বিভাগ জাতীয়

ছোট্ট শিশুটি আমাদের সবার চোখের মনি ছিল: প্রধানমন্ত্রী

সাম্প্রতিক সংবাদ
মুনতাহা মিহীর
Sponsored

রাসেলের জন্মের ক্ষণটা যখন এলো, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ছিল। ছোট্ট শিশুটি আমাদের সবার চোখের মনি ছিল।

কিন্তু একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে গেল, রাসেল আর ফুঁটতে পারেনি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে চিরবিদায় নিতে হয়।

শিশু শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলেন বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রাসেলের জন্মের সময়কার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাসেল যেদিন জন্ম নিয়েছে, সে দিনের কথাটা এখনো আমার মনে পড়ে।

একটা ছোট্ট শিশু আসবে, আমাদের পরিবারে, আমি কামাল-জামাল, রেহানা- আমরা সবাই খুব উৎসাহিত এবং বেশ উত্তেজিত ছিলাম, কখন সেই শিশুটির কান্না আমরা শুনবো, কখন তার আওয়াজটা পাবো, কখন তাকে কোলে তুলে নেবো।

আর সেই ক্ষণটা যখন এলো, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সময় ছিল। ছোট্ট শিশুটি আমাদের সবার চোখের মনি ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ রাসেলের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালে রাসেলের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তার জীবনটা শেষ হয়ে যায়, একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়, রাসেল আর ফুটতে পারেনি।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে চিরবিদায় নিতে হয়।

শৈশবে বাবাকে কাছে না পাওয়ায় ছোট্ট শিশু রাসেলের বেদনার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কি দুর্ভাগ্য তার, ৬৪ সালের অক্টোবরের ১৮ তারিখ তার জন্ম। এরপর ৬৬ সালে আবার বাবা যখন ৬ দফা দাবি দিলেন- তিনি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ৬৬ সালের মে মাসে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বন্দি হয়ে গেলেন। ছোট্ট রাসেল কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা কারাগারে। যখন সে একটু বড় হলো, তখন কারাগার থেকে বাবাকে কীভাবে নিয়ে আসবে, সে জন্য বাড়ি চল, বাড়ি চল বলে কান্নাকাটি করতো।

শেখ হাসিনা বলেন, ৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন আমার বাবা মুক্তি পান, তখন যে জিনিসটা সব সময় দেখতাম, রাসেল সর্বক্ষণ- মনে হয় যেন ওর ভেতরে একটা ভয় ছিল যে কোনো মুহূর্তে বুঝি বাবাকে হারাবে, তাই বাবা যেখানেই যেতেন, যে কাজই করতেন, খেলার ছলে কিছুক্ষণ পর পরই একবার করে সে দেখে আসতো যে বাবা ঠিক আছেন তো। বাবা মিটিংয়ে থাক বা যেখানেই থাক, সে ছুটে ছুটে যেত। 

রাসেলের নীরব কান্নার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তর সাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে। ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো।

তারপর থেকে তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, আমরা জানি না। বেঁচে আছেন কিনা সেটা জানাও আমাদের সম্ভব ছিল না। ১৯৭১ সালে শুধু জাতির পিতাকে বন্দি করা হয়নি, আমার মাকেও বন্দি করা হলো। রাসেলও তখন বন্দি।

আমার ভাই কামাল মুক্তিযুদ্ধে চলে যাচ্ছে, এক সময় জামালও গেরিলা কায়দায় বন্দিখানা থেকে চলে গেল মুক্তিযুদ্ধে। রাসেলের চোখে সব সময় পানি। ওইটুকু একটা ছোট্ট শিশু, সে তার কষ্টটা কাউকে বুঝতে দিত না। যদি জিজ্ঞেস করতাম, কি হয়েছে? বলতো, চোখে কিছু একটা পড়ে গেছে। তার যে নীরব কান্না তা সে কখনো প্রকাশ করতো না।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, সবাইকে শার্ট কিনে দিতো, প্যান্ট কিনে দিতো। মা সব সময় কিছু কাপড় টুঙ্গিপাড়ায় রেখে দিতেন আলমিরাতে। ১৯৭৫ এর পর আমি যখন দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম।

আমি আসতে পারিনি এ দেশে, ১৯৮১ সালে যখন আমি এলাম, যখন আমি টুঙ্গিপাড়া গেলাম, সেই আলমিরা খুলে দেখি অনেকগুলো কাপড়, বিশেষ করে শার্ট সেখানে রাখা ছিল। রাসেল যতবার টুঙ্গিপাড়া যেত, সে ততবার শিশুদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করতো। তার মনটা ছিল অনেক উদার। তাদের জন্য খাবারও দিত।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে শেখ রাসেলের ওপর নির্মিত এনিমেটেড ডকুমেন্টরি ‘বুবুর দেশ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

এছাড়া তিনি শেখ রাসেলের জীবনীগ্রন্থ শেখ রাসেল আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসা’র মোড়ক উন্মোচন ও ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন; ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শেখ রাসেলের ‘ম্যুরাল’ উন্মোচন ও ‘শহীদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন করেন।

এছাড়া তিনি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রম সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র অবলোকন, স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি এবং দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ ও পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

এছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান রকিবুর রহমান, সংগঠনটির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

Sponsored
Leave a Comment

সর্বশেষ

রাওয়ালপিন্ডিতে বৈঠক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা

ঢাকা, ২৪ আগস্ট ২০২৫: পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফাইজুর…

August 24, 2025

বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া সভাপতি ফারুকের প্রায় ১২০ কোটি টাকা ট্রান্সফার!

বিসিবির ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বিশাল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে! ক্রিকেট বোর্ডের…

April 24, 2025

২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

"২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ষ্ঠ ব্যাটালিয়নের মেজর কমলদীপ সিং সান্ধু সেদিন "স্পিয়ারহেড"…

February 26, 2025

কি ঘটেছিলো বিডিআর বিদ্রোহে! নেপথ্য কাহিনি

আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের…

December 29, 2024

পিটিয়ে হত্যা: ভিডিওতে শনাক্ত ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে হত্যার ভিডিও ফুটেজে ছাত্রদলের পাঁচ নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। ভিডিওতে…

September 21, 2024

২০২৩ এর সফল ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাইমন সাদিক

সাইমন সাদিক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এবং বাইরে সফলতার সাথে…

March 4, 2024
Sponsored