করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন সুস্থ আছেন এবং নতুন করে কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসলেই কিন্তু আক্রান্ত নয়। অনেকেই কিন্তু বাইরে থেকে আসলে ভিন্ন আচরণের শিকার হচ্ছেন। বাড়ির লোকজন প্রতিবেশী তাদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করছেন। এমন আচরণ করলে তাদের বাইরে থাকতে হবে। তাহলে এ রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি আহ্বান জানাবো, আপনারা তাদের সহযোগিতা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে কেউ এলে অবশ্যই বাড়িতে অন্তত দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ সময় ওই ব্যক্তি বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করলে প্রতিবেশীদের স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, তিনি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তিনি যেন বাসাতেই থাকেন।’
এ সময় বিদেশফেরতদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ না করারও অনুরোধ করেন এ চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ৩ জন করোনায় আক্রান্ত- এ খবর দেওয়ার পর আইইডিসিআরের হটলাইনে রবিবার বিকেল থেকে ৫০৯টি কল এসেছে। এর মধ্যে ৪৭৯ কল করোনা সংক্রান্ত। আইইডিসিআরে সরাসরি এসেছেন ১৮ জন। ৪ জনের শরীরের নমুনা নিয়েছি, তারা কেউ আক্রান্ত না।’
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে তরুণ বেশি, তাই ঝুঁকি কম। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বয়স্কদের জন্য এটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং, মসজিদ, মন্দির ও কেবল অপারেটরদের মাধ্যমে গণসচেতনা বাড়াতে হবে। যাদের মাস্ক প্রয়োজন তাদের জন্য মাস্ক নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় পণ্য সরবরাহ করতে বলেছি।’
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যারা উৎসুক জনতা, মিডিয়া কর্মীরা ভিড় করছেন তাদেরকে অনুরোধ করবো এটি না করার জন্য। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রোগীদের দেখতে ভিড় করা ঠিক না। করোনায় আক্রান্তদের নাম, পরিচয়, ছবি ও রোগীকে কীভাবে পরিবহন করা হবে সে প্রস্তুতিও রয়েছে।’
পরিচালক বলেন, ‘সার্ভিস রিলেটেড তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা আরও ৮টি নম্বর চালু করবো বিকেলে।’
এর আগে গতকাল রবিবার (৮ মার্চ) আইইডিসিআর জানায়, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তিনজনের শরীরে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে ২ জন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের দুজন ইতালি থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১০৭টি দেশের মানুষের শরীরে শনাক্ত হয়েছে। এই মারণ ভাইরাসে নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৮২৮ জন। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১১৯ জন। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে ৭০৯ জন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। করোনা ভাইরাস খালি চোখে দেখা যায় না। এটি দেখা যায় ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, ভাইরাসটি শক্তিশালী হলেও এটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।