করোনার কারণে দীর্ঘ এক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ চালুর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার, তবে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে ফের সংশয়ে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একেবারে শেষ সময়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে কর্তৃপক্ষ।
করোনার নমুনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্ত মন্ত্রণালয় সভা শেষে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন নমুনা শনাক্তের হার ছিল ৩.৩ শতাংশ।
তবে কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। গতকাল সোমবার এই হার ছিল ৯.৪৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের দিনগুলোতে করোনা শনাক্তের হার আরো বাড়তে পারে। এতে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে সংশয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
গতকাল সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।
এটাকে (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত) রিভিউ করতে হতে পারে। সংক্রমণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই তারা হয়তো এটাকে রিভিউ করবে। আর যদি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে হয়তো তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
শুক্রবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ৩০ মার্চ খোলার কথা, আর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ২৪ মে এবং হলগুলো ১৭ মে থেকে খোলার কথা রয়েছে।
গত এক বছরে যে পর্যবেক্ষণ করেছি, আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কাজেই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রবিবার কক্সবাজারে স্কুল খোলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
আগামী ৩০ মার্চের আগেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীকে টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে। পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের আসন বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারির আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় আলোচনা হয়েছিল ৩০ মার্চের আগে আরেকটি সভা হবে। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করা হবে।
যদি কোনো ধরনের ঝুঁকি মনে হয়, তাহলে আন্ত মন্ত্রণালয় সভা থেকে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন সংক্রমণের হার যেহেতু বাড়ছে তাই ৩০ মার্চের আগে পর্যালোচনাসভা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যদি করোনা সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে স্কুল-কলেজ খোলার সম্ভাবনা কম। কারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না সরকার।
আর যদি করোনা সংক্রমণের হার খুব বেশি না বাড়ে তাহলে শুধু এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে।
আবার সামনে রোজা শুরু হবে, এরপর ঈদের ছুটি। করোনা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে সব মিলিয়ে ঈদের পর অর্থাত্ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেই ২৪ মে থেকেও স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তবে ৩০ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
শহরাঞ্চলে বেশির ভাগ অভিভাবককে সন্তানদের নিয়ে গণপরিবহন বা রিকশায় যাতায়াত করতে হয়। এতে করোনার ঝুঁকি আরো বাড়বে। এ ছাড়া সামনে রমজান।
এই সময়ে সাধারণত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। তাই আমরা জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ৩০ মার্চ থেকে সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত ছিল। এটা বলতে গেলে পরীক্ষামূলক।
এখন যেভাবে করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে, তাতে শহর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাবনার বিষয়। তবে করোনার এই অবস্থা কত দিন চলবে, তা আমরা বলতে পারছি না।
এ জন্য অঞ্চলভিত্তিক সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে স্কুল-কলেজ খোলা যায় কি না তা চিন্তা করা উচিত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসও করতে পারছে না।
তাই তাদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়েই স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তবে আমরা ৩০ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তকে সামনে রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।