মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের আত্নত্যাগে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশ। আর এই বাংলাদেশের সৃষ্টির মূল ভিত্তিই ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। আজও বাংলাদেশের মূলনীতি চারটির মাঝে একটি ধর্মনিরপেক্ষতা। তবুও এ দেশেই সংখ্যালঘু নির্যাতন ক্রমে ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
রাজনৈতিক আশ্রয়- প্রশ্রয় পেলে কতটা ভয়াবহ পর্যায়ে যেতে পারে সেটি আমরা বিএনপি- জামাত কিংবা জাতীয় পার্টির আমলে দেখেছি। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় যে আওয়ামীলীগ আমাদের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ও তাদের আত্নত্যাগ ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় সে আওয়ামীলীগের আমলে এই সংখ্যালঘু নির্যাতন কমে নি। তারই প্রমাণ রামু, নাসিরনগর, সাথিয়া, দিনাজপুর, গোবিন্দগঞ্জ এবং সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলি।
করোনা ভাইরাসের অঘোষিত লকডাউনে সবাই যখন উদ্বেগ- উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে এরই মাঝে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তরা এই পরিস্থিতিতেও তাদের হিংস্রতা বিন্দুমাত্র কমে নি বরং এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে।
লকডাউনের সময় ২৭ টি জেলায় ৩৬ টি হামলার ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পরিবারের উপর হামলা, অপহরণ, উপসনালয় ভাংচুর কিংবা বিভিন্ন নির্যাতনের দায়ে মামলা ও মানবাধিকার সংগঠনসমূহের সূত্রে জানা যায়। এতে বিএনপি, জামাত নেতা এমনকি সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগও উঠে আসছে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নঘরঘাটার এক মুদি ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয় এবং কলেমা না পড়লে ভারত পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হয় অথচ এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। এমন ঘটনার মতোই নির্যাতন করা হয়েছে বাগেরহাটের গোলেডাংগা গ্রাম, রাজশাহীর ঘাসি গ্রামের অপমানে নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের গলায় ফাঁস, সাতকানিয়া উপজেলায় ৩০টি সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা, কুড়িগ্রাম জেলায় সাতানী হাইল্লা গ্রামের পরিতোষ সরকারকে ইসলাম নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে মারধর করে পুলিশে হস্তান্তর করা অথচ তিনি এমন কোনও পোস্টই করেননি বলে জানা গেছে অথচ তাকে তৌহিদি জনতার চাপে তাকেই আটক করে পুলিশ।
এই দূর্যোগের ঘনঘটায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ, নির্যাতন, নারী নির্যাতন, উপাসনালয়ের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর হওয়া তা নাহলে একদিন নগরের আগুন দেবালয়েও ছড়াবে সেদিন এ আগুন থেকে কেউই বাঁচতে পারবে না!!