জীববৈচিত্র্যের অমূল্য আধার সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে উল্লেখ করে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন তথা সার্বিকভাবে প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা, বিশেষ করে পরিবেশ আইনসমূহের কার্যকর প্রয়োগের আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এবারের এই আন্তর্জাতিক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘জীববৈচিত্র্য’- এর প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজ প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এই আহবান জানায়।
এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স (ইপিআই)-২০১৮ অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯তম হওয়ার কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনী কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগে ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্য যেমন লোপ পাচ্ছে তেমনি পরিবেশ দূষণ আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী ব্যবসায়ি-বিনিয়োগকারীদের প্রভাব-নির্ভর সিদ্ধান্ত, দুর্বল তদারকি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে; বন ও জলাশয় দখল বেড়েছে; প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্রামাগত চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে; এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪,১৬,২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে যার মধ্যে ১,৫৮,০৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং ২,৬৮,২৫৬ একর বনভূমি জবরদখলের শিকার হয়েছে। ক্রমবর্ধমান এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে বন্যপ্রানীর ৩৯ টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০ টি প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে- যা বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য অশনিসংকেত। ড. জামান বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শ ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সন্নিকটে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্যতম নিয়ামক এ প্রাকৃতিক রক্ষাকবচকে স্থায়ীভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। অথচ সুন্দরবন যেমন সমৃদ্ধ জীবজগতকে ধারণ করে প্রাণ ও প্রকৃতির রসদ যোগাচ্ছে তেমনি সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ফনী সহ সর্বশেষ আম্পানের তান্ডব হতে উপকূলের অজস্র মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা প্রদান করেছে।’
আমাদের একটাই সুন্দরবন, এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা- বিশেষ করে সুন্দরবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনসহ অন্যান্য পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও নির্মানাধীনসহ সকল শিল্প ও কারখানা বন্ধ করে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা প্রদানকারী বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’