গত ১৬৬ বছর ধরে গৃহস্থালিতে আলোর উত্স হিসেবে চলে আসা কেরোসিন যুগের সমাপ্তি ঘটছে। ফুরিয়ে আসছে কেরোসিনের কদর। এমনকি এই দাহ্য হাইড্রোকার্বন গোত্রের তরল জ্বালানি তেলের অন্যান্য ব্যবহারও দিন দিন কমছে। কেরোসিনের কুপি, হ্যাজাক, মশাল, হারিকেনের ব্যবহার আর চোখে পড়ে না। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন বৈদ্যুতিক এবং সোলার বাতির আলোর ঝলকানি।।এককালে কেরোসিন শিখাই ছিল ঘরে ঘরে আলোর একমাত্র উত্স। কেরোসিনের দর্প-অহমিকা নিয়ে কবিতাও লেখা হয়েছে: ‘কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে—ভাই বলে ডাকো যদি দেবো গলা টিপে’।
সময়ের সাথে আলো জ্বালানোর বিবিধ উেসর বিবর্তনে ম্রীয়মান হতে হতে এখন কেরোসিনের সেই দর্পচূর্ণ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, পরিবারে আলোর উৎস হিসেবে কেরোসিনের ব্যবহার বলতে গেলে বিলীন হতে চলেছে। দেশের প্রায় ৯৪ শতাংশ পরিবার এখন বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করছে।২০১৫ সালে দেশের মোট পরিবারের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার আলোর উত্স হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করত।
তাছাড়া ২০১৬ সালের জরিপে সেটি কমে দাঁড়ায় ১৩ শতাংশে। ২০১৭ সালে কমে হয় ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে আরো কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জরিপে কেরোসিনের ব্যবহার কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশে ঠেকেছে। বর্তমানে দেশের সাড়ে ৬ শতাংশ পরিবার বিদ্যুত্ সুবিধার বাইরে রয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশের ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারে আলোর উত্স হিসেবে বিদ্যুত ব্যবহার করছে।
অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিদ্যুত্ সুবিধা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে-কানাচে। যেখানে গ্রিড স্থাপন সম্ভব নয় সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুত্ দিচ্ছে সরকার। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, দেশে বিদ্যুত ব্যবহার করতো ৯০ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার। ২০১৭ সালের জরিপে এই হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপে সেটি ছিল ৮১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে পরিবারের আলোর উত্স হিসেবে বিদ্যুত্ ব্যবহার করত ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার। আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের ক্ষমতার অন্যতম বড় সাফল্য এই বিদ্যুত ক্ষেত্রে।
যদিও গ্রাম ও শহরে এখনো বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা যায়। কিন্তু মানুষ আইপিএস সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুত ব্যবহার নিশ্চিত করছে।