চৌদ্দ বছর আগে খুলনায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় আসামি ইব্রাহিম গাজীর যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, শুধুমাত্র ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি বা আপিলকারী ধর্ষণ করেনি এই অজুহাতে সে খালাস পেতে পারে না।
ভিকটিমের মৌখিক সাক্ষ্য ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ভিত্তিতেই আসামিকে সাজা প্রদান করা যেতে পারে।
বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। খুলনার ইব্রাহিম গাজীর যাবজ্জীবন কারাণ্ডের সাজা বহাল রেখে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ রায় দেন। তবে বুধবার এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ওই রায়ে আদালত ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে উল্লেখিত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল হক হেলাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌস রুপা।
আদালতে আসামিপক্ষের যুক্তি ছিল, আদালতের আদেশ থাকার পরও প্রসিকিউশন ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা করেনি। এছাড়া ভিকটিম যাদের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী করেছিল তাদের কেউ আদালতে সাক্ষী দেয়নি। এ কারণে আসামি খালাস পাবার অধিকারী।
এ প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল ঘটনা ঘটে। আর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেন ওই বছরের ১৭ মে। অর্থাৎ ৩২ দিন পরে। যদি ভিকটিমকে ওইদিনই ডাক্তারি পরীক্ষা করাও হতো, তবুও দীর্ঘদিন পর পরীক্ষা করার কারণে ধর্ষণের কোনো আলামত না পাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
তবে শুধুমাত্র ডাক্তারি পরীক্ষা না করার কারণে প্রসিকিউশন পক্ষের মামলা অপ্রমাণিত বলে গণ্য হবে না।
খুলনার কালিকাবাটি জামে মসজিদে আল কুরআন পড়তে গিয়ে ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সালিশ-বৈঠক হয়। পরে ১৭ এপ্রিল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর ২৩ এপ্রিল আদালতে নালিশী মামলা করেন ভিকটিমের পিতা।
এরপর আদালত ওই বছরের ১৭ মে ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে নির্দেশ দেন। ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরবর্তীতে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচার শেষে গত বছর ১৩ মার্চ এক রায়ে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুইবছরের কারাদণ্ড দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ইব্রাহিম কাজী। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট তার আপিল খারিজ করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি আজ প্রকাশিত হয়েছে।