও মানুষকে সতর্ক করে বলেন, বিধি-নিষেধ না মানলে, মাস্ক না পরলে কিংবা অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে ঘোরাফেরা করলে সংক্রমণ কমবে না।

দেশে এখন করোনায় মোট মৃত্যুহার আগের তুলনায় কিছুটা বেড়ে ১.৬০ শতাংশে উঠেছে। তবে দৈনিক মৃত্যুর গড় গত এপ্রিল থেকে মাঝেমধ্যেই ২ থেকে ৩ শতাংশে উঠে যাচ্ছে। এমনকি এক দিন তা ৮ শতাংশেও ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে অধিকতর সতর্ক না থাকা এবং করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে না আসায় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

তবে অনেক জেলায় অধিকতর জটিল বা তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চমাত্রার অক্সিজেন থেরাপির হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যুসংখ্যা বেশি হচ্ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

মূলত এখন দুই ধরনের রোগীর মৃত্যু বেশি হচ্ছে। একটি হচ্ছে আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি বিকলজাতীয় রোগে আক্রান্তরা যারা দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে জটিলতা বেড়ে গিয়ে অক্সিজেন সাপোর্ট, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও সিসিইউ-আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়ার পরও এক পর্যায়ে মারা যাচ্ছে।

আরেক ধরনের মানুষের মৃত্যু হচ্ছে যাদের আগের জটিলতা থাকার পরও আগে থেকে করোনাকে পাত্তা দেয়নি এবং যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে তখনো উপসর্গ নিয়েই বাড়িতেই থেকে যায়। এরা হাসপাতালে যেতে চায় না বা পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সক্রিয় হয় না।

এই শ্রেণির রোগীদের অবস্থা যখন অত্যধিক জটিল হয়ে পড়ে, তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তখন শেষ মুহূর্তে অনেককে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আবার কেউ কেউ সেই সময়টুকুও আর পায় না, বাড়িতেই মারা যায়। শেষ সময়ে এদের যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তাদের ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রায় বিকল হয়ে যায়। আবার তাদের জন্য তাত্ক্ষণিক প্রয়োজনীয় হাই ফ্লো কিংবা ভেন্টিলেটর হয়তো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে দেশে ১৯৯ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৬৫১ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১৫ হাজার ৭৯২ জন এবং সুস্থ হয়েছে আট লাখ ৫৬ হাজার ৩৪৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৪৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হার উঠেছে ৩১.৬২ শতাংশে।

২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৯৯ জনের মধ্যে ১৩৩ জন পুরুষ ও ৬৬ জন নারী। যাদের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের দুজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ছয়জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ২৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৪৭ জন ও ষাটোর্ধ্ব ১০৭ জন। বিভাগওয়ারি হিসাবে ঢাকা বিভাগে মারা গেছে ৬৫ জন, খুলনায় ৫৫ জন, চট্টগ্রামে ৩৭ জন, রাজশাহীতে ১৫ জন, ময়মনসিংহে ১০ জন, রংপুরে ৯ জন, সিলেটে পাঁচজন এবং বরিশালে তিনজন। যাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছে ১৪৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪২ জন এবং বাসায় মারা গেছে ১২ জন। গত ১ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত আট দিনে বাসায় মারা গেছে ৮৪ জন।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024

ডিআর কঙ্গোতে শান্তিরক্ষী মিশনে  সেনাবাহিনীর ‘আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ মোতায়েন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…

March 3, 2024

প্রধানমন্ত্রীকে পুতিনের অভিনন্দন

পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…

January 12, 2024

আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব উদযাপন করলো রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন

রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…

January 10, 2024

পর্যবেক্ষণে গিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও সুইস পর্যবেক্ষকরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…

January 7, 2024
Sponsored