শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৬ জুন। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল।
তিনি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের পরে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী, ছাত্র-নারী-মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সমন্বয়ে গঠন করেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি।’এই কমিটির উদ্যোগেই ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত গণ-আদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে মশাল তিনি জাতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন তারই আলোকে আজ বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং হচ্ছে।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে ১৯২৯ সালের ৩ মে জাহানারা ইমামের জন্ম। বাবা আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
পারিবারিক অনুকূল পরিবেশের সুবাদে জাহানারা রক্ষণশীল নারী সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। বিয়ের পর প্রকৌশলী স্বামী শরীফ ইমামও তাকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট অনুপ্ররণা যুগিয়েছেন। কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন থেকে বি.এ পাস করে পরবর্তীকালে প্রাইভেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ করেন জাহানারা ইমাম। কর্মজীবনে তিনি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল ও ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে শিক্ষকতা ছেড়ে প্রগতিশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
একাত্তরে তার ছেলে শাফী ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেন, কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন ও পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন।
রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই জাহানারা ইমাম শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জাহানারা ইমাম।
তিনি লেখালেখিও করেছেন বিস্তর। অনবদ্য গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুল’ ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য রচনাপঞ্জির মধ্যে রয়েছে: ‘অন্য জীবন’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘চিরায়ত সাহিত্য’, ‘বুকের ভিতর আগুন’, ‘দুই মেরু’, ‘নিঃসঙ্গ পাইন’, ‘নয় এ মধুর খেলা’, ‘ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস’, ‘প্রবাসের দিনলিপি’ ইত্যাদি।