রেলের পরিস্থিতি এবার ভিন্ন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি ফেরা নিয়ে সবাই চিন্তিত। এ কারণে বাস কাউন্টারে টিকিট পেতে তোড়জোড় নেই, ভিড়ও নেই।
অধিকতর নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসময়ে ট্রেন চলাচল করায় এবার চিত্র ভিন্ন। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতে ট্রেনে ভরসা থাকলেও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনায় রেলবিমুখ ছিল মানুষ। ট্রেনের টিকিট কাটা, টিকিট নিয়ে কালোবাজারি, ট্রেনে সহজে উঠতে না পারা, অপরিষ্কার প্ল্যাটফর্ম এবং হকারদের উৎপাতে অতিষ্ঠ ছিল যাত্রীরা। বাড়তি ভিড়ের কারণে অনেকে টিকিট কাটার পরও নিজ আসনে বসতে পারেনি। আর বিনা টিকিট বা স্ট্যান্ডিং টিকিটে যাত্রীরা গাদাগাদি করে ট্রেনে ওঠায় সেবাবঞ্চিত হয়েছে মানুষ।
রীতিমতো পাল্টে গেছে ট্রেনসেবা। টিকিট কেটে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরছে। রেল কর্তৃপক্ষ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এমন স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
রেলের আগের সেই অবস্থা এখন আর নেই। ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি, বিনা টিকিটে ভ্রমণ পুরোপুরি বন্ধ। টিকিট ছাড়া একজন যাত্রীও এখন আর ভ্রমণ করতে পারছে না। টিকিট ছাড়া কেউ স্টেশনেও প্রবেশ করতে পারছে না। উন্নত হয়েছে ট্রেনসেবাও। হুড়াহুড়ি আর ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধ করতে বিমানবন্দর, জয়দেবপুর ও নরসিংদী স্টেশনে নেওয়া হয়েছে কঠোর নজরদারি। শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে, কোনো ট্রেনকে যেন আর দাঁড়িয়ে থাকতে না হয় সে জন্য সিঙ্গল লাইন ডুয়াল করা হচ্ছে।
ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও স্টেশনে মানুষের আনাগোনা নিতান্তই কম। স্টেশনে প্রবেশের আগে যাত্রীর টিকিট চেক করা হচ্ছে। কারো কাছে টিকিট না থাকলে ফেরত পাঠাচ্ছেন দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাউকে উচ্চবাচ্য করতে দেখা গেলেও বিনা টিকিটের যাত্রীরা বাধ্য হচ্ছে ফিরে যেতে। স্টেশনে প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানার পার হয়ে হাতে মাখতে হচ্ছে স্যানিটাইজার।
একটি করে সিট ফাঁকা রাখা হয়েছে। ট্রেনে উঠতে নেই হুড়াহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি। বগিতে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীও দেখা যায়নি। যাত্রীরা স্টেশনে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে উঠছে ট্রেনে। প্ল্যাটফর্মে হকার কিংবা ভাসমান মানুষের আনাগোনাও নেই। ঈদের সময় কানায় কানায় পূর্ণ থাকা কমলাপুর রেলস্টেশন অনেকটাই ফাঁকা। একটু পর পর ট্রেন আসছে। সেই ট্রেন আবার যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।
ঈদ ঘিরে টিকিট নিয়ে সক্রিয় থাকত কালোবাজারি চক্র। ওই চক্র কাউন্টারের সামনে নিজেদের লোকজন দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করত। পরে সেই টিকিট যাত্রীর কাছে দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করত, কিন্তু এবার টিকিট নিয়ে কালোবাজারির সুযোগ নেই। ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপসে বিক্রি হচ্ছে। টিকিটের জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় একসঙ্গে অনেক মানুষ অনলাইনে টিকিটের জন্য চেষ্টা করায় কালোবাজারি চক্র সুবিধা করতে পারছে না বলে জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কালোবাজারি ঠেকাতে রেলের টিকিটে স্বচ্ছতা আরো বাড়ানো হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকিট কাটা যাবে না। আবার যাঁর নামে টিকিট কাটা হবে তাঁকেও ভ্রমণ করতে হবে। সেটা টিকিট চেকারের হাতে থাকা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনবোর্ডে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
অন্য যেকোনো সেবার চেয়ে ট্রেন যাত্রায় সেবার মান অনেক ভালো। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে ট্রেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন আর সেই পুরনো চিত্র নেই। নিরাপত্তা বা সেফটি বিবেচনায় রেল অন্য সব পরিবহনের চেয়ে ওপরে। আর এ কারণে ট্রেনের প্রতি জনগণের আস্থা বেশি।
করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে অল্পসংখ্যক ট্রেন চলছে। সামাজিক দূরত্ব মানতে অর্ধেক সিটে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ যেন না ছড়ায় সে জন্য সরকার মানুষকে ঢাকা ত্যাগ না করতে জোর দিচ্ছে। তবু ট্রেনের টিকিট পেতে চাপ অনেক বেশি। তবে যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে গাদাগাদি বা ধাক্কাধাক্কি নেই। টিকিট থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা শক্ত হয়েছে।
করোনার কারণে রেলের ব্যবস্থাপনার চিত্র পাল্টে গেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীরা ভ্রমণ করছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। শতভাগ সম্ভব না হলেও যাত্রী পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। নিরাপদ বাহনের কারণে ট্রেনে মানুষের ভরসা একটু বেশি। এখন যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে করোনায় যেভাবে ট্রেন চলছে, করোনা-পরবর্তী সময়েও সেভাবে ট্রেন চালানো সম্ভব। সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ট্রেনের বগি বাড়ানো, ট্রেন বাড়ানো ও সিঙ্গল লেন ডাবল করার কাজ চলছে। তবে সে ক্ষেত্রে বাড়তি লোকবল প্রয়োজন। কারণ এখন যেভাবে ট্রেন চলছে, স্বাভাবিক সময়ে সেভাবে চালাতে গেলে যাত্রীর চাপ বাড়বে। আর সেটা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাড়তি লোকবল প্রয়োজন হবে।