শতাব্দীর ভয়াবহ প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের এক লাখ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি বলেন, এক লাখ কোটি টাকা একসঙ্গে প্রয়োজন হবে না। পরিবহন ব্যয়, বেতন ভাতা, রি-এজেন্ট এসবের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এই টাকা লাগবে।
আজ ৩০ মার্চ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো ‘করোনা ভাইরাস-১৯ সম্ভ্যাব্য অনিশ্চয়তা ও করণীয় কল্পচিত্র’ নামে এক প্রতিবেদনে আবুল বারকাত এক লাখ কোটি টাকা কোত্থেকে আসবে তারও একটি ধারণাপত্র তুলে ধরেছেন।
ধারণা পত্রে তিনি বলেছেন, বৈশ্বিকভাবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ইতিমধ্যে দুই হাজার কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে। ওই তহবিল আক্রান্ত দেশগুলো ব্যবহার করতে পারবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আরো ৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দিচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট ও চ্যারিটি সংস্থা। অর্থাৎ এই মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধে বৈশ্বিক তহবিলে আছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যৌক্তিক কারণেই বৈশ্বিক জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা হওয়া উচিত ওই ৫০ বিলিয়ন ডলারের কমপক্ষে ৩ শতাংশ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাওনা হতে পারে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এ হিস্যা পেতে হলে প্রয়োজন হবে শক্তিশালী কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সামনে থেকে তহবিল থেকে টাকা আনার দায়িত্ব নিতে হবে। বৈশ্বিক তহবিল থেকে ওই অর্থ পাওয়া গেলে ঘাটতি থাকবে ৮৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থ পূরণের উৎস হতে পারে জরুরি অবস্থায় সম্পদশালীদের উপর সম্পদ কর বা ওয়েলথ ট্যাক্স আরোপ। এখান থেকে আসতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া পাচারকৃত অর্থ ও কালো টাকা উদ্ধার থেকে আসতে পারে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
এখানে অর্থনীতিশাস্ত্রের কয়েকটি প্রমাণিত-পরীক্ষিত সত্য কথা উল্লেখ করা জরুরি। সম্পদ কর বৈষম্য কমিয়ে আনে। অর্থ পাচার ও কালো টাকা বৈষম্য বাড়ায়। সম্পদশালীদের উপর কর হার কমালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। সমাজের নীচতলার ৯০ শতাংশ মানুষের উপর কর কমালে তাদের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ে।
তিনি উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এক লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ ফল হবে বহুমুখী ইতিবাচক। স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় মেয়াদেই লাভবান হবে বাংলাদেশ। স্বল্প মেয়াদে আক্রান্ত মানুষ বাঁচবে, সংক্রমণ হার কমবে, সংক্রমণ বিস্তার রোধ হবে, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, মানুষের মানসিক দুশ্চিন্তা এবং উদ্ভুত দুর্দশা কমবে। একইসঙ্গে সহ অসুস্থতা কমবে। কমবে সংশ্লিষ্ট মৃত্যু হার। আর দীর্ঘমেয়াদে লাভ হবে অনেক সুদূরপ্রসারী।