২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মানসিকভাবে বড় ধরনের পীড়া দিয়েছিল। হামলার পর কোনোক্রমে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির সুধাসদনে নিজের বাসভবনে পৌঁছান।
হতবিহ্বল শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, আমার আর এসব ভালো লাগে না। আমার জন্য এত রক্ত, প্রাণ যায় আর সহ্য হয় না।
তোমরা আহতদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। প্রয়োজনে আমাদের দুই বোনের যা কিছু আছে বিক্রি করে চিকিৎসা হবে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সমাবেশ শুরুর আগে আমি যুবলীগের অফিসে বসে ছিলাম। আমির হোসেন আমু ভাই, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দাদা, ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের অফিসে এসে বসলেন। কিছুক্ষণ পর জানলাম নেত্রী রওনা দিয়েছেন। আমাকে ফোন দিয়ে জানালো হলো।
আমি উনাকে রিসিভ করতে বের হলাম। বের হয়েই খেয়াল করলাম অন্য দিনের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর নেই। ঢিলেঢালা ভাব। অন্য সময়ে আমরা নেত্রীকে নূর হোসেন চত্বর বা পীর ইয়ামেনী মার্কেটের সামনে থেকে রিসিভ করতাম। কিন্তু সেদিন নেত্রীকে রিসিভ করতে শিক্ষা ভবনের দিকে এগিয়ে গেলাম।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।
নানক বলেন, সমাবেশের শেষে হঠাৎই ধ্রুম ধ্রুম আওয়াজ। এরপর গুলির শব্দ। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। কী করব বুঝে উঠে পারছিলাম না। হঠাৎ দেখলাম নেত্রীর সহকারী আলাউদ্দিন নাসিম। চিৎকার করে তার কাছে জানতে চাইলাম- নেত্রীর কী অবস্থা? নেত্রীর কী অবস্থা? নাসিম বললেন, নেত্রী চলে গেছেন।
চারিদিকে যখন আহত নেতাকর্মীদের উদ্ধার কাজ চলছে সে সময়ে পুলিশ এসে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে থাকল। এতে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হলো।
নানক বলেন, রেনেড হামলার কিছু সময় পরে আমি ধানমণ্ডিতে সুধাসদনে নেত্রীর বাসায় যাই। গিয়ে দেখি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা সোফায় বসে আছেন। শেখ রেহানা সোফার হাতলে বসে নেত্রীর গলা ধরে আছেন। নেত্রী নির্বাক, হতবিহ্বল। আমরা তাঁকে বললাম, নেত্রী, আমরা কর্মসূচী দিতে চাই। সারা দেশ আমরা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেব। কিন্তু উনি বললেন, আমি মানুষের রাজনীতি করি। আগে মানুষ বাঁচাও।
মানুষ বাঁচলে পরে রাজনীতি করা যাবে। এখন প্রথম কাজ মানুষের চিকিৎসা করা। টিম ভাগ করে আহতদের চিকিৎসা করো। এ সময়ে একটি ফোন কল এলো। রেহানা আপা এসে নেত্রীকে বললেন- আপা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কল দিয়েছে। নেত্রী কিছুক্ষণ কথা বলে আবার নিচে নেমে এলেন।
দুঃখের বিষয় হলো সরকারি হাসপাতালগুলোতে অপারেশন থিয়েটারে তালা লাগিয়ে ড্যাবের ডাক্তাররা চাবি নিয়ে সরে যায়। আমি বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ। সেদিন তারাই আমাদের নেতাকর্মীদের চিকিৎসা দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় ছুটোছুটি করে সারারাত কেটে গেল। পরদিন ভোরে নেত্রী নির্দেশ দিলেন তোমরা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যাও।
সেখানে কী পরিস্থিতি দেখো। আমি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের কাছাকাছি পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ভাইও পৌঁছাল। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাধা দিল। বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে পুলিশের উদ্দেশে কড়া কথা বললাম। তখন আমাদের অফিসের দিকে যেতে দিল।
অফিসের কাছে পৌঁছে দেখি কোথাও আঙ্গুল, কোথাও নখ, কোথাও রক্ত আর অসংখ্য স্যান্ডেল পড়ে আছে। আমরা ব্যানার ছিড়ে এসব ঘেরাও করে আলামত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলাম।
রাতের বেলায় সিটি করপোরেশন থেকে পানির ট্রাক নিয়ে এসে হোস পাইপ দিয়ে ক্রাইম সিন ধুয়ে ফেলা হলো।