সিরাজুর রহমানঃ বাংলাদেশে নিজস্ব গাড়ি উৎপাদনের স্বপ্নময় মহাযাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে পিএইচপি অটোমোবাইলের হাত ধরে। ‘আমাদের রাস্তায় আমাদের গাড়ি’ স্লোগানের এক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে পথ চলা শুরু করে পিএইচপি অটোমোবাইলস। কার্যত অনেক আগে থেকেই পুরাতন ও অন্য দেশে ব্যবহার করা রিকন্ডিশন গাড়ি ফিটিংসের মাধম্যেই পথ চলা শুরু করে দেয় পিএইচপি অটোমোবাইলস। দেশে তৈরি নতুন এবং মান সম্মত গাড়ি মানুষের হাতে পৌছে দিতে এবং গাড়ি উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় সোনার ‘বাংলাদেশের’ নাম লেখানোর তাগিদে প্রায় বিগত পাঁচ বছর আগে থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে নতুন এই অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানটি। মুলত মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মদের আন্তরিক প্রচেষ্ঠা এবং সহযোগিতায় আমাদের দেশীয় পার্টনার পিএইচপি অটোমোবাইলসের সাথে যৌথভাবে নতুন প্রজন্মের লাক্সারী কার তৈরির নতুন পথ উম্মোচিত হলো।
বর্তমানে পিএইচপি গ্রুপ ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছে। আর সাম্প্রতিকতম সময়ে মালেয়শিয়ার সাথে যৌথভাবে লাক্সারী গাড়ি উৎপাদন প্লান্ট সাফল্যের সাথে চালু হওয়ায় দেশের সম্মান ও গৌরব আরেক উচ্চ ধাপে পৌছে গেল। ২০২২ সাল নাগাদ তাদের স্থাপিত ভারি অটোমোবাইল এসম্বলী প্লান্টে বছরে গড়ে ১,২০০ গাড়ি উৎপাদনের ব্যাপক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পিএইচপি অটোমোবাইল লিমিটেড। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সোনার বাংলাদেশকে গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে এক রকম বদ্ধপরিকর হয়েই কাজ করে যাচ্ছে পিএইচপি গ্রুপ।
মুলত আমাদের দেশে অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং ইণ্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে জায়গা নির্বাচন, জমি ক্রয়, নকশা তৈরি ও প্রনয়ন, মুলধনী যন্ত্রপাতি স্থাপন, গাড়ি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করার মতো যাবতীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া থেকে। তাছাড়া আমাদের দেশের অটোমোবাইলস ডিজাইনার ও প্রকৌশলীরা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ‘মেইড ইন বাংলদেশের’ পিএইচপি এর গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে। পিএইচপি অটোমোবাইলস লিমিটেড দেশে গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপনের অনেক আগেই দেশে ও বিদেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার যথাযথ অনুমোদন নিয়েই গাড়ি উৎপাদনের মহা কর্মযজ্ঞ বেশ আগেই শুরু করে দিয়েছে।
তাছাড়া অটোমোবাইলস ইণ্ডাস্ট্রি আমাদের দেশে নতুন এক ধরণের কনসেপ্ট হওয়ায় বাড়তি কষ্ট করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি যন্ত্রাংশ এবং সাজ সরঞ্জাম এনে এসেম্বলী করায় প্রাথমিক অবস্থায় পার ইউনিট গাড়ি তৈরির খরচ অনেকটা বেশি পড়ে যায়। কারণ যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ক বা ডিউটি স্ট্রাকচার ম্যানুফেকচারারদের জন্য মোটেও অনুকূলে ছিল না। তাই বিষয়টি পিএইচপি গ্রুপের পক্ষ থেকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, আমাদের সম্মানিত সরকার তা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তার ফলোস্রুতিতে পিএইচপি অটোমোবাইলস তাদের আগের উৎপাদিত ১,৩৩২ সিসির ১৮,৫০,০০০ টাকার লাক্সারী কার বর্তমানে ১৪,৯৯,০০০ টাকায় বিক্রি করছে। যা আগামীতে প্রতিষ্ঠানটির গাড়ি বিক্রি প্রত্যাশাতীত বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পিএইচপি অটোমোবাইলস বেশ কিছু নতুন এবং ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের গাড়ি যদি কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে কিম্বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠনটি সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে তার গাড়ি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি বিকল্প গাড়ি ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করে যাবে। পাশাপাশি নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে মেন্টেইনেন্সের জন্য ৫টি ফ্রি সার্ভিসিং দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সারা দেশ জুড়ে। প্রথমত, গাড়ি কেনার পর থেকে ৩৫,০০০ কিলোমিটার মাইলেজের মধ্যে সার্ভিসিংয়ের ক্ষেত্রে যত ধরনের উপাদান যেমন-(ওয়াস, লূব অয়েল, ফিল্টার, গিয়ার অয়েল) সব কিছুই ফ্রিতে দিয়ে যাবে পিএইচপি অটোমোবাইলস।
এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, আমাদের দেশের উচ্চবৃত্ত এবং মধ্যবৃত্ত মানুষের রুচির ব্যাপক পরিবর্তন আসায় দেশের মানুষ এখন ধীরে ধীরে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির দিকে ঝুঁকছে এবং দেশের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে ব্যান্ড নিউ গাড়ির বিক্রি এখন অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। কারণ মানুষ গাড়ি কেনার পর অন্তত ৫ বছর নিশ্চিন্তে থাকতে চায়। তাই পরিবর্তীত চাহিদার ভিত্তিতে একেবারে ব্রাণ্ড নিউ গাড়ি দেশের মানুষের কাছে উপহার দিয়ে এই সুন্দর সুযোগটিকে নিজ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায় পিএইচপি গ্রুপ।
পিএইচপি প্টোমোবাইলস বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিক্রয় পরবর্তী ক্রেতাদের সেবা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামে তিনটি সার্ভিস সেন্টার এবং ঢাকার কাকরাইল ও তেজগাঁ রিং রোডে দুটি শোরুম এবং সার্ভিস সেন্টার চালু করেছে। বারিধারায় নতুন করে একটি সার্ভিসিং সেন্টার করা হচ্ছে। চলতি মাস থেকে এখানে পুরোদমে সার্ভিস দেওয়া শুরু করবে পিএইচপি অটোমোবাইলস। তাছাড়া ঢাকা একটি বড় শহর হওয়ায় পিএইচপি অটোমোবাইলস রহিম আফরোজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি সার্ভিসিং ফ্যাসালিটি সেন্টারে গ্রাহকদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিএইচপি অটোমোবাইলস এর উৎপাদিত গাড়িগুলো অত্যন্ত আধুনিক হওয়ার কারণে যেকোনো সাধারণ মেকানিক এর বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে না। তাই, কম্পিউটার দিয়ে এই গাড়ির যাবতীয় সমস্যা চিহ্নিত করতে হয়- কোথায় কী সমস্যা হয়েছে? অন্যদিকে, অনকলেও আপদকালীন সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিএইচপি অটোমোবাইলস এর একটি প্রটোন সাগা গাড়ি তৈরিতে ৮,৩৩২টি আইটেম স্পেয়ার পার্টস ও যন্ত্রাংশ লাগে। আবার প্রতিষ্ঠানটি এক শিফ্টে ১২টি গাড়ি তৈরি করে। সে হিসেবে দৈনিক তিন শিফটে মোট ৩৬টি গাড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। এ মুহুর্তে তাদের এসম্বলী প্লান্টে ১,৩৩২ সিসির প্রটোন সাগা, ১,৫৯৭ সিসির প্রটোন পারসোনা এবং ১,৬৬২ সিসির প্রটোন প্রেডি কার (টারবো চার্জারসহ) কার তৈরি করা হচ্ছে। তাছড়া অদূর ভবিষ্যতে প্রিমিয়াম লেভেলের এসইউভি গাড়ি এক্স ৭০ কার বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আবার সিডান কারের পাশাপাশি এখানে মাইক্রোবাসও তৈরি করা হয়ে থাকে। এ গাড়িগুলোর তিন বছরের ওয়ারেন্টি থাকার পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে কিছু হলে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে।
ক্রেতাদের সুবিধার্থে কেউ যদি ডাউন পেমেন্টে গাড়ি কিনতে চান তাহলে সাড়ে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে গাড়ির চাবি তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছে পিএইচপি অটোমোবাইলস। বাকি টাকা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে সমন্বয় করতে পারবেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে তিনটি ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে। গ্রাহক চাইলে নিজের পছন্দের ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রতি বছর গড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি হয় ৩০ হাজারের কাছাকাছি। যার ৯০% পুরোনো এবং রিকণ্ডিশন। আর এসব রিকণ্ডিশন গাড়ি কয়েক বছরের মধ্যে গ্রাহককে বেশ ঝামেলায় ফেলে দেয়। তাছাড়া বিক্রয় পরবর্তী রিপিয়ার মেইন্টেনেন্স কস্ট যথেষ্ঠ ব্যয়বহুল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশের সম্মানিত ক্রেতার ক্ষতিগ্রস্থ হন।
আমাদের দেশে উৎপাদিত গাড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়ে তার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিরও যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া) চুক্তির আওতায় নেপালে বাংলাদেশে তৈরি প্রোটন গাড়ি রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। কারণ সেখানে প্রোটনের ডিলার রয়েছে। তাদেরকে মুম্বাই পোর্ট কিংবা চট্টগ্রাম পোর্ট ব্যবহার করে গাড়ি আমদানি করতে হয়। তাই আমাদের নীতি নির্ধারকরা যদি বিষয়টি বিবেচনা করেন তাহলে এই সুযোগ আমাদের দেশ নিশ্চিতভাবে কাজে লাগাতে পারে।
পাশাপাশি অনেকটা ডিউটি ফ্রী হওয়ায় নেপালও সাফটার সুযোগ নিয়ে স্বল্প মূল্যে গাড়ি আমদানি করতে পারবে আমাদের দেশ থেকে। এতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ অরজিনে তৈরি গাড়ির আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হবে এবং পাশাপাশি আমাদের সম্মানিত সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিলে দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিসহ বিশ্বের বুকে আমাদের দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তিও আরো উজ্জল হবে বলে আশা করা যায়।
সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরো একটি নতুন কন্টিনজেন্ট ‘বাংলাদেশ আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট’ এর ১ম দল গণতান্ত্রিক কঙ্গো…
পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর…
রিয়াদ প্রতিনিধি- ১০জানুয়ারী বুধবার স্হানীয় সময় রাত সাড়ে ১০ঘটিকায় হোটেল ডি-প্যালেসে রিয়াদ মহানগর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন,…
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের…
নির্বাচনের আগে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি সংস্থা, মিডিয়া ও বিভিন্ন দেশের মনোযোগ নেয়ার…
Leave a Comment