অবশেষে জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের আদলেই ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সমীক্ষার কাজ পরিচালিত হবে। সে অনুযায়ী ভৌত ও পরিকল্পনাগত কিছু কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। অল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে চায় সরকার। এ জন্য জাপান আন্তর্জাতিক
কো-অপারেশন সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অসহনীয় যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকার চারদিকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দও রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে ভবিষ্যতে ব্যয় বাড়তে পারে। এ জন্য বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী পেলে সরকার তা সানন্দে গ্রহণ করবে। এ জন্য উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্য আরও কয়েকটি সংস্থা ও দেশকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সরকারি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সাড়া না পেলে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটির কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে সরকার। জানা গেছে, এ প্রকল্পের সম্ভাব্য সমীক্ষা প্রস্তাব গত ২৭ ডিসেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে।
বৃত্তাকার এ রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অনেক আগের। এমনকি প্রথমে এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল মে ২০১৫ থেকে জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত। এখন তা ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবনা ও সম্ভাব্যতা অনুযায়ী বৃত্তাকার এ রেলপথের স্টেশন থাকবে ২০টি। এর মধ্যে টঙ্গী থেকে শুরু হয়ে তুরাগ, আদাবর, আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জ, তারাব, হাজারীবাগ, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জ, চৌধুরীবাড়ী, চাষাঢ়া, ফতুল্লা, শ্যামপুর, সদরঘাট, বাবুবাজার, নবাবগঞ্জ, শঙ্কর, গাবতলী, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বিরুলিয়া, উত্তরা ইস্টার্ন বাইপাস রোড, পূর্বাঞ্চল হয়ে পুনরায় টঙ্গীতে সংযুক্ত হবে। বৃত্তাকার এ রেল নেটওয়ার্ক হবে উচ্চতর বিদ্যুৎ এবং ডবল লাইন স্ট্যান্ডার্ড গেজ সম্পন্ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেনগুলো উভয়পাশে ক্রমাগতভাবে চলবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীরা খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুবিধার্থে জাপানের টোকিও নগরীর রেল ব্যবস্থাকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। জাপান রেলওয়ে ব্যুরোর দেওয়া
তথ্যানুসারে টোকিওর ৬০ শতাংশ যাত্রী ট্রেনে চলাচল করেন। আর ঢাকায় তার চিত্র পুরো উল্টো। ঢাকার ভিতরেই রয়েছে বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন। এ জন্য মেট্রোরেল ও চক্রাকার বা বৃত্তাকার রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ঢাকার পরিবহন চিত্র পাল্টাতে চায় সরকার।